কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি সংশোধিত ওয়াকফ আইন পাস করেছে। প্রতিনিয়ত ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভারতীয়েরা সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। মনে রাখতে হবে, আমাদের আন্দোলন বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে। সেই আন্দোলন করতে হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।
আন্দোলন যত শান্তিপূর্ণ ও দীর্ঘজীবী হবে, আন্দোলন তত মজবুত হবে। আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, আমাদের আন্দোলন পুলিশ-প্রশাসন বা অমুসলিমদের বিরুদ্ধে নয়। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। কোনও সরকারি সম্পদ নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সরকারি সম্পদ মানেই আপনার আমার সম্পদ। আমি মনে করি কোনও প্রকৃত মুসলিম কখনওই কারও সম্পত্তি নষ্ট করেন না বা করবেনও না।
কিন্তু অনেক মানুষ নামের অমানুষ আছে যারা আপনার আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য পায়ে পা দিয়ে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু আপনাকে সাবধান থাকতে হবে। ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আপনার একটি ভুলের জন্য ইসলাম ধর্ম কলুষিত হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু মিডিয়া এবং কিছু মানুষ নামের অমানুষ রাজনীতির স্বার্থে মানবতা বিলীন করে দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। অথচ ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় এক জন ব্যক্তিকে হত্যা করা মানে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করা। যে ব্যক্তি মানবজাতির উপরে দয়া করে না তার উপরে আল্লাহ দয়া করবেন না। যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খায় আর তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকে সে পরিপূর্ণ ইমানদার হতে পারে না। ইসলাম আরও বলে, তোমাদের মধ্যে যার চরিত্র অতি সুন্দর, সেই ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে উত্তম।
মূল কথা, ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাসের কোনও সম্পর্ক নেই। সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদীদের কোনও ধর্ম হয় না। আমি ইসলাম ধর্ম নিয়ে যতটুকু পড়াশোনা করেছি, ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, মানুষের পাশে দাঁড়ানো, প্রতিবেশীদের হক আদায় করা, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো, অসুস্থ মানুষকে দেখা, দেশকে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। আমার এটাই বিশ্বাস যে, ইসলাম ধর্ম যেমন কোনও মানবতাবিরোধী কাজকে সমর্থন করে না, তেমন অন্য ধর্মও মানবতা বিরোধী সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না। আমি নিজে এক জন মাদ্রাসার শিক্ষক হয়ে নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে হিন্দু ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করেছি। এ ছাড়াও অনেক অমুসলিমকে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে রক্ত দিয়ে তাঁদের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করেছি। আমাদের বিশ্বাস আল্লাহর সৃষ্ট জীবের প্রতি যখন আমরা দয়া করব, আল্লাহ নিজে আমাদের প্রতি দয়া করবেন।
কাশ্মীরে হামলা করে জঙ্গিদের দু’টি লাভ হতে পারে। এক, কাশ্মীরিদের পেটে লাথি মারা। দুই, ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে দুর্বল করা। সবগুলোই মুসলিমদের বিরুদ্ধে।
তা হলে কাশ্মীরের মুসলিমরা নিজের ক্ষতি নিজে করবে কিভাবে? মনে হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এখন যেহেতু এনএআই-এর হাতে তদন্ত চলছে, আমি দাবি করব, প্রকৃত জঙ্গিদের ধরা হোক এবং জঙ্গিদের সঙ্গে যারাই জড়িত হোক না কেন, তাদের কঠোর শাস্তিদেওয়া হোক।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)