বোমায় জখম সুমন (বাঁ দিকে) ও রণিত। শুক্রবার শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র।
কুয়াশা কেটে দিনের আলো তখনও ভাল করে ফোটেনি। বিকট শব্দে ঘুম ভাঙল নাকাশিপাড়ার অন্তর্গত গোটপাড়া গ্রামের অনেকের। কিছু ক্ষণের মধ্যেই শোরগোল উঠল— ‘মাঠে বোমা ফেটেছে!’
গ্রামের লোক ছুটে গিয়ে দেখতে পেলেন, গোটপাড়া ও সুলতানপুরের মাঝামাঝি এক সাঁকোর নীচে রক্তের স্রোতের মধ্যে তিন কিশোর লুটিয়ে পড়ে রয়েছে। এক জনের হাত ছিন্নভিন্ন। আঙুল উড়ে গিয়েছে।
এদের মধ্যে অভিজিৎ দাস ও রণিত দাস ওই গ্রামেরই ছেলে। সুমন দাস নামে তৃতীয় কিশোর ছুটিতে তার মাসির বাড়ি বেড়াতে এসেছিল। তিন জনেই স্কুল পড়ুয়া। নাকাশিপাড়া হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে অভিজিৎ ও সপ্তম শ্রেণিতে রণিত। সুমন মুড়াগাছা হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তাদের প্রথমে কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে অভিজিৎ ও রণিতের অবস্থার অবনতি ঘটলে তাদের কলকাতার এক সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, সকেট বোমা ফেটে এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খেলনা ভেবে বোমায় হাত দিয়েছিল কিশোরেরা। তাতেই বোমা ফেটে গুরুতর আহত হয় তারা। এমনিতে গোটপাড়ায় কোনওদিনই দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি বা রাজনৈতিক হিংসার বাড়াবাড়ি নেই। তা সত্ত্বেও এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা দোষীদের গ্রেফতার করার দাবিতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মীদের আটকে প্রায় তিনঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান। পরে পুলিশের আশ্বাসে বিক্ষোভ ওঠে। এলাকার বিধায়ক কল্লোল খাঁ-র কথায়, ‘‘এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। শুনেছি এলাকায় জমি নিয়ে একটা সমস্যা রয়েছে। এই ঘটনায় প্রোমোটার চক্রের যোগ থাকতে পারে মনে হয়। আমি প্রশাসনকে বলেছি বিষয়টি তদন্ত করতে।’’
আহত কিশোরদের পরিবার সূত্রে খবর, প্রতিদিনের মতো শুক্রবার ভোরেও ছুটতে বেরিয়েছিল অভিজিৎ ও রণিত প্রমানিক। এ দিন তাদের সঙ্গে ছিল সুমনও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তিন জনে কিছু ক্ষণ ছোটার পর সাঁকোর উপর বসে। ওদের এক জন মূত্রত্যাগের জন্য সাঁকোর নীচে নামলে তার নজরে আসে বোমাটি। সে তখন বাকিদের দেখায়। তিন জনেই বোমাকে খেলনা ভেবে বসে। সেটা হাতে নিতেই ফেটে যায়। বিস্ফোরণস্থলে কিশোরদের আঙুলের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অভিজিৎ দাসের বাবা রিন্টু দাস বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে একটাই অনুরোধ আমার, ওখানে যারা বোমা ফেলে রেখেছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। আজ আমার ছেলের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে, কাল অন্য কারও ক্ষেত্রে হতে পারে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে আরও একটি তাজা বোমা পাওয়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy