Advertisement
E-Paper

সঙ্কটে ভাগীরথী, বিপাকে গোয়ালারা

কথা ছিল, ৩০ জুন এবং ১ জুলাই এই দু’দিন দিনে দু’বার নয়— একবার দুধ কিনবে মুর্শিদাবাদের ভাগীরথী সমবায় সমিতি। ওই দু’দিন তো বটেই শুক্রবার একবেলা দুধ কিনেছে সমিতি। আর তার জেরেই চরম সমস্যায় পড়েছেন জেলার গোয়ালারা। মুখ্যমন্ত্রী যখন গ্রামীণ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন, ঠিক সেই সময়ে জেলার একমাত্র বড় দুগ্ধ সমিতি কার্যত ধুঁকছে।

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৯
দুধ বিক্রির আশায়। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

দুধ বিক্রির আশায়। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

কথা ছিল, ৩০ জুন এবং ১ জুলাই এই দু’দিন দিনে দু’বার নয়— একবার দুধ কিনবে মুর্শিদাবাদের ভাগীরথী সমবায় সমিতি। ওই দু’দিন তো বটেই শুক্রবার একবেলা দুধ কিনেছে সমিতি। আর তার জেরেই চরম সমস্যায় পড়েছেন জেলার গোয়ালারা। মুখ্যমন্ত্রী যখন গ্রামীণ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন, ঠিক সেই সময়ে জেলার একমাত্র বড় দুগ্ধ সমিতি কার্যত ধুঁকছে।

কেন এই পরিস্থিতি?

সমিতির তরফে জানানো হয়েছে, মাদার ডেয়ারি, মেট্রো ডেয়ারি ও সেন্ট্র্রাল ডেয়ারিগুলি সমবায় সমিতি ছাড়াও আরও কিছু জায়গা থেকে সম্প্রতি দুধ কিনছে। ভাগীরথীর তরফে ব্যাখ্যা, ফলে তাঁদের ‘কোটা’ কমে গিয়েছে। যার নিট ফল, গত বছর এই সময়ে মিল্ক ফেডারেশনের মাধ্যমে তাঁরা প্রায় ১৮ লক্ষ লিটার দুধ বিক্রি করেছিলেন। এ বার তা ১০ লক্ষ লিটারে নেমেছে।

এর ফলে ভাগীরথীর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলার গোয়ালারা। বাধ্য হয়ে কেউ কম দামে দুধ বিক্রি করছেন, কেউ আবার ক্ষির বানিয়ে রেখে দিচ্ছেন প্রতিবেশীর ফ্রিজে। তাঁদের প্রশ্ন, এ ভাবে আর কত দিন? দুধ রাখার জায়গা মিলছে না। এলাকায় বিক্রি করতে গেলে সুযোগ বুঝে কম দাম হাঁকছেন ক্রেতা। সকলেই চেয়ে প্রশাসনের মুখের দিকে। বিষয়টি অজানা নয় প্রশাসনের। কিন্তু, সমাধান কী ভাবে— উত্তর নেই তাঁদের কাছেও। ভাগীরথী দুগ্ধ সমিতির মুর্শিদাবাদ দুগ্ধ উৎপাদক সঙ্ঘের যুগ্ম সম্পাদক পীযূষ ঘোষ বলেন, ‘‘জেলার একমাত্র শিল্পটি নষ্ট হতে বসেছে। অন্য দিকে, জেলার গ্রামগঞ্জের হাজার হাজার দুগ্ধ উৎপাদক সঙ্কটে। বিষয়টি নিয়ে অন্তত মাসখানেক ধরে প্রশাসনের দারে দারে ঘুরছি। কোনও সমাধান হচ্ছে না।’’ এই অবস্থা চলতে থাকলে গ্রামীণ অর্থনীতির উপরে বড়সড় প্রভাব পড়বে বলেও আশঙ্কা নানা মহলের।

জেলা প্রশাসনের হিসেবে, ষাট হাজার পরিবার ও ৪০২টি সমবায় সমিতি প্রত্যক্ষ ভাবে দুগ্ধ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ ভাবে ৭০ হাজার পরিবারের ভবিষ্যৎ ভাগীরথীর উপরে নির্ভরশীল। ঈদ ও পুজোর আগে জেলার এই সমিতিগুলি ভেঙে পড়লে ক্ষতির মুখে পড়বে পরিবারগুলি। বহরমপুর ব্লকের সাটুই এলাকার পোড়াগাঙ্গা দুগ্ধ সমবায় সমিতির কর্তা সুবোধ নন্দী বলেন, ‘‘গ্রামে প্রায় ৭০০ পরিবারের বাস। ৯০ শতাংশ পরিবার দুগ্ধ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। ভাগীরথী দুধ কম কেনায় গোটা গ্রামেই আশঙ্কার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। শুনছি এরপরে নাকি কেবল একবেলা দুধ কেনা হবে। সেটা হলেও মুশকিলে পড়ব আমরা।’’

সীমান্তবর্তী রানিনগর এলাকার সুজিত ঘোষ বলেন, ‘‘এটা ধান গম বা অন্য কোনও ফসল নয় যে, গুদামে রেখে দেব। ফ্রিজ না হলে একবেলা রাখার উপায় থাকে না। প্রতিদিন লিটার লিটার দুধ নিয়ে আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। গ্রামে বিক্রি করতে গেলেও দাম মিলছে না। এ ভাবে চলতে থাকলে গরু বেচে দিয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হবে।’’

পোড়াগঙ্গা গ্রামের নারায়ণ নন্দী বলছেন, ‘‘দৈনিক ৪০ লিটার দুধ কোথায় বিক্রি করব? এতদিন গ্রামের সমিতিতে দিয়ে আসতাম। তারা ভাগীরথীকে বিক্রি করে দিত। কিন্তু এ ভাবে যে বিপাকে পড়তে হবে তা কোনওদিন ভাবতেও পারিনি।’’ জেলা জুড়ে গোয়ালাদের অবস্থা কমবেশি এমনই। কবে নাগাদ সমস্যা মিটবে?

জেলার সমবায় সমিতিগুলির দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) নেধারাম মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি নিয়ে কিছুই বলতে পারব না। যা বলার ওই সমিতির এমডি বলবেন।’’ ভাগীরথী দুগ্ধ সমবায় সমিতির এমডি নির্মল কর্মকার বলেন, ‘‘আমরা বর্তমানে চরম সঙ্কটে। একদিকে বিভিন্ন সমিতিগুলি চাপ দিচ্ছে দুধ কেনার জন্য। অন্য দিকে ডেয়ারি ১০ হাজার লিটারের বেশি দুধ নিচ্ছে না। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক গাড়ি দুধ নষ্টও হয়েছে। সেই কারণেই বাধ্য হয়ে আমরা একবেলা দুধ কেনা বন্ধ রাখছি। প্রশাসনিক স্তরে কথা বলেও কোনও সমাধান সূত্র বের হচ্ছে না।’’

Bhagirathi Barhampur milk MD Nirmal Karmakar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy