মোহনগঞ্জ হাইস্কুলে তখন বিক্ষোভ চলছে। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই খেতে কাজ করছিল বাবা। দুপুরে বছর এগারোর মেয়ে সেই খেতেই জলখাবার দিতে গিয়েছিল। তার পর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
বুধবার বিকেল থেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে রানিনগরের চর সরন্দাজপুর। গোটা গাঁ তন্নতন্ন করে খুঁজেও ওই বালিকাকে পাওয়া যায়নি। বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ির কাছেই একটি সর্ষেখেতে তার দেহ মেলে। খবর পেয়েই দেহ উদ্ধার করে রানিনগর থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই বালিকার হাত ও মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল। শরীরের বেশ কিছু জায়গায় ছিল আঁচড়ের দাগ। ডোমকলের এসডিপিও মাকসুদ হাসান বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ওই বালিকাকে নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। ওই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।’’
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই তপ্ত হয়ে ওঠে রানিনগরের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম চর সরন্দাজপুর। ওই বালিকা স্থানীয় মোহনগঞ্জ হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ঠিক করেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ঘটনার প্রতিবাদে একটা মিছিল হবে। সেই মতো স্কুলে নিয়ে আসা হয় মাইক, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। কিন্তু আচমকা স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হন গ্রামবাসী ও ছাত্রদের একাংশ। তাঁরা স্কুলে বিক্ষোভ দেখান। একটি ঘরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘণ্টা দু’য়েক তালাবন্দি করে রাখা হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অভিযোগ, তৃণমূলের স্থানীয় প্রধানের নির্দেশেই স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদ মিছিল করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। মোহনগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু সরকার বলছেন, ‘‘স্থানীয় প্রধান ও পরিচালন সমিতির নির্দেশেই আমরা আর মিছিল করিনি। স্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছিল।’’
কাতলামারি ২ প্রধান তৃণমূলের জয়নাল আবেদিন বলছেন, ‘‘স্কুলের একজন ছাত্রী মারা গিয়েছে। তদন্ত করার জন্য পুলিশ ও প্রশাসন আছে। প্রশাসন সূত্রেই আমি জানতে পারি অভিযুক্তদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। তার পরেও বহিরাগত কিছু লোকের উস্কানিতে প্রতিবাদ মিছিল করতে চাইছিল স্থানীয় কিছু লোকজন। স্কুলের বাইরে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মিছিলের সময় দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে? সেই কারণেই আমি মিছিল করতে নিষেধ করেছিলাম।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়িতে অভাব থাকলেও ওই বালিকার লেখাপড়াতে ঝোঁক ছিল খুব। বাড়ির কাজে মাকে সাহায্যও করত সে। মাঝেমধ্যেই বাবার জন্য খেতে খাবার নিয়ে যেত। এ দিনও গিয়েছিল। তার বাবার কথায়, ‘‘কখনও খাবার দিতে, কখনও আবার ছাগল নিয়ে মাঠে আসত। বাড়িও ফিরে যেত। এ দিন কী ভাবে যে কী হয়ে গেল আর কারা আমার মেয়েকে এ ভাবে খুন করল তা কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ বুধবার রাতে ওই বালিকার বাবা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার রানিনগর এলাকা থেকেই দু’জনকে ধরা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy