ছোট্ট অস্মিকাকে বাঁচাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বহু মানুষ। পুরো টাকা জোগাড় না হলেও অবশেষে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেতে চলেছে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটি।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফিতে (টাইপ-১) আক্রান্ত শিশুটির জন্য ১৬ কোটি টাকা দামের বিদেশি ইঞ্জেকশনের প্রয়োজন। তবে যে সংস্থা ওই ইঞ্জেকশন পাঠাবে, তারা আপাতত নয় কোটি টাকাতেই তা দিতে রাজি হয়েছে। বাকি টাকা পরে মেটাতে হবে। সব ঠিক থাকলে দিন পনেরোর মধ্যে আমেরিকা থেকে ওষুধ এসে পৌঁছবে। তার পর কলকাতায় ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্মিকাকে ওই ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে।
রানাঘাট শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে স্বামী বিবেকানন্দ সরণীতে বাড়ি অস্মিকাদের। তার বাবা শুভঙ্কর দাস আগে একটি সাইবার ক্যাফেতে কাজ করতেন। ২০২২ সালে লক্ষ্মী সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। অস্মিকার জন্ম গত বছর ৯ জানুয়ারি। বাড়িতে শুভঙ্করের বৃদ্ধ বাবা-মাও আছেন। আগে তিনি একটি সাইবার ক্যাফেতে কাজ করতেন, সেই কাজটিও গিয়েছে। প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক বাবার অবসরকালীন উপার্জন ও আত্মীয়দের সাহায্যে সংসার চলছে।
এই পরিবারে বড় দুর্দিন ঘনিয়ে আসে বছরখানেক আগে। অস্মিকার জন্মের মাস চারেক পরে বোঝা যায়, সে আর পাঁচটা শিশুর মতো নড়াচড়া করতে পারছে না। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানান, সে বিরল রোগে আক্রান্ত। প্রায় ১৬ কোটি টাকা দামের ‘জোলজেন্সমা’ ইঞ্জেকশন দিলে তবেই এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব। তবে সেই ইঞ্জেকশন ভারতে মেলে না।
এর পর শুরু হয় চাকা জোগাড় করার লড়াই। মঙ্গলবার শুভঙ্কর বলেন, “মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে সমাজমাধ্যমে আবেদন জানিয়েছিলাম। বহু মানুষ এগিয়ে এসেছেন।” তার মধ্যে সঙ্গীত শিল্পী, রাজনৈতিক নেতানেত্রী, অভিনেতা-অভিনেত্রী অনেকেই রয়েছেন। কিন্তু এত দিন নয় কোটি টাকাও পুরোপুরি তোলা যায়নি।
শুভঙ্কর জানান, এর মধ্যে আবার কিছু দিন আগে মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছয় যে ১৬ কোটি টাকা সংগ্রহ হয়ে গিয়েছে। তিনি আবার ভিডিও-বার্তা দিয়ে সেই ভুল ভাঙান। সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে ‘মাতৃ সেনা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর তরফে তাঁদের সাহায্যের চেক দেওয়া হয়। শুভঙ্কর বলেন, “কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাকি রয়েছে। আশা করছি, তার পরেই মেয়েকে ওই ইঞ্জেকশন দেওয়া যাবে। তবে তার পরেও নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যেই রাখতে হবে। বাকি টাকাটাও জোগাড় করতে হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)