১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধে উত্তাল বাংলাদেশ। ভারত সরকার সে দিন পূর্ববঙ্গীয়দের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল সীমান্ত। ভিটেমাটি ছেড়ে সীমান্ত পেরিয়ে কাতারে কাতারে মানুষ চলে আসছেন এ দেশে। তাঁদের একটা অংশের ঠাঁই হয়েছিল রানাঘাট শহরের উপকণ্ঠে থাকা কুপার্সে। কুপার্সে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তৈরি সেনা ছাউনির পোশাকি নাম তখন ‘রানাঘাট ট্রানজ়িট সেন্টার’। সেখানে আশ্রয় হয় যুদ্ধের আতঙ্কে দেশ ছেড়ে আসা মানুষজনের।
আজ, প্রায় ৫৪ বছর পর ফের ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে সে দিনের সেই দিনগুলির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আশি পেরনো অশোক চক্রবর্তীর। শুধু তিনি নন, তাঁর মতো অনেকেই এখনও চোখ বন্ধ করলেই শুনতে পান সাইরেনের শব্দ। দেখতে পান, আকাশে বোমারু বিমানের আনাগোনা।
১৯৪৯ সালে অশোকবাবুর বয়স ছিল মাত্র আট বছর। দেশভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে প্রথমে বনগাঁ, সেখান থেকে কুপার্সের শিবিরে আশ্রয় নেন। শৈশব কেটেছে সেখানেই। ৭১-এর যুদ্ধের সময় অশোক তরতাজা যুবক। খুব কাছ থেকে দেখেছেন পাক সেনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হয়ে ভারতীয় সেনাকে মাঠে নামতে। তাঁর কথায়, “তখনকার জনজীবন এত উন্নত ছিল না। সন্ধ্যা নামলেই রানাঘাট স্টেশন থেকে সাইরেনের আওয়াজ ভেসে আসত। সেই আওয়াজ শুনলে বুকে কাঁপুনি শুরু হত। যে যেখানেই থাকি না কেন, নিরাপদে আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম।”
অশোকের কথায়, “মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সরকার বাংলাদেশ সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। শুধু মাত্র সেই সময় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন কুপার্স ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়। সরকার অবশ্য সেই পরিস্থিতির আগাম বন্দোবস্ত করেনি। তাই আমাদের মতো যুবকেরা সংগঠিত হয়ে ত্রাণ সংগ্রহের কাজে নেমেছিলাম।”
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রেশন ব্যবস্থাকে সামনে রেখে সে সময় ব্যাপক কালোবাজারি ঘটনাও বেশ মনে রয়েছে তাঁর। সে ছিল আর এক জ্বালা।
১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনা পরাজয় স্বীকার করে নেওযার পরে পরিস্থিতি একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। আশ্রয় শিবির থেকে অনেকেই সেই সময়ে ফিরে গিয়েছিলেন নিজের দেশে। কিন্তু শরণার্থীদের একটা বড় এই দেশেই অংশ রয়ে যান। পরে রানাঘাটের ট্রানজ়িট সেন্টার থেকে বিভিন্ন উদ্বাস্তু কলোনিতে তাঁদের ঠাঁই হয়েছে।
পহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর পরে প্রতিশোধের আগুনে ফুটছে দেশ। মঙ্গলবার মাঝরাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাক অধিকৃত কাশ্মীরে গুঁড়িয়ে গিয়েছে বেশ কিছু জঙ্গি শিবির। এখানেই কি শেষ? নাকি পুরোদস্তুর যুদ্ধ বাধবে? আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরছে অশোকবাবুর মতো একাত্তরের যুদ্ধের প্রবীণ সাক্ষীদের মনে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)