Advertisement
E-Paper

ঘরে ফিরলেন ‘অপহৃত’ টুম্পা

পুলিশ মুখে কুলুপ আটলেও কংগ্রেসের অপহৃত সদস্য টুম্পা মার্জিতকে উদ্ধার করে তাঁকে তাঁর বাবার বাড়ি পৌঁছে দিল পুলিশই। সোমবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ নবগ্রামের আমজুয়া গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে তপসিলি জাতির ওই মহিলাকে ‘অপহরণ’ করা হলেও মঙ্গলবার রাত একটা নাগাদ পুলিশ নবগ্রামের বাঘিরাপাড়ায় তাঁকে তাঁর বাবার বাড়িতে রেখে আসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০০:১৪

পুলিশ মুখে কুলুপ আটলেও কংগ্রেসের অপহৃত সদস্য টুম্পা মার্জিতকে উদ্ধার করে তাঁকে তাঁর বাবার বাড়ি পৌঁছে দিল পুলিশই। সোমবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ নবগ্রামের আমজুয়া গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে তপসিলি জাতির ওই মহিলাকে ‘অপহরণ’ করা হলেও মঙ্গলবার রাত একটা নাগাদ পুলিশ নবগ্রামের বাঘিরাপাড়ায় তাঁকে তাঁর বাবার বাড়িতে রেখে আসেন। অপহরণের ঘটনা অবশ্য কংগ্রেসের সাজানো বলে দেখাতে চেয়ে পুলিশের সাজানো বয়ান মতো তাঁর কাছ থেকে পৃথক দু’টি কাগজে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অপহৃতার দাবি।

টুম্পাদেবী বলেন, ‘‘স্বামীর কাছ থেকে আমাকে অপহরণ করার সময় থেকে বাবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সময় পর্যন্ত আমার চোখ ও মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখেছিল দু্ষ্কৃতীরা। বাবার বাডিতে পৌঁছনোর আগে পুলিশ আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়, স্বামী-স্ত্রীর অশান্তির জেরে আমি স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছিলাম।’’ তাঁর দাবি, স্বামী তাঁকে ফিরিয়ে নিতে থানায় না আসায় তাঁকে বাবার বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেন বলে পৃথক আরও একটি কাগজে লিখিয়ে নেয়। তিনি পুলিশের চাপে ওই মিথ্যা কথা লিখতে বাধ্য হয়েছেন।

এ ব্যাপারে অবশ্য নবগ্রাম ও খড়গ্রাম থানার পুলিশ, কান্দির এসডিপিও এবং মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ফলে তাঁদের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

অন্য দিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী এখন অপহরণ মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি এ জেলার তৃণমূলের দায়িত্ব নেওয়ার পর কান্দি, লালবাগ ও খড়গ্রাম মিলে তিনটি অপহরণের ঘটনা ঘটল। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটে জিততে না পারায় পুলিশের সহায়তায় পুরসভা ও পঞ্চায়েত দখল করার জন্য মা-মাটি-মানুষের সরকার ও দল এখন অপহরণের রাস্তায় নেমেছে।’’

টুম্পাদেবীও বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা কাপড়ে মুখ ঢেকে থাকায় তাদের চিনতে পারিনি। কিন্তু অপহরণের পর তারাই আমাকে দলবদলের জন্য চাপ দেয়।’’ অধীর চৌধুরী ও টুম্পদেবীর অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘কাউকেই অপহরণ করা হয়নি। সবায় স্বেচ্ছায় দলবদল করেছেন। ফলে একের পর এক পুরসভা ও জেলাপরিষদ কংগ্রেসের হাতছাড়া হচ্ছে। পায়ের তলা থেকে রাজনৈতিক মাটি সরে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে অপহরণের মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন অধীর চৌধুরী।’’

তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলা নেতৃত্বের অজান্তেই স্থানীয় নেতৃত্বের উদ্যোগে অপহরণের ঘটনা ঘটায় দুই তরফের দ্বন্দ্বের জেরে টুম্পাদেবীরকে দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অসুস্থতার কারণে টুম্পাদেবীকে বুধবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

খড়গ্রাম থানা এলাকার সাদল গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন সংখ্যা ১৮। তার মধ্যে পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস ১৬টি এবং সিপিএম ২টি আসন দখল করে। ফলে ওই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করে কংগ্রেস। তপসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত প্রধান পদে নির্বাচিত হন মাধব মার্জিত। সম্প্রতি মাধব-সহ কংগ্রেসের ৮ জন এবং সিপিএমের ২ জন দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দেন। গত ৫ জুলাই প্রধান মাধব মার্জিত গুলিবিদ্ধ হন। অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কয়েকদিন পর মাধব মার্জিত মারা গেলে আগামী ৩০ অগস্ট প্রধান নির্বাচনের জন্য দিন ধার্য হয়। কিন্তু জীবিত ১৭ জন সদস্যের মধ্যে কংগ্রসের টুম্পাদেবীই একমাত্র তপসিলি জাতির সদস্য। ফলে তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও পঞ্চায়েত আইন অনুসারে কংগ্রেসের টুম্পাকেই প্রধান পদে নির্বাচিত করতে হবে। তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই কারণেই, জেলা নেতৃত্ব-কে না জানিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের উদ্যোগে টুম্পাকে অপহরণ করা হয়। তার বিরুদ্ধে পথে নেমে মঙ্গলবার অধীর চৌধুরী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলে তৃণমূলের টনক নড়ে। তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘এ কারণে জেলা নেতৃত্ব তৃণমূলের কান্দি মহকুমা সভাপতি গৌতম রায় ও খড়গ্রাম ব্লক সভপতি আবুল কাশেমকে মান্নান হোসেন মঙ্গলবার ফোনে ভর্ৎসনা করেন।’’

গৌতম রায় বলেন, ‘‘ঠিক ভর্ৎসনা নয়, আমি দলের মহকুমা সভাপতি হওয়ায় জেলা সভাপতি টুম্পার বিষযে জানতে চেয়েছিলেন।’’ আবুল কাশেমও বলেন, ‘‘খড়গ্রামের ঘটনা বলে দলের জেলা সভাপতি ওই ঘটনার বিষয়ে জানাতে চেয়েছিলেন।’’ মান্নান হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘টুম্পার বিষয়ে কিছু জানা থাকলে পুলিশ প্রশাসনকে সহায়তা করতে আমি ওঁদের বলেছিলাম।’’

Abduction Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy