Advertisement
E-Paper

এ রাজ্যেও নাগরিকত্ব হারানোর আতঙ্কে মুসলিমরা

অসমে নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকায় বহু হিন্দুর নাম বাদ পড়ার জন্য এ রাজ্যের হিন্দুরাও আতঙ্কিত ছিলেন। কিন্তু গত তিন দিনে পরিস্থিতি খানিকটা পাল্টে গিয়েছে। লোকসভায় সোমবারই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ পাশ হয়েছে।

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৬
ভয়ের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ক্ষোভও। অনেকেরই মতে, এ ভাবে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও বিল আনা যায় না।

ভয়ের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ক্ষোভও। অনেকেরই মতে, এ ভাবে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও বিল আনা যায় না।

লোকসভা ভোটের আগে থেকেই দেশের রাজনীতি আলোড়িত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে। নাগরিক পঞ্জি নিয়ে ক্ষোভ প্রতিফলিত হয়েছে রাজ্যে সম্প্রতি তিনটি বিধানসভা আসনের উপ-নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবিতে।

অসমে নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকায় বহু হিন্দুর নাম বাদ পড়ার জন্য এ রাজ্যের হিন্দুরাও আতঙ্কিত ছিলেন। কিন্তু গত তিন দিনে পরিস্থিতি খানিকটা পাল্টে গিয়েছে। লোকসভায় সোমবারই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ পাশ হয়েছে। বুধবার দিনভর রাজ্যসভায় বিতর্ক চলেছে। বিরোধীরা, বিশেষত, কংগ্রেস বিল নিয়ে চূড়ান্ত সমালোচনা করলেও শেষরক্ষা হয়নি।

ফলে যা দাঁড়াল, রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন সংখ্যালঘুরা। নতুন করে এনআরসি-ভীতিতে ভুগতে শুরু করেছেন নদিয়া জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। শিক্ষিত যুবকেরা যেমন সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব, ফের নতুন করে নথি জোগাড়ের তোড়জোড় শুরু করেছেন অনেকেই। তাঁদের অনেকেরই আক্ষেপ, আসলে এই বিল আনার মূল লক্ষ্যই হল মুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রমাণের লাইনে দাঁড় করানো।

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক মুসিয়ার আলির মতে, মাত্র কয়েক পাতার এই বিল মানুষকে পুরোপুরি ধর্মীয় ভাবে বিভক্ত করে দিল। এ দেশের সব হিন্দু তো বটেই, এমনকি পড়শি তিন রাষ্ট্র বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মুসলিম ছাড়া অন্য ছয় ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে এলে নাগরিকত্ব পাবেন। শর্ত কেবল, পাঁচ বছর এ দেশে থাকতে হবে। ফলে মুসলিম ছাড়া কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আর নাগরিকত্ব প্রমাণের লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এই অবস্থায় প্রত্যাশিত ভাবেই চিন্তায় পড়েছে মুসলিম সমাজ।

কালীগঞ্জের বল্লভপাড়ার আব্দুল শেখ মাস কয়েক আগে নথি তৈরি ও নথিতে নামের বানান ঠিক করার জন্য বেশ দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন। মাঝে তিনি ভেবেছিলেন, ধীরে-ধীরে হয়তো বিষয়টা ধামাচাপা পড়ে যাবে। এখন এই বিল পাশের পর ফের নথি নিয়ে বসেছেন। বুধবার দুপুরে বহু পুরনো দলিল ঘাঁটার ফাঁকে তিনি বলেন, ‘‘অসমের নিয়মেই যদি চিহ্নিত করা হয়, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর এ দেশে এলেই অনুপ্রবেশকারী বলা হবে। কিন্তু ওই সময়ের আগে তো আমার বাবা ভূমিহীন ছিলেন। ফলে দলিল মিলছে না। আগে ভেবেছিলাম, কলকাতা থেকে পুরনো ভোটার তালিকা আনব। এ বার দেখছি দু’এক দিনের মধ্যেই যেতে হবে।’’

ভয়ের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ক্ষোভও। অনেকেরই মতে, এ ভাবে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও বিল আনা যায় না। তা সমতার অধিকারের পরিপন্থী। দেশের সংবিধান যে সাম্যের অধিকার দিয়েছে, সেখানে তো ধর্মের ভিত্তিতে কোনও বিভাজনের কথা বলা হয়নি।

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মুকুল মুন্সি বলেন, ‘‘অমিত শাহ লোকসভা বলেছেন, পড়শি তিন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ধর্ম মুসলিম। ফলে সেখানকার অন্য সম্প্রদায়ের লোককে ভারত নাগরিকত্ব দেবে। কিন্তু ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়েও যে ভাবে এনআরসি-র লাইনে শুধু মুসলিমদের দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে তাতে তো শাসকের উগ্র হিন্দুত্ববাদী চরিত্রই ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পড়শি কয়েকটি দেশে বৌদ্ধদের অত্যাচারের শিকারও তো বহু মানুষ। তাঁদের নিয়ে তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু বলছেন না!’’

মুসলিমদের অনেকেই ভয় পাছেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদে ইন্ধন দিয়ে ধীরে-ধীরে ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েলের মতো হয়ে ওঠার দিকে ভারত। চাপড়ার কামরুল বিশ্বাস বলছেন, ‘‘নথি নিয়ে শুধু মুসলিমদেরই হয়রান করার চেষ্টা বন্ধ করা দরকার। মাস কয়েক আগেই একাধিক লোক মানসিক চাপে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ফের আতঙ্কের দিন ফিরল।’’

NRC CAB Muslims
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy