তাপস মল্লিক
কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে ক্রমশ কেউটে, গোখরোদের দিকে নজর পড়ছে তদন্তকারীদের।
ডায়মন্ড হারবারের ছাত্র কৌশিক পুরকাইতকে মোষ চুরির অপবাদে পিটিয়ে খুনের তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই ধরা পড়েছে মূল অভিযুক্ত তাপস মল্লিক-সহ কয়েকজন। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মঙ্গলবার কুলতলির মৈপীঠ থেকে যুবরাজ মাঝি ও তার স্ত্রী পঞ্চমীকেও গ্রেফতার করা হয়। এরাও তাপস-ঘনিষ্ঠ বলে সিআইডি সূত্রের খবর।
ডায়মন্ড হারবারের হরিণডাঙা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য তাপসকে জেরা করে সিআইডি অফিসারেরা জানতে পেরেছেন, গত সোমবার কৌশিককে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে তাপস-ঘনিষ্ঠ আরও কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মী আছে।
তোলাবাজি, দাদাগিরিতে নাম কুড়িয়েছিল তাপস। তদন্তে নেমে ক্রমে আরও জানা যাচ্ছে, ডায়মন্ড হারবার মহকুমা আদালতের আইনজীবী, এক তৃণমূল নেতার সঙ্গে তার দহরম মহরমের কথা। যার হাত মাথায় থাকার সুবাদেই তাপসের এ হেন প্রতিপত্তি। ওই আইনজীবী নেতার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা জেরায় স্বীকার করেছে তাপস, দাবি তদন্তকারী অফিসারদের। দু’জনের মোবাইল ফোনের কললিস্ট খতিয়ে দেখেও সেই ‘ঘনিষ্ঠতা’র আঁচ পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
কিন্তু গণপিটুনির তদন্তে নেমে তাপসের সঙ্গে তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠতার কথা কেন ভাবাচ্ছে অফিসারদের? বিশেষত, যখন কৌশিককে খুনের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ নেই ওই নেতার?
এ ক্ষেত্রে কয়েকটি যুক্তি দিচ্ছে সিআইডি-র বিশেষ সূত্রটি।
প্রথমত, কৌশিকের পরিজনেরা পুলিশের কাছে দায়ের করা বয়ানে জানিয়েছেন, ওই আইনজীবী নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থেকেই তাপসের এ হেন বাড়বাড়ন্ত। তৃণমূলের ওই হোমরাচোমরা নেতা তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, কৌশিকের পরিবারকে নানা ভাবে শাসানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে গণপিটুনির মামলায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং মূল সাক্ষী, কৌশিকের মা-মাসিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গেলে সিআইডিকে তাপসের সঙ্গে ওই তৃণমূল নেতার সম্পর্কের দিকটিও
মাথায় রাখতে হচ্ছে।
তৃতীয়ত, ওই নেতা তদন্তকারী অফিসারদের একজনকে ইতিমধ্যেই ফোন করে অনুরোধ করেছেন, পুলিশি হেফাজতে তাপসের যেন কোনও ‘কষ্ট’ না হয়। এ জন্য তদন্তকারীদের টাকার লোভও দেখান ওই আইনজীবী নেতা, অভিযোগ এমনটাই।
এই সব কারণেই ওই নেতার উপরে নজর রাখা শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। সিআইডি-র এক অফিসারের কথায়, ‘‘সাক্ষীদের সুরক্ষিত রাখতেই তাপসের সঙ্গে কোন কোন নেতার ঘনিষ্ঠতা ছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে।’’
আপাতত যতটুকু জানা গিয়েছে, তার ভিত্তিতে সিআইডি-র ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, ডায়মন্ড হারবার বন্দর-সহ নানা এলাকায় তোলাবাজির দায়িত্বে ছিল তাপস। জেরায় সে কথা কবুলও করেছে তাপস, দাবি সিআইডি-র। সিআইডি কর্তাদের একাংশের আরও দাবি, তাপস জেরায় কবুল করেছে, তোলাবাজির বখরা তাপসের হাত থেকে ওই আইনজীবী নেতা মারফত দলের উপর মহলের কয়েকজনের হাতে পৌঁছে যেত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy