ছবি: সংগৃহীত।
সোহেল সরকার আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু তার বাবা আফাজুদ্দিন ও দাদা রাসেল সরকারের খোঁজ নেই। দু’জনেই পলাতক। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, দু’জনের হাতে যে পরিমাণ টাকা হয়েছে, তাতে তাঁদের ধরা শক্ত হবে। আফাজুদ্দিন কোটিপতি বলে এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন। বালি পাথরের ব্যবসা করেই তিনি ও তার ছেলেরা প্রচুর টাকা কামিয়েছে বলে দাবি। সম্প্রতি তাঁর ঠাঁটবাট দেখে সে কথা বুঝতেও কারও অসুবিধা হচ্ছিল না। তবে পুলিশ দাবি করেছে, আফাজুদ্দিন ও রাসেলদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। তৃণমূল নেতৃত্বও এ দিন শান্তি বৈঠকে আফাজুদ্দিনের পরিবার সম্পর্কে কড়া অবস্থান নেওয়ায়, ইলিয়াস খুনে অভিযুক্তদের বেশিদিন পালিয়ে বেড়ানো সম্ভব হবে না বলেও মনে করছেন অনেকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে তো বটেই, রাজ্যে পালা বদলের পরও শুরুর দিকে এলাকায় তেমন প্রভাব ছিল না আফাজউদ্দিন বা তার ছেলেদের৷ সামান্য দিন মজুরির কাজ করত আফাজউদ্দিন৷ কখনও নদীর ধারে চালনিতে বালি ছেঁকার কাজ করত তো কখনও পিঠে করে বয়ে ভ্যানে বালির বস্তা তুলে দিত৷ কিন্তু বছর কয়েক আগে এলাকায় একটি বেসরকারি সংস্থা রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করলে কপাল খুলতে শুরু করে আফাজউদ্দিনের৷ সে সেখানে বালি-পাথর সরবরাহের কাজ শুরু করে দেয়৷ ক্রমেই সেই কাজে তার প্রতিপত্তি বাড়তে শুরু করে৷ তৃণমূলের মালবাজার ব্লক সভাপতি তমাল ঘোষ বলেন, “সেই সময় চরের বালির বরাত নিয়ে এত কড়াকড়ি ছিল না৷ সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সিকিম সহ বাইরের রাজ্যের লরিগুলিতে একচেটিয়া ভাবে বালি সরবরাহ করে প্রচুর টাকা করে ফেলে আফাজউদ্দিন৷” অভিযোগ, নানা ছলচাতুরিতে সরকারকেও রয়ালিটি ফাকি দিতে শুরু করে সে৷
পরে দুই ছেলে রাসেল ও সোহেলও তার এই ব্যবসায় পুরোপুরি ঢুকে যায়৷ অভিযোগ, রাসেল আবার তৃণমূলের ব্লক নেতা হওয়ায় একদিকে যেমন তাদের এই কাজে দলের নেতাদের একাংশের মদত দিত, তেমনই শাসক দল করার সুবাদে প্রশাসনের নেতাদের একাংশের মদতও তার সঙ্গে ছিল৷ কান পাতলে এমনটাও শোনা যায়, সম্প্রতি মালবাজারের এক প্রশাসনিক কর্তার জন্মদিনও উদযাপন করেছে রাসেল৷ বুধবারের ঘটনার পর যা নিয়ে জল্পনাও চলছে খোদ পুলিশ ও প্রশাসনের কোন কোন মহলে৷
যদিও প্রশাসনের কর্তারা এই অভিযোগ মানতে চাননি৷ পাশাপাশি, শাসকদলের নেতারাও তাদের ব্যবসায় দলের মদতের কথা মানতে চাননি৷ তমালবাবু বলেন, ‘‘ওরা যখন বালি-পাথরের ব্যবসা করে অনেক টাকার মালিক হয়ে ওঠে, তখন আমাদের দলের লোকেরা সে ভাবে ওই ব্যবসাটা বুঝত না৷ ফলে মদত জোগানোর প্রশ্নই ওঠে না৷’’
যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এ ভাবেই কার্যত কোটিপতি হয়ে ওঠে আফাজউদ্দিন ও তার পরিবার৷ বালি-পাথর সরবরাহের জন্য বেশ কয়েকটা লরির পাশাপাশি, জেসিপি, ছোট গাড়ি ও একাধিক মোটর সাইকেলও রয়েছে তাদের৷ পুরানো কাঠের বাড়ি ভেঙে মারবেল সহ ঝাঁ-চকচকে দোতলা একটা বাড়িও তৈরি হচ্ছিল ঘিস বস্তিতে৷ তবে জনরোষে আপাতত তা ক্ষতিগ্রস্ত৷ কান পাতলে শোনা যায় ভাঙচুরের সময় ওই বাড়ি থেকে প্রচুর টাকা লুঠও হয়েছে৷
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘কার কীভাবে উত্থান জানা নেই৷ তবে ওদলাবাড়ির ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে৷ ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ বাকিদের খোঁজেও জোড় তল্লাশি চলছে৷’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy