Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
thief

Thief: মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে চুরি, যাওয়ার সময় প্রণাম করে হাতে দু’শো টাকা দিয়ে গেলেন দুই চোর

ফরাক্কার ব্যারাজ আবাসনে থাকেন হরিশ্চন্দ্র রায়। তিনি ফারাক্কা ব্যারাজ হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক। সোমবার তাঁর বাড়িতে হানা দেয় চোর।

শিক্ষকের সর্বস্ব লুট করে ‘সাহায্য’।

শিক্ষকের সর্বস্ব লুট করে ‘সাহায্য’। প্রতীকী চিত্র।

প্রণয় ঘোষ
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২২ ১৮:৩৬
Share: Save:

চুরি না শ্রদ্ধার্ঘ্য, কোনটা মহাবিদ্যা? সোমবার রাতের পর জীবনের সব শিক্ষা গুলিয়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার বাসিন্দা তথা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হরিশ্চন্দ্র রায়ের। বাড়ি থেকে সর্বস্ব চুরি করে তাঁর হাতে ২০০ টাকার একটি নোট ধরিয়ে দিয়েছেন দুই ‘দানবীর’ নিশিকুটুম্ব। যাতে পর দিন বাজার করতে পারেন তিনি!

ঘরে ঢুকে অস্ত্র দেখিয়ে প্রথমে হিন্দিতে ধমকধামক দিয়েছিলেন দুই চোর। চলে যাওয়ার সময় অবশ্য তারা বিনয়ের অবতার! প্রাক্তন প্রধানশিক্ষকের পায়ে প্রণাম করে দুই তস্কর তাঁর পাশে থাকার বরাভয়ও দিয়েছেন।

ফরাক্কার ব্যারাজ আবাসনে থাকেন হরিশ্চন্দ্র। তিনি ফরাক্কা ব্যারাজ হাইস্কুলে প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক। স্কুলে থাকাকালীন বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত হরিশ্চন্দ্রের নামে। সোমবার রাতে তিনি এবং তাঁর ভাই খাওয়াদাওয়া সেরে বসেছিলেন। দরজা খোলা ছিল। আচমকা সেই ঘরে ধারালো অস্ত্র হাতে ঢোকেন দুই যুবক। তাঁদের মুখ ঢাকা ছিল। ঘরে পা রেখেই দুই যুবক হাঁক দেন, ‘‘কেয়া হ্যায় ঘরমে, নিকালো!’’ ডাকাত পড়েছে বুঝে বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করেননি হরিশ্চন্দ্র। তাঁর ভাই প্রতিবাদ করেছিলেন সামান্য। কিন্তু দুই যুবক তাঁকে শৌচাগারের মধ্যে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে শিকল এঁটে দেন। এর পর আর টুঁ শব্দ করার সাহস পাননি এক সময়ের বাঘা শিক্ষক হরিশ্চন্দ্র। গুটি গুটি পায়ে আলমারি খুলে ১৫ হাজার টাকা বার করে দুই যুবকের হাতে তুলে দেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। দুই যুবক বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দু’টি মোবাইল নিয়ে নেন বলেও অভিযোগ।

ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয় দুই যুবক বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়। তাঁদের মধ্যে এক জন আচমকাই হরিশ্চন্দ্রের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন। দুই চোরের এত ‘ভক্তি’ দেখে বুকে কিছুটা বল ফেরে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকেরও। তিনি পাল্টা বলেন, ‘‘বাবারা, তোমরা যদি বাজার করার জন্য কিছু টাকা দাও তা হলে ভাল হয়।’’ তখন চুরির টাকা থেকে ২০০ টাকার একটি নোট অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের হাতে তুলে দেন এক চোর। আবার এক বার প্রণাম করে বলেন, ‘‘আপাতত এটা রাখুন। চিন্তা করবেন না।’’ এর পর তারা চম্পট দেন।

‘চিন্তা’র আর বিশেষ কিছু নেই দেখে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক। তবে দুই চোরের ‘ভক্তি’তে বিস্মিত হরিশ্চন্দ্র। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেও, উদাসীন গলায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘সবাই তো আর ইচ্ছে করে চোর হয় না। হয়তো পরিস্থিতি বাধ্য করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

thief Teacher Stealing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE