Advertisement
০১ মে ২০২৪
Teacher

শিশুদের স্বনির্ভরতায় হাতেখড়ি, বইয়ের বাইরের পাঠ পড়িয়ে ‘শিক্ষারত্ন’ মুর্শিদাবাদের অমৃতাভ

ছাত্রছাত্রীরাই অমৃতাভর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। কচিকাঁচাদের সঙ্গে নিজে বসে জিনিসপত্র তৈরি করেন তিনি। মুখোশ, পুতুল, এমনকি কী ভাবে সহজে পরিবেশবান্ধব রাখি তৈরি করা যায় তা-ও শিখিয়েছেন সকলকে।

'শিক্ষারত্ন' পাচ্ছেন অমৃতাভ।

'শিক্ষারত্ন' পাচ্ছেন অমৃতাভ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুর্শিদাবাদ শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:৪৪
Share: Save:

ছাত্রছাত্রীদের ছোট থেকেই স্বনির্ভর ও কর্মমুখর করে তোলার চেষ্টা করেন তিনি। শুধু প্রথাগত শিক্ষা নয়, বইয়ের বাইরের পাঠ দেন পড়ুয়াদের। ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে কখনও খেলনা, কখনও আবার গয়নাগাটি, নানা রকম জিনিস বানানো শেখান। শিশুদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রথম পাঠ দিয়ে ‘শিক্ষারত্ন’ পাচ্ছেন মুর্শিদাবাদের অমৃতাভ মণ্ডল।

মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানার সুতি গ্রামের বাসিন্দা অমৃতাভ। ভরতপুর বেনিয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। জানান, ছাত্রছাত্রীরাই তাঁর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিজে বসে জিনিসপত্র তৈরি করেন তিনি। মুখোশ, পুতুল, এমনকি কী ভাবে সহজে পরিবেশবান্ধব রাখি তৈরি করা যায় তা-ও শিখিয়েছেন। শহর থেকে উপকরণ কিনে এনে শিশুদের সঙ্গে বসেই বানিয়েছেন মালা, নাকছাবি আর কানের দুল। শুধু জিনিস বানানোই নয়, সেগুলি প্রদর্শনীতে বিক্রি করে সংগৃহীত অর্থে দুঃস্থের সেবা করেছেন অমৃতাভ। ছোটদের শিখিয়েছেন, কী ভাবে অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে হয়।

মুর্শিদাবাদের ব্যতিক্রমী এই শিক্ষক এ বার তাই পাচ্ছেন ‘শিক্ষারত্ন’। বছর দুই আগে শিক্ষক হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন অমৃতাভ। তাঁর বিদ্যালয়কে জেলা ছাড়িয়ে রাজ্য, এমনকি দেশের সামনে মডেল হিসাবে তুলে ধরেছেন তিনি। এর আগে অমৃতাভ যে বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক ছিলেন, তা রাজ্যের সেরা বিদ্যালয় হিসাবে ‘শিশুমিত্র’ এবং জেলায় সেরা হিসাবে ‘নির্মল বিদ্যালয়’ পুরস্কার পেয়েছিল।

ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় ‘স্যার’ অমৃতাভ। মনখারাপ হলেই বিদ্যালয়ে চলে আসে তারা। অমৃতাভের আর এক গুণ রয়েছে। তিনি পশুপাখি, যন্ত্র ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক শব্দ নকল করতে পারেন অনায়াসে। ছাত্রছাত্রীদের মন কাড়ে হরবোলা শিল্পে তাঁর এই দক্ষতাও।

স্কুলে মিড-ডে মিলের মেনুতেও অভিনবত্ব এনেছেন অমৃতাভ। রোজ একঘেয়ে খাবারের বদলে মিড-ডে মিলে এসেছে বৈচিত্র। তাঁর সেই মিড-ডে মিলের মেনু গোটা জেলাতেই অনুসরণ করা হয়।

গ্রীষ্মের ছুটিতেও ঘরে বসে থাকেন না অমৃতাভ। কখনও ত্রিপুরার আগরতলায়, কখনও আলিপুরদুয়ার কিংবা কোচবিহারের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ঘুরে ঘুরে স্বনির্ভরতার পাঠ দেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সাপের ছোবলে মৃত্যু সম্পর্কে গ্রামগঞ্জে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর। আলিপুরদুয়ার বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সামাজিক কু-প্রথার বিরুদ্ধেও লড়ছেন তিনি। ‘শিক্ষারত্ন’ পেয়ে খুশি অমৃতাভ। তিনি বলেন, ‘‘আমার এই জয় সমস্ত শিশু, গ্রামবাসী, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের জয়। এই জয় মানবতার ও সামাজিকতার। পুরস্কারের খবরে শিশুরা খুশি, তাই আমি ভীষণ আনন্দিত!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Teachers' Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE