তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তিনটি জনসভা করলেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গে এ বার পুজোর মরসুম আসন্ন। গত শুক্রবার দমদমের জনসভায় নরেন্দ্র মোদী নিজেও ভাষণের শুরুতেই বললেন, ‘‘দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ বোঝালেন কলকাতা তথা বাংলার এই আবহের সঙ্গে তিনিও একাত্ম। পুজো না মেটা পর্যন্ত বিজেপি বাংলায় বড় কর্মসূচি মুলতুবি রাখবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, দেবীপক্ষ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত রাজনৈতিক সক্রিয়তা বিন্দুমাত্র শিথিল করার পরিকল্পনা নেই। বরং মহালয়ার আগে-পরে ‘ডবল ইঞ্জিন আক্রমণে’র পরিকল্পনা সামনে রেখে প্রস্তুতি নেওয়া চলছে।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ১০টি সাংগঠনিক বিভাগ রয়েছে। এক একটি বিভাগে সর্বোচ্চ পাঁচটি এবং সর্বনিম্ন তিনটি করে লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এবং রাজ্য নেতৃত্বের যৌথ সিদ্ধান্ত, ২০২৫ সাল শেষ হওয়ার আগেই প্রত্যেক বিভাগে প্রধানমন্ত্রী মোদীর একটি করে জনসভা হবে। শিলিগুড়ি বিভাগের আলিপুরদুয়ারে, বর্ধমান বিভাগের দুর্গাপুরে এবং কলকাতা বিভাগের দমদমে সেই জনসভা হয়ে গেল। বাকি এখনও সাতটি বিভাগে সাতটি জনসভা। সেগুলির মধ্যে একটি পুজোর আগেই সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। বাকি ছ’টি হবে পুজোর পরে। তার জন্য পুজোর পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে দু’বার করে বাংলায় আসতে পারেন মোদী।
পশ্চিমবঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর পরবর্তী জনসভা নবদ্বীপ বিভাগে হতে চলেছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। কোনও জরুরি কারণে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি যদি বদলে না যায়, তা হলে ২০ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গে সেই জনসভা হতে চলেছে। বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোয় নবদ্বীপ বিভাগের অধীনে পাঁচটি লোকসভা কেন্দ্র পড়ে। রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, বহরমপুর, জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদ। তার মধ্যে একমাত্র রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রই বিজেপির দখলে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি সেই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই কোথাও আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে স্থান এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
আরও পড়ুন:
রানাঘাট লোকসভা এলাকায় যে দিন মোদীর জনসভা হবে, তার পরের দিন অর্থাৎ ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষ দিন। তার পরেই দেবীপক্ষ শুরু হয়ে যাচ্ছে। দেবীপক্ষের প্রথম দিনে, অর্থাৎ ২২ সেপ্টেম্বর আবার কলকাতায় আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সে দিন মহানগরে দু’টি পুজোর উদ্বোধন করবেন তিনি। কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ যে পুজোর উদ্যোক্তা, প্রথমে সেই সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের (লেবুতলা পার্ক) পুজোর উদ্বোধন করবেন শাহ। তার পরে যাবেন বিধাননগরের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজ়েডসিসি) ‘পশ্চিমবঙ্গ সংস্কৃতি মঞ্চ’ আয়োজিত পুজোর উদ্বোধন করতে। বকলমে বিজেপি-ই এই পুজোর উদ্যোক্তা। রাজ্য বিজেপির সাংস্কৃতিক শাখার প্রধান রুদ্রনীল ঘোষ গোটা আয়োজনের দায়িত্বে। ২০২০ সালে ইজ়েডসিসির এই পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। অবশ্য কলকাতায় এসে নয়। দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। এ বার শাহ কলকাতায় এসেই সে পুজোর উদ্বোধন করবেন।
রাজ্য বিজেপির অনেকে বলছেন ‘পুজোর মুখে ডবল ইঞ্জিন আক্রমণ’। কারণ মহালয়ার আগের দিন আসছেন মোদী, পরের দিন শাহ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আক্রমণে পিছিয়ে থাকবে না তৃণমূলও। এমনিতেই মোদী বা শাহের যে কোনও বঙ্গ সফরের আগে থেকেই বিজেপি বিরোধিতার সুর চড়িয়ে তৃণমূল দাবি তোলে, মোদী বা শাহ যখন আসছেন, তখন ‘বাংলার প্রাপ্য’ যেন সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। সম্প্রতি মোদীর জনসভাগুলি শেষ হওয়ার পরেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে পাল্টা তোপ দাগাকেও প্রায় নিয়মে পরিণত করেছে তৃণমূল। মোদী আবার সম্প্রতি প্রতিটি বঙ্গ সফরের আগের সন্ধ্যায় সমাজমাধ্যমে পোস্ট করছেন। বাংলায় আসার জন্য তিনি কতটা ‘উদ্গ্রীব’, তা তো লিখছেনই। তৃণমূলকে আক্রমণ করাও শুরু করছেন সেই পোস্ট থেকেই। গত শুক্রবার দমদমের সভার আগেও তাই করেছেন। সভা সেরে দিল্লি ফিরে গিয়েও পশ্চিমবঙ্গের কর্মসূচি নিয়ে তিনি পোস্ট করেছেন। শনিবার ফের বঙ্গ সফরের নানা মুহূর্তের ছবি সমাজমাধ্যমে তুলে ধরে তৃণমূলকে নিশানা করেছেন। এই আক্রমণ-প্রতিআক্রমণের জেরে দিন তিনেক ধরে বাগ্যুদ্ধ ছিল চরমে। ফলে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর এবং ২২ সেপ্টেম্বর মোদী-শাহের উপর্যুপরি বঙ্গসফর দেবীপক্ষের প্রথম দিন পর্যন্ত রাজনৈতিক উত্তাপের পারদ তুঙ্গে রাখবে বলে অনেকে মনে করছেন।