Advertisement
E-Paper

নদিয়ায় জমে উঠেছে মাজদিয়ার নলেন গুড়ের হাট, হাঁড়ির খবর নিল আনন্দবাজার অনলাইন

গুড় প্রস্তুতকারকদের আক্ষেপ, প্রকৃত গুড়ের মূল্য দেওয়ার মতো ক্রেতা নেই। সবাই মজে রয়েছেন কৃত্রিম সুবাসে। জানা গেল, দশ থেকে বারোটি গাছের রস সংগ্রহ করলে তৈরি হয় তিন-চার কেজি গুড়।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৫১
An overview of Jaggery selling market of Majdia of Nadia district

চলছে গুড় জ্বাল দেওয়ার পর্ব। —নিজস্ব চিত্র।

একটি লম্বা ধাতব কাঠি সুড়সুড় করে ভাঁড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে সুড়ুৎ করে টেনে এনে, তালুতে রেখে জিভ দিয়ে তার স্পর্শ করে গুণগতমান পরখ করে নিতে পারেন গুড়ের জহুরিরা, সেই অনুযায়ী ঠিক হয় দাম। ভাঁড়ের মুখে সুবাসিত নলেন গুড় আর ভিতরে বাদামি ভেজাল গুড় বুঝতে পারলেই হু হু করে কমে যায় দাম। এ ভাবেই কাকভোর থেকে আড়তদারদের সঙ্গে দরকষাকষি করে সকাল ১০টার মধ্যেই গুড় কেনা শেষ হয়ে যায় শহুরে ব্যাপারীদের। ব্যাপারীদের কেনা গুড় দুপুর গড়ালেই লরি ভর্তি হয়ে বিকেলের পড়ন্ত আলোয় নদিয়ার মাজদিয়া ছেড়ে ছড়িয়ে পড়ে কলকাতা-সহ তামাম ভারতে। এমনকি ভারতের বাইরেও সুখ্যাতি রয়েছে নদিয়ার মাজদিয়ার নলেন গুড়ের।

তবে স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এই নলেন গুড় তৈরি করা যে কারও কম্ম নয়! এমনটাই বলছেন বংশপরম্পরায় গুড় তৈরিতে যুক্ত শিউলিরা। খেজুর রস থেকে নলেন গুড় তৈরি করা আদপে একটা শিল্প, আর অভিজ্ঞ শিল্পীরা জানেন, কী ভাবে কোন কায়দায় কত ক্ষণ জ্বাল দিলে তৈরি হবে রসনাতৃপ্তির আসল নলেন গুড়। একটুখানি আগুপিছু হলেই, ফুটন্ত অবস্থাতেই মারা যাবে নলেন গুড়ের স্বাদ।

শিউলিদের মতে, জিরেন কাটের নলেন গুড় স্বাদ এবং গন্ধে সর্বোত্তম। কিন্তু কী এই জিরেন কাট? নদিয়ার চাপড়ার প্রবীণ শিউলি আনসার কবিরাজ জানালেন, গাছ তৈরির পর মোটামুটি তিন থেকে চার দিন রস সংগ্রহের পর গাছকে বিশ্রাম দিতে হয়। একেই বলে জিরেন। গড়পড়তা দিন চারেক বিশ্রাম দেওয়ার পর পুনরায় মাথার কাছে ছেঁচে নিয়ে কঞ্চি ঢুকিয়ে দিলে আবার শুরু হয়ে যায় রস ঝরা। জিরেনের পর প্রথম রাতে যে রস পাওয়া যায়, তাকেই জিরেন কাটের রস বলে। অভিজ্ঞরা বলেন স্বাদ এবং গন্ধে এর মাহাত্ম্য আলাদা। বাকি রসের নাম তাত রস বা ঝরা রস, এর মিষ্টতা এবং সুগন্ধ অনেকটাই কম।

শিউলিদের আক্ষেপ প্রকৃত গুড়ের মূল্য দেওয়ার ক্রেতা নেই। সবাই এখন মজে রয়েছে কৃত্রিম সুবাসে। দশ থেকে বারোটি গাছের রস সংগ্রহ করলে তৈরি হয় তিন থেকে চার কেজি গুড়। মাজদিয়ার পাইকারি গুড় বাজারে ৫ কেজির ভাঁড় বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায়, দু’কেজির ভাঁড় বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। আর দশ থেকে বারোটি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা থেকে গুড় তৈরি পর্যন্ত খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৫০০ টাকা। অর্থাৎ, কেজি প্রতি শিউলিদের খরচ দাঁড়ায় ১০০ টাকারও বেশি, সেখানে ৮০ টাকা কেজি দরে খাঁটি গুড় কী ভাবে বিক্রি করছেন তাঁরা? এই প্রশ্ন শুনেই মুখে কুলুপ আঁটছেন আড়তদার থেকে শিউলি প্রত্যেকেই।

মাজদিয়ার এই জগদ্বিখ্যাত নলেন গুড়ের হাটের ক্রেতা কারা? মূলত কলকাতার পাইকারি ব্যবসায়ীরা, যাঁরা এখানে গুড় কিনতে আসেন। রায় ব্রাদার্স, ঘোষ ট্রেডার্স-এর মতো গুড় সরবরাহকারীরা মাজদিয়ার নলেন গুড়ের প্রধান ক্রেতা। রায় ব্রাদার্স-এর অন্যতম কর্ণধার সুবীরেশ রায় বলেন, “কলকাতার যত প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান আছে, সবেতেই আমাদের গুড় যায়। কলকাতার বাইরে দিল্লি আর মহারাষ্ট্রে ব্যবসা রয়েছে আমাদের।” কিন্তু ভারতজোড়া এই ব্যবসায় কতটা লাভের মুখ দেখছেন শিউলিরা? মাজদিয়ার শিউলি বলেন, “বছরের শুরুতেই মোটা অঙ্কের দাদন নিতে হয় আমাদের। তাই আড়তদারেদের বেঁধে দেওয়া দামেই গুড় দিতে বাধ্য হতে হয়, তাতে লাভ-লোকসান যা হয় হোক।”

jaggery majdia market Nadia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy