Advertisement
E-Paper

‘অন ডিউটি’ লিখে পথে গাড়ি

কিন্তু গাড়িতে ‘অন ডিউটি’ লেখা ওই গাড়িটি কি আদৌ কোনও সরকারি দফতরের?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০১:১৫
সরকারি বাস আটকালেন ধর্মঘটীরা। কৃষ্ণনগরের পোস্ট অফিস মোড়ে। বুধবার সকালে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সরকারি বাস আটকালেন ধর্মঘটীরা। কৃষ্ণনগরের পোস্ট অফিস মোড়ে। বুধবার সকালে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সরকারি দফতরের ‘অন ডিউটি’ লেখা গাড়িটা কৃষ্ণনগরের সদর মোড়ে আসতেই সেটিকে আটকে দিলেন বাম সমর্থকরা। কিছুতেই ছাড়া হবে না গাড়ি। যাত্রীর সঙ্গে শুরু হল তর্ক। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা ছুটে এসে কোনও মতে গাড়িটিকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেন।

কিন্তু গাড়িতে ‘অন ডিউটি’ লেখা ওই গাড়িটি কি আদৌ কোনও সরকারি দফতরের? নাকি ধর্মঘটীদের ধোঁকা দিতেই তা লিখে রাখা? রাস্তায় থাকা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা চেপে ধরতেই চালক স্বীকার করে নিলেন, সেটা আদৌ সরকারি দফতরের গাড়ি না। ধর্মঘটীরা যাতে না আটকায়, তার জন্যই ‘অন ডিউটি’ লেখা হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে আবার কর্তব্যরত সংবাদকর্মীদের বাধা দেওয়া ও হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে কর্তব্যরত ট্রাফিক ওসি তমালতরু সরকারের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে সামান্য উত্তজনাও তৈরি হয়। প্রায় ওই সময়েই কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ে দু’টি সরকারি বাস আটকান ধর্মঘটীরা। সেখানেও কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ এসে বাসটিকে অবরোধমুক্ত করে।

তবে এমন কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বুধবার গোটা কৃষ্ণনগর মহকুমায় ধর্মঘট ছিল শান্তিপূর্ণ। সকাল থেকে বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তায় দেখা যায়নি বেসরকারি বাস। বেলার দিকে কৃষ্ণনগর শহরের রাস্তায় একটা-দুটো করে টোটোর দেখা যেতে থাকে। বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও দেখা মেলেনি পড়ুয়াদের। আদালত, শপিং মল থেকে শুরু করে নানা জায়গায় ব্যাঙ্ক ও ডাকঘর বন্ধ ছিল।

সকালেই বাসস্ট্যান্ড ও শহরের নানা রাস্তায় মিছিল করেন ধর্মঘটীরা। কৃষ্ণনগর পুরসভার কাছে মিছিলের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স চলে আসে। ভিতরে সাধারণ যাত্রী আছে কি না তা দেখে ধর্মঘটীরা সেটি ছেড়ে দেন।

প্রত্যাশিত ভাবে, সরকারি অফিসে উপস্থিতির হার অন্য দিনের তুলনায় বেশি ছিল বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলাশাসক বিভু গোয়েল জানান, জেলা প্রশাসনিক ভবনে ৪১০ জন কর্মীর মধ্যে মাত্র দু’জন অনুপস্থিত ছিলেন। তবে কর্মীরা এলেও নানা কাজ নিয়ে আসা সাধারণ মানুষজন তেমন দেখা যায়নি।

নবদ্বীপে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কুয়াশার জন্য সকালের দিকে কিছুক্ষণ খেয়াঘাট বন্ধ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে যাত্রীর সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো কম। শহরের স্ট্যান্ড থেকে বাস চলাচল করেনি। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও পড়ুয়া প্রায় ছিলই না। বাজার চত্বরের দিকে কিছু দোকান খুললেও পোড়ামাতলা, রাধাবাজার প্রভৃতি অঞ্চলে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল।

তেহট্টে আবার ধর্মঘটের মিশ্র প্রভাব পড়েছে। সেকানে বেশ কিছু দোকান খোলা ছিল। তবে কালীগঞ্জ, দেবগ্রাম, পলাশিতে আবার বেশির ভাগ দোকানপাট খোলা ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে বেথুয়াডহরিতেও দোকানপাট খুলতে থাকে। মিশ্র প্রভাব পড়েছে মাজদিয়া এবং বগুলাতেও। করিমপুরেও কার্যত তা-ই। সারা দিনই রাস্তায় মানুষজন ও ছোট গাড়ির চলাচল থাকলেও বেসরকারি কোনও বাস চলেনি। স্কুল খোলা, শিক্ষকেরা এসেছিলেন। তবে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ভিড় ছাড়া প্রায় কোথাওই কোনও ক্লাস হয়নি।

সকালে করিমপুর পার্টি অফিসের সামনে নতুন বাসস্ট্যান্ডের মুখে রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা করে সিপিএম। পুলিশের বাধায় তা তারা করে উঠতে পারেনি। পরে মিছিল বার করা হয়। করিমপুর দূরপাল্লা বাসকর্মী সংগঠনের সম্পাদক সন্তু স্বর্ণকার জানান, রাজ্য সরকার ধর্মঘটের বিরোধিতা করলেও বাসকর্মীরা বাস চালাতে রাজি হননি। সে কারণে করিমপুর থেকে কলকাতা ও দিঘা রুটের প্রায় কুড়িটি বাস, করিমপুর-বহরমপুর রুটের শ’খানেক এবং করিমপুর-কৃষ্ণনগর রুটে প্রায় দেড়শো বাস স্ট্যান্ড থেকে ছাড়েনি।

এ দিন দ্বিতীয় বর্ষ ইতিহাসের তৃতীয় সিমেস্টার থাকায় বিপাকে পড়তে হয় কলেজের ছাত্রছাত্রীদের। বেতাই কলেজের প্রায় সাড়ে ন’শো পড়ুয়াদের মধ্যে কেউ অটোয়, কেউ ছোট গাড়ি ভাড়া করে পরীক্ষা দিতে করিমপুর কলেজে যান।

সিটুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এস এম সাদির মতে, “পরিবহণ শ্রমিকেরা কাজ করেননি। বন্ধ থেকেছে কল কারখানা। শ্রমজীবী মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই ধর্মঘট সফল করেছেন।”

কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার জাফর আজমল কিদোয়াই জানান, ধর্মঘট ঘিরে কোথাও অশান্তি হয়নি। তবে ধুবুলিয়ার বেলপুকুরে ছ’জনকে সতর্কতামূলক গ্রেফতার করা হয়েছে।

Bandh Trade Union CPM Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy