Advertisement
E-Paper

সামাজিক বয়কটের নালিশ ইলামবাজারে

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়েকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে পরিবার অভিযোগ করেছিল। থানা থেকে সেই অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় ওই নাবালিকার বাবাকে মারধর করার দাবিও উঠেছিল। ইলামবাজারের বিজেপি সমর্থক ওই পরিবারকে এ বার সামাজিক ভাবে বয়কট করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বুধবার এই মর্মে লিখিত অভিযোগ করে বিডিও-র দ্বারস্থ হয়েছেন নির্যাতিতার মা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৫ ০০:০৭
বিডিও-র ঘরের সামনে নির্যাতিতার মা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৈধুরী

বিডিও-র ঘরের সামনে নির্যাতিতার মা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৈধুরী

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়েকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে পরিবার অভিযোগ করেছিল। থানা থেকে সেই অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় ওই নাবালিকার বাবাকে মারধর করার দাবিও উঠেছিল। ইলামবাজারের বিজেপি সমর্থক ওই পরিবারকে এ বার সামাজিক ভাবে বয়কট করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বুধবার এই মর্মে লিখিত অভিযোগ করে বিডিও-র দ্বারস্থ হয়েছেন নির্যাতিতার মা। ইলামবাজারের বিডিও উৎপল পাতসার আশ্বাস, “ঘটনার সরেজমিনে তদন্ত করে আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” শাসকদল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইলামবাজার থানার শীর্ষা পঞ্চায়েতের একটি গ্রামের মুসলিম পরিবারের ওই বধূর দাবি, “গত মার্চে মেয়ের উপরে অত্যাচার হওয়ার পরে আমরা থানায় অভিযোগ জানাই। তার পর থেকেই আমার পরিবারকে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে তৃণমূলের লোকেরা। অভিযোগ না তোলায় গত ১৮ মে ওরা স্বামীকে বেধড়ক মারধর করে। আমার গুরুতর জখম স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওরা গ্রামের গাড়িও দিতে দেয়নি। এ বার গ্রামে সামাজিক ভাবে বয়কট করার চেষ্টাও ওরা শুরু করেছে।” তিনি আরও জানান, বাড়ির সামনে থাকা একমাত্র নলকূপটি দিন পনেরো আগে অভিযুক্ত শেখ আরফান, শেখ মহম্মদ এবং তাদের শাগরেদরা অকেজো করে দেয়। নলকূপ সারানোর জন্য তিনি বারবার পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে আর্জি জানালেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে ওই মহিলার দাবি। এ দিন বিডি-ওর ঘরের সামনে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘এই গরমে জলের জন্য ওই নলকূপই আমাদের ভরসা। সেটা কেউ সারাতে দিচ্ছে না। নলকূপ সারানোর মিস্ত্রির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তৃণমূলের চাপে তিনিও তা সারাতে আসতে রাজি হননি।’’ মহিলার দাবি, বিজেপি করলে এ ভাবেই সব দিক থেকে সামাজিক বয়কট করা হবে বলে এলাকার তৃণমূল কর্মীরা তাঁদের হুমকি দিচ্ছে। কোনও উপায় না পেয়ে তিনি তাই বিডিও-র দ্বারস্থ হয়েছেন।

পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, শীর্ষা পঞ্চায়েতের ওই গ্রামের সংসদের নির্বাচিত সদস্য মারা গিয়েছেন। তার পর থেকে সংসদটি সরাসরি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান ফরিদা বিবিই দেখছেন। স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। ফরিদার দাবি, “আমার পঞ্চায়েত এলাকায় কাউকে সামাজিক ভাবে বয়কট করা হয়নি। করার চেষ্টাও হয়নি। নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে, এই মর্মেও আমি কোনও অভিযোগ পাইনি।’’ তাঁর বক্তব্য, এলাকায় পরিষেবা দেওয়ার জন্যই মানুষ তাঁদের নির্বাচিত করেছেন। সেখানে কাউকে পরিষেবা না দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সবাইকে সমান চোখে দেখেই কাজ করা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। উল্টে প্রধানের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আসলে রাজনীতির নামে নোংরামি হচ্ছে। দিন কয়েক আগে সার্টিফিকেট নেওয়াকে কেন্দ্র করেও ওই পরিবার পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছিল। যাঁচাই করলে, সেটাও প্রকাশ্যে আসবে।’’ তিনি জানান, এত কিছুর পরেও আজ বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করা হবে। নলকূপ অকেজো থাকলে, অবিলম্বে সারানো হবে।

এ দিকে, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে ক্ষোভ বেড়েছে বিজেপি-র স্থানীয় মহলে। দলের অন্যতম জেলা সম্পাদক তথা ইলামবাজার ব্লক পর্যবেক্ষক চিত্তরঞ্জন সিংহ বলেন, “ঘটনাটি নিন্দার ভাষা নেই। এ যেন সেই মধ্যযুগীয় সমাজ ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বদলে সমাজকে পিছিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল সরকার।’’ তাঁর দাবি, স্রেফ বিজেপি করার অপরাধে ওই পরিবারের উপরে শ্লীলতাহানি, মারধর এবং শেষমেশ সামাজিক ভাবে বয়কটের চেষ্টাও শুরু হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মদতেই এই কাজস চলছে বলে। গোটা ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার নালিশও তিনি এনেছেন। তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “নোংরা রাজনীতি করছে বিজেপি। এমন জঘন্য কাজ তৃণমূলের সংস্কৃতি নয়। সঠিক তদন্ত হলে আসল বিষয় জানা যাবে।”

Molestation Illambazar BJP congeress Trinamoool BDO office Block
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy