Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নবান্ন কড়া, ধর্মঘটে অনড় আলু ব্যবসায়ীরাও

আগামী সোমবার থেকে তিন দিন ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অনড় আলু ব্যবসায়ীরা। এই পরিস্থিতিতে আরও এক দফা আলুর লরি ধরপাকড় শুরু করে দিল রাজ্য সরকার। সরকারি সূত্রে খবর, শুক্রবার সারা দিনে আলু বোঝাই প্রায় ৩০টি লরি আটক করা হয়েছে। তবে এতে যে পরিস্থিতির মোকাবিলা সম্ভব নয়, সে ব্যাপারে এক রকম নিশ্চিত হয়ে আজ, শনিবার নবান্নে ফের বৈঠকে বসছেন সরকারি কর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

আগামী সোমবার থেকে তিন দিন ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অনড় আলু ব্যবসায়ীরা। এই পরিস্থিতিতে আরও এক দফা আলুর লরি ধরপাকড় শুরু করে দিল রাজ্য সরকার। সরকারি সূত্রে খবর, শুক্রবার সারা দিনে আলু বোঝাই প্রায় ৩০টি লরি আটক করা হয়েছে। তবে এতে যে পরিস্থিতির মোকাবিলা সম্ভব নয়, সে ব্যাপারে এক রকম নিশ্চিত হয়ে আজ, শনিবার নবান্নে ফের বৈঠকে বসছেন সরকারি কর্তারা। প্রয়োজনে হিমঘর থেকে আলু বাজেয়াপ্ত করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের নামে গত এক মাসে রাজ্য সরকারের কাণ্ডকারখানা দেখে এই পর্বেও তেমন ভরসা রাখতে পারছেন না সাধারণ ক্রেতা। এর আগে আলুু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েক বার বৈঠক করেছে রাজ্য সরকার। ভিন্রাজ্যে যাওয়ার পথে আলুবোঝাই লরি বাজেয়াপ্ত করে মিলনমেলায় আলু রাখা হয়েছে। কয়েক হাজার টন আলু পচে গিয়েছে। এ সব সত্ত্বেও বাজারে জ্যোতি আলুর দাম ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ২২-২৩ টাকা কেজিতে। রাজ্য সরকার ১৪ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির ফরমান জারি করলেও সেই পচা আলুর ক্রেতা মেলেনি সে ভাবে।

এই পরিস্থিতিতে ধর্মঘট নিয়ে আলু ব্যবসায়ীদের অনড় মনোভাবে সরকারের চিন্তা বেড়েছে। শুক্রবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে প্রথমে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ ও কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে। পরে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র আর এক দফা বৈঠকে বসেন কৃষি দফতরের আধিকারিক ও পুলিশের সঙ্গে। বৈঠকেই স্থির হয়, হিমঘর থেকে ব্যবসায়ীরা আলু বার না করলে প্রয়োজনে সরকার তা বাজেয়াপ্ত করবে। সেই আলু সরকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করবে। আজ, শনিবার কৃষি বিপণন দফতরের সচিব সুব্রত বিশ্বাস দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে ফের বৈঠক করবেন।

কৃষি বিপণন দফতরের এক কর্তা জানান, অত্যাবশক পণ্য আইনের আওতায় রয়েছে আলু। তাই সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রয়োজনে আলু বাজেয়াপ্ত করতেই পারে। কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় এ দিন বলেন, “আলু ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন। প্রয়োজনে সরকার আরও কড়া পদক্ষেপ করবে।” পশ্চিমবঙ্গ হিমঘর মালিক সংগঠনের এক সদস্য এই প্রসঙ্গে জানান, হিমঘরে যে ব্যবসায়ীরা আলু রাখেন, তাঁদের একটি করে রসিদ দেওয়া হয়। সরকার ওই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে এলে হিমঘর মালিকরা নিশ্চয়ই আলু দেবেন।

নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্য থেকে যাতে বাইরে আলু না যায় তার জন্য সব সীমানা সিল করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তবর্তী শহর দাঁতন, ঝাড়খণ্ড-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তবর্তী শহর চিরকুন্ডা এবং কোচবিহারে বাংলাদেশ সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি চেকপোস্টে সিসিটিভি লাগিয়ে নজরদারি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে চিরকুন্ডায় ২১ ট্রাক আলু আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিপণন দফতর। অন্যত্রও আটক হয়েছে ৯টি আলু বোঝাই ট্রাক। তবে এ বার আর মিলন মেলায় আলু মজুত করা হবে না। আলু রাখা হবে সিঙ্গুরের কৃষক বাজারে। কিছু আলু কলকাতার কয়েকটি বাজারেও রাখা হবে।

কিন্তু সরকারের কোনও উদ্যোগেই ভরসা রাখতে পারছেন না খুচরো আলু বিক্রেতা থেকে সাধারণ মানুষ। কারণ গত এক মাস ধরে সরকারের নানা হুঁশিয়ারি এবং পদক্ষেপে বাজারে আলুর দাম এক টাকাও কমেনি। শুক্রবারও অধিকাংশ বাজারে ২২-২৩ টাকা কেজি দরেই জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে। চন্দ্রমুখী বিক্রি হয়েছে ২৫-২৬ টাকা কেজিতে। মানিকতলা বাজারের এক আলু ব্যবসায়ী বলেন, “সরকার নাক গলানোয় সমস্যা বাড়তে পারে। ধর্মঘট হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। আড়তদারেরা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, হিমঘর থেকে আলু না এলে তাঁরা আলু দিতে পারবেন না।”

আলু ব্যবসায়ীদের যে সংগঠন এই ধর্মঘট ডেকেছে, সেই প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক বরেন মণ্ডল জানান, সরকার সীমানা সিল করে দেওয়ায় আলু বাইরে যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ধমর্ঘট হলে হিমঘর থেকে আলু বেরোবে না। বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়লে দায়ী থাকবে রাজ্য সরকার। বরেনবাবু বলেন, “এখন হিমঘরগুলিতে ২০ লক্ষ টন আলু আছে। তিন দিন আলু না বেরলে আলু নষ্ট হবে। তার দায়ও কিন্তু সরকারকেই নিতে হবে।”

প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক বিভাস দে বলেন, “বাম আমলেও এই ধরনের সমস্যা হয়েছে। কিন্তু তখন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হয়েছে। এই সরকার সবই চাপিয়ে দিতে চায়।” ওই সংগঠনের সদস্যদের একাংশ অবশ্য সরাসরি সরকারের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে আরও এক বার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। সরকারের এই ছায়ার সঙ্গে কুস্তি, পাল্টা হিসেবে ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের ডাক সাধারণ মানুষের একটাই উদ্বেগ, ফের না আলু উধাও হয়ে যায় বাজার থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE