বৃষ্টি-বাদলার সময়ে রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব, ডেঙ্গির চরিত্র বদল এবং ভিন রাজ্য থেকে কলকাতায় আসা ‘জীবাণু’— এই ত্রিফলার উপরই দাঁড়িয়ে রাজ্যের এখনকার ডেঙ্গি পরিস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এ কথা মনে করছেন। তবে আশঙ্কার এই আবহেও ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে তাঁর দাবি। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, বিজেপি বা সিপিএম শাসিত রাজ্যে ডেঙ্গির দাপট অনেক বেশি।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে মাত্র ১৯ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে ৩৪ জন মারা গিয়েছেন। বাকিরা সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি গিয়েছেন। আমরা ডেঙ্গি প্রতিরোধ করতে পেরেছি। তা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’
এ রাজ্যে ডেঙ্গি-পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন তা ধামাচাপা দিচ্ছে, কমিয়ে দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে বারবারই। বেসরকারি ল্যাব থেকে সরকারি ক্লিনিক, সর্বত্র রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গির কথা এড়িয়ে যেতে প্রশাসনের চাপ রয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকেই বারবার অভিযোগ আসছে। রাজ্য প্রশাসন কোনও দিনই সে অভিযোগ স্বীকার করেনি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেছিলেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়। সেই কথাই আউড়ে যাচ্ছিলেন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্তারাই। কিন্তু চাপ যে বাড়ছে, সে কথা বুঝতে পারছিলেন সকলেই। এ দিনও কলকাতায় দু’জন এবং জেলায় ছ’জনের মৃত্যুর খবর এসেছে।
মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যসচিব মলয় দে বলেন, ‘‘ডেঙ্গি আক্রান্ত হলে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের সরকারকে জানানোটাই আইন। তা না মানলে আইন বিরুদ্ধ কাজ হয়।’’ সরকার কিছু চেপে যাচ্ছে না বলেই দাবি মুখ্যসচিবের। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এ দিন ডেঙ্গি-পরিস্থিতির কথা খানিকটা হলেও মানলেন।
এ দিনই জলপাইগুড়িতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেন, ‘‘রাজ্যে ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েই চলেছে। সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ তথ্য যাতে বাইরে বেরিয়ে না আসে সে জন্য চিকিৎসক ও প্যাথোলজি ল্যাবগুলিকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এত লোকের মৃত্যু বা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটত না৷’’
আরও পড়ুন: চিকিৎসকদের নির্দেশ, ডেঙ্গির বদলে লিখুন...
নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের দলীয় বৈঠকে মমতা পাল্টা বললেন, ‘‘এ বছর মশাবাহিত রোগে বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রে ৬৮৫ জন, গুজরাতে ৪৩৪ জন, রাজস্থানে ২৩০ জন, বামশাসিত কেরলে ১১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ রাজ্যে মাত্র ৩৪।’’
কিন্তু একটিমাত্র মৃত্যুও যে কাম্য নয় তা স্বীকার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রতি বছরই এই মরসুমে বাতাস-বাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। হাম, পক্সের পাশাপাশি মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গিতে প্রতি বছরই মানুষ আক্রান্ত হন। তার উপর ডেঙ্গির চরিত্র বদল সমস্যা কিছুটা বাড়াচ্ছে বলে তাঁর মত।
তবে এখানকার ডেঙ্গির নেপথ্যে ভিন্ রাজ্যের মশার দাপটও উড়িয়ে দেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, ‘‘অসুস্থ লোক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গেলে জীবাণু ছড়ায়। কে কোথা থেকে কী নিয়ে আসছে সে সব কে খেয়াল রাখছে।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘একজনও না মারা গেলে আমি খুশি হই। কিন্তু অনেক জায়গায় ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে বলে বলা হলেও পরে জেনেছি, সেপটিসেমিয়ায় বা মাল্টি অরগ্যান ফেলিওরে মৃত্যু হয়েছে। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েও মারা গিয়েছে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর চেপে যাচ্ছে বলেই অনেক কিছু ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতার জবাব, ‘‘অনেক ল্যাবে সংখ্যাটা বাড়িয়ে দেখানো হয়। অনেক নার্সিংহোম, বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে ল্যাবের আঁতাঁত থাকে। কমিশনের ব্যাপার থাকে।’’
এ কথা বলে বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলির উপরে পরোক্ষে চাপ তৈরি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার কথা যাতে না লেখা হয় তেমন ‘নির্দেশ’ রয়েছে বলে চিকিৎসক বা প্যাথোলজিস্ট মহলের একাংশের দাবি। কারণ, কোনও এলাকায় যদি জ্বরের রোগীদের ২০% এর বেশি ডেঙ্গি আক্রান্ত ঘোষিত হয়, তা মহামারি বলে চিহ্নিত হওয়ার কথা। সরকার তা চায় না বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy