কালো রঙের ধান। চাল ছোট, মোটা দানার। মাঝারি থেকে তীব্র সুগন্ধ। পরিচয়— ‘বেঙ্গল কালোজিরা’।
গাঙ্গেয় সমভূমি ও লাল কাঁকুরে মাটিতে খরিফ মরসুমে বহুদিন ধরেই চাষ হয় দেশি সুগন্ধি এই ধান। সেই ধানই এবার ভারত সরকারের স্বীকৃতি পেল ‘কৃষকের জাত’ হিসেবে।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারি-১ ব্লকের ‘শিক্ষা নিকেতন’ দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করছে এই জাত। ২০১২, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের খামারে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে লিপিবদ্ধ হয় ধানের বৈশিষ্ট্য। গবেষকেরা জানান, এই জাত ১৪৫ থেকে ১৫৫ দিন। গাছের উচ্চতা ১৩০-১৩৫ সেমি। ফলন ২.৬ থেকে ৩.২ টন প্রতি হেক্টরে।
কালোজিরা ধান মূলত অবিভক্ত বাংলায় চাষ হত। ১৮৭৬ সালের সমীক্ষায় পাওয়া যায়, তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় এই ধান চাষ হত। আবার ১৮৭৭-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাঁকুড়া-সহ রাজ্যের কয়েকটি জেলায় এই ধান চাষের প্রচলন ছিল। সবুজ বিপ্লবের পর নতুন জাতের খোঁজে হারিয়ে যেতে থাকে এই ধরনের ধান। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১২ সালে এই ধানের বীজ সংরক্ষণ করে গবেষণার কাজ শুরু করে। শুরু হয় নিজস্ব এই জাতের বৈশিষ্ট্য চিহ্নিতকরণের কাজ। মিলেছে নিজস্ব ৬২টি গুণাবলি। পরে জাত হিসেবে নিবন্ধীকরণের জন্য পাঠানো হয় দিল্লিতে।
গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্য বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন গবেষণাগারে বার বার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে গত ৩ অক্টোবর 'প্রটেকশন অব প্লান্ট ভ্যারাইটিজ অ্যান্ড ফার্মার্স রাইট অথরিটি'-র তরফে 'কৃষকের জাত' হিসেবে নিবন্ধীকরণের শংসাপত্র পেয়েছে এই ধান।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অশোক কুমার পাত্র বলেন, “এই স্বীকৃতি বাংলার দেশি সুগন্ধি ধান সংরক্ষণে বড় পদক্ষেপ।” গবেষণা অধিকর্তা অধ্যাপক শুভ্র মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘এই সাফল্য কৃষকদের আরওউৎসাহ দেবে।’’
২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন জেলায় বেঙ্গল কালোজিরার বীজ বিতরণ, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তার মাধ্যমে কৃষকদের চাষে যুক্ত করার উদ্যোগ চলেছে। ২০২৩ সালে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উদ্বোধন হয়েছিল এই ধানের প্যাকেট।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)