Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Acid Attack

acid attack: অ্যাসিডে দগ্ধ তরুণী, অবস্থা আশঙ্কাজনক

দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২১ ০৬:৪২
Share: Save:

খোলাবাজারে অ্যাসিড বিক্রির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ, আন্দোলন, একাধিক মামলা এবং সরকারি নিয়মবিধি থাকা সত্ত্বেও তা আটকনো যাচ্ছে না। গত বুধবার ফের অ্যাসিড-হামলার ঘটনা ঘটল কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণি এলাকায়।

দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম অবস্থায় ওই কিশোরীকে প্রথমে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছাত্রীটির দু’টি চোখই মারাত্মক জখম হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। হামলা ঠেকাতে গিয়ে অ্যাসিডে জখম হয়েছেন ওই ছাত্রীর বাবা ও পাড়ার চার যুবক। তাঁদের অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনায় ছাত্রীর প্রাক্তন স্বামী অচিন্ত্য শিকারী-সহ শ্বশুর বাড়ির পাঁচ জনের বিরুদ্ধে কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করে হয়েছে। বৃহস্পতিবর সন্ধ্যায় হাঁসখালি বাজার থেকে গ্রেফতার হন অভিযুক্ত অচিন্ত্য। তাঁকে যিনি অ্যাসিড বিক্রি করেছিলেন সেই চিরঞ্জিৎ পাত্রকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

চিরঞ্জিৎ হলেন অচিন্ত্য-র বন্ধু। তাঁর সোনার দোকান রয়েছে। সেখানে কাজের জন্য অ্যাসিড ব্যবহৃত হয়। মাসখানেক আগে তাঁর কাছ থেকেই এক বোতল অ্যাসিড নিয়েছিলেন অচিন্ত্য। চিরঞ্জিতের দাবি, তাঁকে অচিন্ত্য জানিয়েছিল, বাড়ির কিছু গহনা পরিষ্কার করার জন্য অ্যাসিড দরকার। তাই তিনি দিয়েছিলেন। চিরঞ্জিতের দোকান থেকে পুলিশ দু’বোতল অ্যাসিড পেয়েছে। কিন্তু তিনি অ্যাসিড সঞ্চয় ও বিক্রির কোনও লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। বিক্রি ও সঞ্চয়ের কোনও রেকর্ডও তাঁর কাছে ছিল না।

প্রশ্ন উঠেছে, কোন কোন সোনার দোকানে এমন ভাবে যথেচ্ছ অ্যাসিড ব্যবহার হচ্ছে বা কেনাবেচা হচ্ছে তা নিয়ে কতটুকু নজরদারি হয়? আদৌ হয় কী? যদি হয়ে থাকে তা হলে এত সহজে ওই যুবকের হাতে অ্যাসিড এল কী ভাবে? কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পাল বলেন, “নজদারি সব সময়ই চলে। তবে ওই যুবকের হাতে কী ভাবে অ্যাসিড এল, তা তদন্তে জানা যাবে।”

অ্যাসিড-আক্রান্ত ছাত্রীর বাড়ি ঘূর্ণিতেই। সে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে। পাড়ার ছেলে অচিন্ত্য শিকারীর সঙ্গে বছর তিনেক আগে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল সে। মাস তিনেক পর অচিন্ত্য মালয়েশিয়ায় কাজে চলে যান। তার পর থেকেই তিনি স্ত্রীকে সন্দেহ করতে শুরু করেন। স্ত্রী কারও বাড়ি গিয়েছে, কারও সঙ্গে কথা বলেছে জানলেই প্রবল অশান্তি করতেন ফোনে। তাতে তিতিবিরক্ত বয়ে ওই পড়ুয়া বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়।

অভিযোগ, বছর দু’য়েক পর অচিন্ত্য বাড়ি ফিরে ওই ছাত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তাঁদের আইনি ভাবে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় দুই পরিবারের আত্মীয়দের সম্মতি নিয়ে। তারপরও নিস্তার মেলেনি। ক্রমাগত প্রাক্তন স্ত্রীকে উত্যক্ত করা শুরু করেন অচিন্ত্য। ইতিমধ্যে ওই ছাত্রী আবার পড়াশোনা শুরু করেছে। বুধবার রাতে হালদারপাড়া এলাকায় গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে টিউশন সেরে সে ফিরছিল। বাড়ির কাছেই কুমার সঙ্ঘের মাঠে লুকিয়ে ছিলেন অচিন্ত্য। অভিযোগ, আচমকা লাফিয়ে সামনে এসে তিনি ছাত্রীটির হাত ধরে টানাটানি শুরু করেন এবং মারতে থাকেন। কোনওমতে ওই কিশোরী দৌড়ে পাড়ার ক্লাবের ভিতরে ঢুকে যায়। সেখানে তার বাবা ও চার জন স্থানীয় যুবক ছিলেন। অভিযোগ, তাঁরা কিছু বোঝার আগেই মেয়েটির পিছু ধাওয়া করে এসে চুলির মুঠি ধরে তার মুখে ও মাথায় অ্যাসিড ঢেলে দেন অচিন্ত্য। তার পর পালিয়ে যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Acid Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE