Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Madhyamik Examination 2024

সন্তানের জন্ম দিয়েই মাধ্যমিকে

মঙ্গলবার ওই কিশোরীর বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং যেখানে পরীক্ষা কেন্দ্র পড়েছিল সেখানকার প্রধান শিক্ষকের তৎপরতায় বহরমপুরের কর্ণসুবর্ণ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সে পরীক্ষা দিয়েছে।

কর্ণসুবর্ণ হাসপাতালে পরীক্ষা দিচ্ছে কিশোরী।

কর্ণসুবর্ণ হাসপাতালে পরীক্ষা দিচ্ছে কিশোরী। —নিজস্ব চিত্র।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৯
Share: Save:

মুর্শিদাবাদে নাবালিকা বিয়ে নতুন কিছু নয়। যে বয়সে মেয়েদের বইয়ের ব্যাগ কাঁধে করে বিদ্যালয় যাওয়ার কথা, সেই বয়সের মেয়েদের অভিভাবকেরা বিয়ে দিচ্ছেন। যার জেরে মুর্শিদাবাদের একটি বড় অংশের ছাত্রীরা নাবালিকা বয়সে মা হয়ে পড়ছে। বারে বারে সেই চিত্র উঠেছে মুর্শিদাবাদের আনাচ কানাচে। গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সে দিন রাতেই সন্তান প্রসব করে সুতির এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। আর তার পরের দিন হাসপাতালের শয্যায় বসে ইংরেজি পরীক্ষা দিয়েছে ওই নাবালিকা। ফের সন্তান প্রসবের ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে হাসপাতালের শয্যায় বসে মাধ্যমিকের ভূগোল পরীক্ষা দিল বহরমপুরের এক কিশোরী। মঙ্গলবার ওই কিশোরীর বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং যেখানে পরীক্ষা কেন্দ্র পড়েছিল সেখানকার প্রধান শিক্ষকের তৎপরতায় বহরমপুরের কর্ণসুবর্ণ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সে পরীক্ষা দিয়েছে।

ওই কিশোরীর বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জানান, প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে এ দিন সকালে কর্ণসুবর্ণ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওই পরীক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ বছর সতেরোর ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার খবর পেয়ে আমি তার পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ও ভাল ভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ফের পরীক্ষা রয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই পরীক্ষার্থীর কবে বিয়ে হয়েছে আমরা জানতে পারিনি। পরীক্ষার সময়ে সন্তান হওয়ার কথা সামনে আসতেই তা আমরা জানতে পারলাম।’’ বেলডাঙা ২ ব্লকের যে বিদ্যালয়ে তার পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছিল সেখানকার প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘ঘটনার খবর পেয়ে সব ধরনের অনুমতি নিয়ে আমরা হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা নিয়েছি। ও আমাদের জানিয়েছে ভাল পরীক্ষা দিয়েছে। আমি ওই পরীক্ষার্থীকে বললাম তোমার ছেলের নাম মাধ্যমিক রাখলাম।’’

ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এ দিন জানিয়েছে, বাবা ছোট থেকেই বিশেষ ভাবে সক্ষম। ফলে তিনি ট্রাইসাইকেলে করে চলাফেরা করেন। জমি জায়গাও কম রয়েছে। ফলে বছর তেইশের দাদা পড়াশোনা ছেড়ে বিহারে জিনিসপত্র ফেরি করে সংসারের হাল ধরেছেন। এই পরিস্থিতি গত বছরই বাবা মা ও দাদা বিয়ে দেন। নাবালিকা বলে, ‘‘তাঁদের ইচ্ছাতেই বিয়ে করেছি। আমার স্বামীও দাদার সঙ্গে বিহারে ফেরি করেন। এ দিন পরীক্ষা ভাল হয়েছে। আগামীতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই।’’

মাস দুয়েক আগে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চব্বিশ ঘণ্টায় ১১ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসতেই নাবালিকা মায়ের তথ্য সামনে চলে আসে। সেখানকার শিশু মৃত্যুর ঘটনার তথ্যের পর্যালোচনা করতে গিয়ে বাল্যবিবাহের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তদন্তকারীদের সামনে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে যত গর্ভবতী মা ভর্তি হন তার ১৮-২০ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নীচে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে বলছে, মুর্শিদাবাদ জেলায় বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার মহিলা মা হন। তার মধ্যে ৩৫ হাজার থেকে ৪১ হাজার মা নাবালিকা। অর্থাৎ জেলার ২২-২৬ শতাংশ নাবালিকা মা হচ্ছে। যার জেরে তারা যে সন্তান প্রসব করে তাদের ওজন অনেক ক্ষেত্রে যেমন কম হচ্ছে, তেমনই শিশু অপুষ্ট হচ্ছে।

এত নাবালিকার বিয়ে হলেও আটকানো হচ্ছে না কেন? প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, এটা সামাজিক ব্যাধি। তা আটকাতে লাগাতার সচেতন করা হচ্ছে। আলোচনা, সচেতন করা, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দিন পনেরো আগেই বহরমপুরে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে ‘রাষ্ট্রীয় কিশোর স্বাস্থ্য কার্যক্রমে’র কাউন্সিলর, জেলা শিশু সুরক্ষা দফতর, জেলা শিশু সুরক্ষা কমিটি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে নিয়ে কর্মশালা হয়েছে। সেদিন বাল্য বিবাহ আটকাতে কাউন্সিলরদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্যাল বলেন, ‘‘জেলায় ২২-২৬ শতাংশ নাবালিকা মা হয়ে যাচ্ছে। নাবালিকা মা হওয়া আটকাতে এবং নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে আমরাও নানা পদক্ষেপ করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suti
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE