পহেলগামে বৈসরণে যখন সন্ত্রাসবাদী হামলা হচ্ছে আমরা তখন ঘটনাস্থলের কাছেই একটি শিবমন্দিরে পুজো দিচ্ছিলাম। ঘটনার সময় আমাদেরও ঘটনাস্থলে থাকার কথা ভেবে এখনও শিউরে উঠছি। আতঙ্কে গত রাতে ঘুম আসেনি।
গত ১৫ এপ্রিল স্বামী সুদীপ্ত দাসের সাথে হনিমুন করতে আমরা কাশ্মীর এসেছিলাম। নানা জায়গা ঘুরে ২১ এপ্রিল একটি গাড়ি ভাড়া করে পহেলগামে পৌঁছই। পরদিন ২২ তারিখ ওই গাড়ি নিয়েই আরু ভ্যালি, বেতাব ভ্যালি, চন্দনওয়ারি ঘুরে পৌঁছই মিনি সুইজারল্যান্ড-এ। সেখান থেকে যাওয়ার কথা ছিল সেই ভ্যালিতে যেখানে গতকাল ভয়ানক সন্ত্রাসবাদী হামলা ঘটেছে। কিন্তু ওখানে গাড়ি যাবে না। ঘোড়ায় করে যেতে হবে শুনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই আমরা। ওখানে না গিয়ে স্থানীয় এক শিবমন্দিরে গিয়ে সবে প্রণাম সেরেছি। দেখি গাড়ির চালক জাহিদ ছুটে এসে আমাদের বলছে, "এক্ষুনি হোটেল ফিরে যেতে হবে। একটা বড় ‘মসলা’ (ঘটনা) হয়ে গিয়েছে এখানে।"
গাড়িতে হোটেল মিনিট কুড়ির পথ। হোটেলে পৌঁছনোর পরে সেখানে ছিলাম মিনিট পনেরো। ওখান থেকে শ্রীনগরের বাসিন্দা প্রতি বছর কৃষ্ণনগরে শাল বিক্রি করতে যাওয়া দীর্ঘদিনের পরিচিত বরকত উল্লাকে ফোন করে সুদীপ্ত। উনি তখনই তাঁর বাড়িতে চলে আসতে বলেন আমাদের। আমরা ওই গাড়ি করেই ফিরে আসি শ্রীনগর। যে পথে পহেলগাম গেছি, ফেরার সময় সে পথে দেখি সামরিক বাহিনীর তৎপরতা। আকাশে উড়ছে সেনা হেলিকপ্টার। শ্রীনগরের শালিমার গার্ডেনে যখন এসে পৌঁছলাম তখন সন্ধ্যে নেমেছে। অন্যদিন এ সময় সব দোকান বাজার খোলা থাকে। সেদিন সব বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছিল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় কাউকে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। বার বার বন্ধু পরিজনদের ফোন আসছে ‘কেমন আছি’ জানতে চেয়ে? অপেক্ষায় আছি বাড়ি ফেরার।
অনুলিখন: সুদীপ ভট্টাচার্য
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)