এক মহিলার দুই ছেলেকে সরকারি চাকরি এবং সেই মহিলাকে পদ্মশ্রী এবং ভারতরত্ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে দফায় দফায় ৪৪ লক্ষ টাকা প্রতারণা করার অভিযোগে সুতি ২ ব্লকের বাসিন্দা মহম্মদ হাসানুজ্জামান ওরফে লিটন নামে এক প্রাথমিক শিক্ষককে গ্রেফতার করল সুতি থানার পুলিশ। অভিযোগ, লিটন তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠ। তবে সুতির তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস বলেন, “তৃণমূলের সঙ্গে হাসানুজ্জামানের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ হাসানুজ্জামানের দাবি, “ষড়যন্ত্র করেই ফাঁসানো হয়েছে আমাকে।”
বুধবার সুতি থানায় প্রতারণার ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন জয়নুর বিবি নামে সেই মহিলা। তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষিকা। সরকারি আইনজীবী রাতুল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বৃহস্পতিবার ধৃত শিক্ষককে জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে হাজির করা হলে তাঁকে ৪ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত মহম্মদ হাসানুজ্জামানের বাড়ি সুতির মেরুপুরে। তিনি সুতি চক্রের শেখপুরা প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক।
জয়নুর বিবির বাড়ি সুতি থানার খাঁপুর গ্রামে।এক সময় কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্যও নির্বাচিত হন। তাঁর স্বামী একটি হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন সুতিতে। তিনিও অবসরপ্রাপ্ত। জয়নুর বিবি সাহিত্য চর্চা করেন।
জয়নুর বলেন, “গত বছর জঙ্গিপুর বইমেলায় আমার প্রকাশনা সংস্থার একটি স্টল দিয়েছিলাম। সেখানে আমার লেখা ৭-৮টি বই কেনেন হাসানুজ্জামান। তখনই হাসানুজ্জামান জানান, তিনিও সাহিত্যচর্চা করেন। স্টল পাননি। এই স্টল থেকে তাঁর বই বিক্রি করতে চান তিনি। আমি আপত্তি করিনি। সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা।’’
জয়নুর বলেন, ‘‘সেই সূত্রেই তিনি দাবি করেন, লাগোয়া জেলার এক তৃণমূল সাংসদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্তার সঙ্গে তাঁর আলাপ আছে, যিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নামী পুরস্কার দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন। হাসানুজ্জামান তখন আমাকে বলেছিলেন, সেই পরিচিতকে ধরে আমাকে ভারতরত্ন পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। এই বলে হাসানুজ্জামান ৬ লক্ষ টাকা নেন আমার কাছ থেকে।’’ জয়নুর বলেন, ‘‘তার পরে বেশ কিছু দিন কেটে গেলেও পুরস্কার না পেয়ে হাসানুজ্জামানকে বললে তিনি ফের প্রস্তাব দেন ওই পুরস্কার তো ২৬ জানুয়ারির আগে ঘোষণা হবে না। তার আগে “পদ্মশ্রী” পুরস্কারের ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। যে অফিসার পুরস্কার নির্বাচন করেন তিনি অবসর নেবেন। তাই যা করতে হবে তাড়াতাড়ি।’’
জয়নুর বলেন, ‘‘এর পর আমার সোনাদানা যা ছিল বন্ধক দিয়ে ২১ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম হাসানুজ্জামানকে। তার কিছু দিন পরেই হাসানুজ্জামান জানান আমার দুই ছেলের সরকারি চাকরি ও সুতির এক গ্রামে একটি রেশন দোকান পাইয়ে দেবেন তিনি। তবে তার জন্য দিতে হবে আরও ১৭ লক্ষ টাকা। সে টাকার অনেকটাই ব্যাঙ্ক ও ‘ফোন পে’-তে দিয়েছি হাসানুজ্জামানকে। কিন্তু এ বছর ২৬ জানুয়ারি পুরস্কারের তালিকায় আমার নাম নেই দেখে হাসানুজ্জামানকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন এ সব পুরস্কার এ ভাবে ঘোষণা করে ঢাক পিটিয়ে দেওয়া হয় না। ৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা হবে।’’
জয়নুরের অভিযোগ, ‘‘এরপরেই আমার সন্দেহ হয়। আমি মঙ্গলবার সুতি থানার ওসি-র সঙ্গে দেখা করে সব ঘটনা তাঁকে জানাই। বুধবার লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করলে রাতেই হাসানুজ্জামানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।”
এলাকায় তৃণমূলের নেতাদের অনেকের সঙ্গে ওঠা-বসা হাসানুজ্জামানের। তৃণমূলের একাধিক অনুষ্ঠানে নেতাদের সঙ্গে মঞ্চেও বসতে দেখা গেছে তাকে।
বিধায়ক ইমানি বলেন, “দলের কোনও নেতার সঙ্গে যদি অভিযুক্তের ছবি থেকে থাকে তবে ওই নেতাকেই জিজ্ঞেস করুন। আমি যত দূর জানি সে কংগ্রেস করে।”
ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, “কংগ্রেসে কখনও দেখিনি অভিযুক্তকে। তৃণমূল ও তার শিক্ষক সংগঠনের নেতা বলেই তাকে এলাকার সবাই চেনে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)