E-Paper

আমাদের দুটো যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল

টিভির পর্দায় ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের পরিস্থিতি দেখতে দেখতে সেদিনের কথা মনে পড়ে গেলে শিউরে ওঠেন তাঁরা।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৫ ০৮:৫২
পরিমল তপাদার।

পরিমল তপাদার। নিজস্ব চিত্র।

সেনা ট্রাকের ইঞ্জিনের ঘড় ঘড় শব্দ রাতের নিস্তব্ধতা ফালাফালা করে দেয়। সীমান্তের শিবিরগুলো থেকে একের পর এক শরণার্থী বোঝাই ট্রাক এসে দাঁড়ায় ধুবুলিয়ার উদ্বাস্তু শিবিরে। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ ট্রাক থেকে নেমে উদভ্রান্তের মতো সেই অন্ধকারের দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকেন। এরা সকলেই একেবারে নিঃস্ব হয়ে চলে আসা ওপার বাংলার মানুষ। নিরন্ন-অসহায় মানুষগুলোর তখন একটাই চাহিদা, নিরাপত্তা। একাত্তরের যুদ্ধের ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতা আজও তাঁদের আজও তাড়িয়ে বেড়ায়।

টিভির পর্দায় ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের পরিস্থিতি দেখতে দেখতে সেদিনের কথা মনে পড়ে গেলে শিউরে ওঠেন তাঁরা। এঁদেরই একজন বছর একাশির পরিমল তফাদার। বারান্দায় মলিন চেয়ারটার হাতলে দু’বার হাত ঠুকে বলেন, “বড্ড কঠিন ছিল সেই দিনগুলো। শরণার্থী শিবিরে তখন লক্ষ মানুষের ভিড়। পাশেই বাংলাদেশ সীমান্ত। মাথার উপর দিয়ে উড়ে যেত যুদ্ধবিমান। ভয়ে কুঁকড়ে যেতাম আমরা। বুঝতে পারতাম না সেই বিমান আমাদের দেশের না পাকিস্তানের। খুব আতঙ্কে থাকতাম, যদি বোমা ফেলে?”

তবে বিশ্বাস ছিল, জয় ভারতেরই হবে। স্বাধীন হবে তাঁদের জন্মভূমি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আর সেখানে ফেরা হয়নি পরিমলের মতো অনেকের। বরিশাল জেলার রাজিহাস থেকে বাবা-মার সঙ্গে ছোট মামার হাত ধরে কখনও নৌকায় কখনও স্টিমারে চেপে নদী পেরিয়ে এসেছিলেন খুলনায়। সেখান থেকে ট্রেনে চেপে শিয়ালদহে। তারপর নানা জায়গায় ঠোক্কর খেতে খেতে অবশেষে ধুবুলিয়ার শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় পান। ১৯৪৯ সালের জাতিদাঙ্গার সময়ও লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে এপার বাংলায় আশ্রয় নিতে শুরু করেন। ট্রাক থেকে নামার পর সরকার থেকে তাঁদের হাতে একটা করে তাঁবু তুলে দেওয়া হত। সঙ্গে ১৪ দিন অন্তর মাথাপিছু চার টাকা ন’আনা আর দু’কেজি করে চাল। পরিমল বলেন, “সেই দিনগুলোতে আমাদের দুটো যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, ভারত-পাক যুদ্ধ আর নিঃস্ব, নিরন্ন, আশ্রয়হীন হয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ।”

সেদিন অবশ্য ‘ইন্ডিয়া’-য় ছিলেন না শোভা রায়। ছিলেন বাংলাদেশে বরিশাল জেলার গলাচিপা গ্রামে। সামনে থেকে দেখেছেন যুদ্ধের ভয়াবহতা। সেই স্মৃতি অনেকটাই ফিকে হয়েছে। তবুও যুদ্ধের কথা উঠলে চোখের সামনে দেখতে পান একজন বাংলাদেশি, সম্ভবত মুক্তিযোদ্ধাকে কোমরসমান জলে দাঁড় করিয়ে গুলি করার ঘটনা। বছর আটষট্টির শোভা বলেন, “আমি যুদ্ধকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাই যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধে দুই দেশের মানুষই মরে। আমার মৃত্যু দেখতে ভাল লাগে না।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dhubulia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy