Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

বাঙালির হালখাতা-সিঁদুর নেই, বর্ষবরণে করোনা-দৃষ্টি

নববর্ষের সকালে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি পরে পুরোহিতের পাশে বসে গণেশ পুজো।

 নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৫৬
Share: Save:

প্রাচীন জনপদ নবদ্বীপে নববর্ষ আসত নিজস্ব ঢঙে। গঙ্গার তীরবর্তী এই শহরের মানুষের কাছে বছরের প্রথম ভোরে গঙ্গাস্নান ছিল অবশ্যকর্তব্য। তার পর ব্যবসায়ীরা হালখাতা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কেউ পোড়ামা মন্দিরে, কেউ বা মহাপ্রভু মন্দিরে যেতেন হালখাতা দেবতার পায়ে ছুঁইয়ে আনার জন্য।

নববর্ষের সকালে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি পরে পুরোহিতের পাশে বসে গণেশ পুজো। তার শেষে লাল কাপড়ে জড়ানো হালখাতায় সিঁদুর মাখানো টাকার ছাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন বছরের প্রথম উৎসবের সুরটি বাঁধা হয়ে যেত।

আর সাধারণ গৃহস্ত বছরের প্রথম দিনে ভালমন্দ খাওয়ার জন্য সাত সকালে বাজারে ছুটতেন। বেলা গড়ালেই ভিড় বাড়ত দোকানে দোকানে দোকানে। গোটা শহর সেজে উঠত উৎসবের সাজে।

কিন্তু নববর্ষের দিনে এমন ছবি এ বার দেখা যাবে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে লকডাউনে গৃহবন্দি বাংলায় নববর্ষ এ বার কেবল কাগজেকলমে সীমাবদ্ধ। অন্য বার চৈত্রের শেষ ক’টা দিন সারা বছরের দেনা-পাওনার হিসাব মেটানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়েন ছোট-বড় সব ব্যবসাদার। খাতায় সারা বছরের লেনদেনের হিসাব পাঠিয়ে দেওয়া হয় ক্রেতার কাছে। সঙ্গে গণেশ ঠাকুরের ছবি দেওয়া হালখাতার গোলাপি চিঠি।

নবদ্বীপের প্রবীণ ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক নিরঞ্জন দাস বলেন, “এখনও সিংহভাগ ব্যবসায়ী বাৎসরিক হিসাব মেটানো হয় পয়লা বৈশাখে। এটা একটা চেন। আমি এক জনের কাছে বিক্রেতা, অন্য জনের কাছে ক্রেতা। খুচরো, পাইকার, মহাজন বা উৎপাদক সকলেই এই চেনের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং, সকলেই চেষ্টা করেন সবটা না হলেও বেশির ভাগ বকেয়া মিটিয়ে দিতে।’’

তিনি জানালেন, তেমনই সাধারণ ক্রেতাও জানেন, এই সময়ে ধার শোধ না করলে পরের বছর তিনি নিজেই অসুবিধায় পড়বেন। ফলে, কম-বেশি সকলেই ঋণ শোধ করেন।

‘‘তবে এ বার অবশ্য গণেশ পুজো বা হালখাতা কোনওটাই হবে না। কে এখন ধারের টাকা চাইবেন আর কে-ই বা দেবেন। পুরো ব্যবস্থা তালগোল পাকিয়ে গেল”— বলেন নিরঞ্জনবাবু।

তিনি নিজেও এ বার গণেশ পুজো করবেন না বলে জানিয়েছেন প্রবীণ ওই ব্যবসায়ী। তবু এ দিন সকালে দোকানের সামান্য অংশ ফাঁক করে লাল মলাটের সরু, মোটা নানা আয়তনের নতুন খাতা কেনাবেচা করতে দেখা যায় ব্যবসায়ীদের। এক রেডিমেড দোকানদার তপন সাহা বলেন, “তিন সপ্তাহ হল দোকান বন্ধ। ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা নিয়ে কিছু না বলাই ভাল। তবে দীর্ঘ দিনের নিয়ম মেনে বাড়িতে নতুন খাতা পুজো করব।” স্বর্ণ-ব্যবসায়ী সুজিত কুমার দে বলেন, “পয়লা বৈশাখে দোকান না খুললেও গণেশ পুজো করব। বাড়িতেই নমো নমো করে সেরে ফেলব।” এ দিন দু-এক জন ছাঁচের গণেশ নিয়ে বাজারে এসেছিলেন। তবে ক্রেতা তেমন ছিল না। অন্য বার নতুন খাতা নিয়ে ব্যবসায়ীরা ছোটেন মহাপ্রভু বা পোড়ামা মন্দিরে। নতুন চুড়িদার পাঞ্জাবিতে খাতা হাতে পুজোর লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রতীক্ষা করেন। সে সবই বন্ধ এ বার। কোনও মন্দির খোলা নেই। নবদ্বীপের পোড়ামা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত মানিকলাল ভট্টাচার্য বলেন, “মন্দিরে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ ঘোষণা করেছি। নববর্ষের দিনও কোনও খাতাপুজো হবে না, সেটাও নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।” একই কথা জানালেন নবদ্বীপ মহাপ্রভু মন্দিরের সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী।

অন্য দিকে, গাছপালায় ঘেরা বাগান, নদীর ধার কিংবা ছড়ানো নাটমন্দিরে বর্ষবরণের আসরে ‘এসো হে বৈশাখ’ গেয়ে নববর্ষকে আমন্ত্রণ জানানো হল না এ বার সাংস্কৃতিক কর্মীদের। লকডাউনে বন্ধ বৈশাখী আড্ডাও। তবে এ বার বিভিন্ন জায়গায় প্রস্তুতি চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্ষবরণের। ফেসবুক লাইভ বা নিজের গাওয়া গান, কবিতা আপলোড করে বর্ষবরণের অভিনব প্রস্তুতির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE