E-Paper

আটক গরু, মোষ নিয়ে আতান্তরে খোঁয়াড় মালিক

সাগরদিঘি থানার ভাটাপাড়া গ্রামে বাড়ি বছর পঞ্চাশের মহম্মদ সোবিবুল শেখের। ছেলে ঠিকাশ্রমিকের কাজ করে সামান্য কিছু টাকা আয় করেন।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৩১
খোঁয়াড়ে গবাদি পশু।

খোঁয়াড়ে গবাদি পশু। নিজস্ব চিত্র।

খোঁয়াড় ভর্তি গরু। তবু মাথায় হাত সোবিবুল শেখের। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘গাই গরু হলেও একটা কথা ছিল। দু’বেলা দুধ বিক্রি করে কিছু টাকা পাওয়া যেত!’’ কিন্তু হার জিরজিরে দু’ ডজন বলদ আর এক ডজনেরও বেশি মোষ নিয়ে এখন আতান্তরে পড়েছেন তিনি। এই ‘যন্ত্রণা’ থেকে মুক্তি পেতে তিনি হন্যে হয়ে ঘুরছেন থানার দারোগা বাবুদের কাছে।

সাগরদিঘি থানার ভাটাপাড়া গ্রামে বাড়ি বছর পঞ্চাশের মহম্মদ সোবিবুল শেখের। ছেলে ঠিকাশ্রমিকের কাজ করে সামান্য কিছু টাকা আয় করেন। তাতে সংসার টানাটানি চলছিল। তাই গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে একটি খোঁয়াড় তিনি নিয়েছেন ইজারায়। আশপাশের গরু, ছাগল ফসল খেলে খোঁয়াড়ে দিয়ে যান জমির মালিকেরা। পরে সেই গরু-ছাগলের মালিক গিয়ে গুনাগার দিয়ে ছাগল, গরু ছাড়িয়ে নিয়ে যান। এ ভাবেই চলছিল মোটামুটি। কিন্তু এখন পড়েছেন বিপদে। সোবিবুল জানান, সাগরদিঘি থানার পুলিশের হাতে সম্প্রতি ধরা পড়েছে পাচারের জন্য নিয়ে আসা ২৬টি গরু ও ১৪টি মোষ। সেই ৪০টি পশুর আশ্রয় হয়েছে সোবিবুলের খোঁয়াড়ে।

মোটা আয়ের সুযোগ পেয়ে প্রথম দিকে ফূর্তিতেই ছিলেন সোবিবুল। ভেবেছিলেন, কয়েক দিন পরেই মালিক এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন খোঁয়াড়ের গরু। মিলবে মোটা টাকা।

কিন্তু দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও গরুর মালিকের আর দেখা নেই। প্রতিদিন গরুর খাবারের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে প্রাণান্তকর অবস্থা তাঁর। গত দেড় মাসে ঋণ বেড়েছে। বেচতে হয়েছে স্ত্রীর কানের দুল। কিন্তু আর চালাতে পারছেন না সোবিবুল।

গত দু’সপ্তাহে একটি একটি করে মারা গিয়েছে তিনটি গরু। একটি অসুস্থ। মৃত গরু মাটিতে পুঁততেও খরচ হয়েছে ৪০০ টাকা।

সোবিবুলের কথায়, “গরুর খাওয়া ও খোঁয়াড়ের খরচ ধরে ইতিমধ্যে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা শেষ। প্রতিদিন চারটি করে রাখালকে পশুগুলিকে চরানোর জন্য মজুরি দিতে হয় ৬০০ টাকা করে। পশু চুরি গেলে দায় আমার। তাই রাতে খোঁয়াড় আগলাতে রাখতে হয়েছে আরও দু’জনকে। বাড়িতে গরুর খাবার কেনার কথা শুনলে এখন রে রে করে উঠছেন স্ত্রী।’’

সোবিবুলের কথায়, “যখনই থানায় যাই, দারোগাবাবুরা বলেন, আরও দু’দিন সবুর করো। আদালত থেকে আদেশ পেলেই সব গরু নিলাম করে বিক্রি করে টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। গরুর খাওয়া ও খোঁয়াড়ের খরচ ধরে আমার পাওনা ৭ লক্ষ টাকার বেশি। যাঁদের গরু ও মোষ ধরেছিল পুলিশ, দু’বেলা খোঁয়াড়ে আসেন তাঁরা। গরু, মোষের হাল দেখে তারা জানিয়ে দিয়েছেন, খোঁয়াড়ের মাশুলের টাকা দিয়ে দ্বিগুণ সংখ্যাক গরু কেনা যাবে। তাই তাঁরা গরু ছাড়াবেন না।’’ জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রবীর মণ্ডল বলেন, “আদালতে মামলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ ছাড়া কিছু করার নেই পুলিশের। নিলাম হলে ওই ব্যক্তিকে পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sagardighi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy