Advertisement
২৯ মার্চ ২০২৩

জমি দখলের চেষ্টা যুবনেতার, চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে

সরকারি জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠল যুব তৃণমূলের এক ব্লক স্তরের নেতার বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির যে জমি নিয়ে অভিযোগ, সেটি দু’টি স্কুল মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের লোকসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রও হওয়ার কথা। সেই জমিই যুব তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে এন্টারের মদতে দখলের চেষ্টা চলছে বলে দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন দু’টি স্কুলের কর্তারা।

এই বয়ানেই মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ জানিয়েছেন দুই স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এই বয়ানেই মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ জানিয়েছেন দুই স্কুল কর্তৃপক্ষ।

বিমান হাজরা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

সরকারি জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠল যুব তৃণমূলের এক ব্লক স্তরের নেতার বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির যে জমি নিয়ে অভিযোগ, সেটি দু’টি স্কুল মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের লোকসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রও হওয়ার কথা। সেই জমিই যুব তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে এন্টারের মদতে দখলের চেষ্টা চলছে বলে দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন দু’টি স্কুলের কর্তারা।

Advertisement

স্কুলগুলির ক্ষোভ, এন্টার স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত সাহার ঘনিষ্ঠ। তাই এন্টারের মদতে লোকজন একাধিকবার লাঠি, বোমা নিয়ে জমি দখল করতে এসেছে বলে পুলিশের কাছে জানিয়েও লাভ হয়নি। উল্টে দু’পক্ষকে ডেকে থানার মধ্যেই সালিশি করে সাগরদিঘি থানার পুলিশ। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ফের জমি দখলের চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। সেই পরিস্থিতিতে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হস্তক্ষেপের আবেদন পাঠিয়েছেন স্কুল দু’টির কর্তৃপক্ষ। বিধায়ক অবশ্য দাবি করেছেন এন্টারকে তিনি চেনেন না। তাঁর বক্তব্য, “দলের কেউ জোর করে ওই জমি দখলের চেষ্টা করলে, বরদাস্ত করা হবে না। গায়ের জোর দেখালে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”

সাগরদিঘি থানার পুলিশও সালিশি করার কথা মানেনি। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “সরকারি জমি কেউ এ ভাবে দখল করবে, সেটা মানা যায় না। অভিযোগ জানালে আমি নিজে ব্যবস্থা নেব।”

তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়ে এন্টার জমি দখল করে রাখার পাল্টা অভিযোগ করেছেন স্কুলগুলির বিরুদ্ধে। যদিও তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, “স্কুলের জমি দখলের জন্য যুব তৃণমূলের ওই নেতা যে ভাবে উঠেপড়ে লেগেছেন, তাতে আখেরে দলের ভাবমূর্তিই খারাপ হচ্ছে।”

Advertisement

জিনদিঘি গ্রামের যে জমি নিয়ে বিতর্ক, স্কুলগুলির হিসেবে তার মাপ প্রায় পাঁচ একর। জিনদিঘি হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক বদরুল আলম জানান, ২৪ নম্বর জিনদিঘি মৌজায় ২ নম্বর দাগের ১০ একর জমির মালিক ছিলেন কবিয়াল গুমানি দেওয়ান। তিনি গ্রামের উন্নয়নে ১৯৫৭ সালে ১.৮২ একর জিনদিঘি প্রাথমিক স্কুলকে এবং ১৯৬১ সালে ২.৯০ একর জমি জিনদিঘি হাইস্কুলকে দান করেন। এই দু’টি জমিই এক সঙ্গে দু’টি স্কুলের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাঠের গা ঘেঁষে গুমানি দেওয়ানের পরিবারের দান করা জমিতে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের লোক-সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র খোলার কথা।

এন্টার দাবি করছেন, “ওই জমিটি ১৯৯৩ সালে আমার অনুগতরা কিনেছেন। বাম জমানা থেকে ওই ছয় একর জমি প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে গায়ের জোরে দখল করে রেখেছে ওই দু’টো স্কুল।” পক্ষান্তরে, জিনদিঘি হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক হাবিবুর রহমান জানাচ্ছেন, জমি দখলের জন্য একাধিক বার আদালতে গিয়েছেন যুব তৃণমূলের ওই নেতা ও তাঁর অনুগামীরা। তাঁরা প্রতিবারই হেরে গিয়েছেন। হাবিবুর বলেন, “মামলা এখন জঙ্গিপুর আদালতে গড়িয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা রাখতে বলেছে।”

কিন্তু দু’টি স্কুলের কর্তৃপক্ষই স্বস্তিতে নেই। তাঁদের অভিযোগ, গত ১৬ ডিসেম্বর ফের ওই জমি দখলের চেষ্টা করে এন্টারের লোকজন। জিনদিঘি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রিনা মণ্ডলের দাবি, ‘‘শাসক দলের নেতার মদতে সশস্ত্র লোকজন বার বার জমি দখল করতে আসছে। বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।” সরকারি ওই জমি দখলের চেষ্টা হচ্ছে বলে খবর পেয়েছেন জেলা তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের আধিকারিক সন্দীপ পালও। তিনি বলেন, “আমরা ব্যাপারটা কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি।”

এর পরেও এন্টার বলছেন, “যে জমি আমাদের, তার দখল নিতে হবে। আদালতে মামলা চলছে বলে চুপ করে আছি। যে দিন মামলার রায় বেরোবে, সে দিনই দখল নেব ওই জমির।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.