বিজেপির ডাকা বন্ধে স্বাভাবিক কল্যাণী। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে সোমবার কার্যত কোনও প্রভাব পড়ল না কল্যাণী বিধানসভা এলাকায়। উল্টে এতে দলের সাংগঠনিক শক্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠল বলে মনে করছেন বিজেপি নেতাকর্মীদের একাংশ। গয়েশপুরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে গলায় গামছার ফাঁসে ঝুলন্ত অবস্থায় বছর সাঁইত্রিশের বিজয় শীলের দেহ মেলার পরেই তিনি বিজেপি সমর্থক এবং তৃণমূল তাঁকে খুন করেছে বলে দাবি করে আসরে নেমেছিল বিজেপি। রাজ্য নেতারা তো বটেই, দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও তড়িঘড়ি এই নিয়ে সরব হন। তৃণমূল আবার পাল্টা দাবি করে, বিজয় শীল আসলে তাদেরই সমর্থক ছিলেন।
এ দিন বিজয়ের স্ত্রী কমলী শীল এবং তাঁর একাধিক আত্মীয় বারবার দাবি করেন, বিজয় কোনও দলই করতেন না। বিজেপি ‘ভুল রাজনীতি’ করছে। তৃণমূলও বিজয়কে নিজেদের লোক বলে ‘অন্যায়’ করছে। রবিবার রাতেই তিনি কল্যাণী থানায় লিখিত ভাবে জানান, বিজেপি তাঁর স্বামীর মৃতদেহ নিতে চেয়ে চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি চান, মৃতদেহ নিয়ে বিনা বাধায় সৎকার করতে। কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে এ দিন পরিবারের হাতে মৃতদেহ দেওয়া হয়। যথাবিহিত সৎকারও হয়েছে।
রবিবার বিজেপি নেতারা সারা দিন তাঁদের বাড়িতে ভিড় করে থাকলেও এ দিন আর তাঁদের কাউকে দেখা যায়নি। বরং গয়েশপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় এবং রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের যুব তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক বাপ্পা চৌধুরী দলবল নিয়ে সকাল থেকে বাড়ির সামনে হাজির ছিলেন। গত লোকসভা ভোটে গয়েশপুর ছাড়া কল্যাণী ব্লকের প্রায় সর্বত্রই এগিয়ে ছিল বিজেপি। অথচ এ দিন বন্ধের ডাক সত্ত্বেও কল্যাণী শহরের জনজীবন সকাল থেকেই প্রায় সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল। প্রতিটি স্ট্যান্ডে অটো-টোটো ছিল যথেষ্ট সংখ্যক। কল্যাণীর সেন্ট্রাল পার্ক থেকে মেন স্টেশন যাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ধারে সব দোকান খোলা ছিল। চলাচলও ছিল স্বাভাবিক। শিল্পাঞ্চল স্টেশনের কাছে বা বি টি কলেজের সামনেও দোকানপাট স্বাভাবিক সময়েই খুলেছে। বেশির ভাগ বাজারই ছিল স্বাভাবিক। এমনকি গয়েশপুর পুর এলাকার গোলবাজার, গোকুলপুর বাজার, বেদিভবন চত্বর বা জমজমাট চেকপোস্টেও কোনও প্রভাব চোখে পড়েনি। ব্লকের অন্যতম ব্যস্ত বাজার এলাকা মদনপুরও স্বাভাবিক ছিল। চাঁদামারি বাজারে সকালের দিকে বন্ধের আংশিক প্রভাব পড়ে, তবে বেলা বাড়তেই ওই এলাকাতেও জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে যায়।
কল্যাণী ব্লক তৃণমূল সভাপতি পঙ্কজ সিংহের দাবি, “অরাজনৈতিক একটি মৃত্যু নিয়ে বিজেপির জঘন্য রাজনীতি মানুষ সমর্থন করেনি। তাই এই বন্ধকে কেউ পাত্তাই দেয়নি।” কল্যাণীর তৃণমূল বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাসও কার্যত একই দাবি করেন। বিজেপি নেতাকর্মীদেরও একাংশ আড়ালে-আবডালে বলছেন, এই বন্ধ ডেকে আখেরে নিজেদের হাস্যস্পদ করলেন নেতৃত্ব। এখন বাড়ির লোকও উল্টো গাইতে শুরু করায় বিষয়টা আরও হাতের বাইরে চলে গেল।
বিজেপির গয়েশপুর শহর মণ্ডলের পর্যবেক্ষক তথা দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সদস্য চঞ্চল পালও স্বীকার করছেন, বন্ধ সর্বাত্মক হয়নি। তবে তাঁর যুক্তি, “বন্ধের আগে প্রচার সে ভাবে করা যায়নি। তা ছাড়া কল্যাণী থানার পুলিশ তৃণমূলের হয়ে রাস্তায় নেমেছিল।” তবে কল্যাণী ২ নম্বর বাজারে ভাল বন্ধ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। নিজের বাড়িতে বসে কমলী এ দিন বলেন, “আমার স্বামী কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কোনও দলের রাজনীতি করতেন না। মিটিং-মিছিলেও কখনও যেতে দেখিনি। আমাদের পরিবারে কেউই কোনও রাজনীতি করেন না।” তাঁর কিছু আত্মীয়ও একই দাবি করেন। বিজেপি তা হলে কিসের ভিত্তিতে এত হইচই করল? বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য মানবেন্দ্রনাথ রায়ের দাবি, “এ রাজ্যে সচ্ছল শিক্ষিত মানুষও এখন তৃণমূলের ভয়ে কাঁটা। ওদের দলবল যখন বাড়ি ঘিরে রেখেছে, একটা গরিব পরিবার যে বয়ান বদল করবে, তাতে আর আশ্চর্য কী!”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রবিবার মেদিনীপুরে বলেছিলেন, “যিনি মারা গিয়েছেন তিনি আমাদের দলেরই সমর্থক।” এ দিন বিজয়ের স্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, উনি রাজনীতি করতেন না। এক কালে তৃণমূল করতেন, তার পর বসে গিয়েছিলেন।” তবে তাঁর দাবি, “কে কোন দলের সমর্থক সেটা বড় কথা নয়, এ রাজ্যে একের পর এক মানুষ খুন হচ্ছেন, আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই, আমরা তারই প্রতিবাদ করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy