Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কোথায় হারাল বিক্রম, মনখারাপ আবীরদের  

বিদেশি টেলিস্কোপের সাহায্যে তখন গ্রহ-নক্ষত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্কুলপড়ুয়া এবং উপস্থিত লোকজনের।

চোখ চাঁদের দিকে। নিজস্ব চিত্র

চোখ চাঁদের দিকে। নিজস্ব চিত্র

সম্রাট চন্দ
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

ঘড়িতে তখন মোটামুটি রাত ১২টা। একটু একটু করে লোকজন জড়ো হচ্ছেন শান্তিপুরের বড় গোস্বামী পাড়ায় একটি চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্রের ছাদে। হালকা মেঘের আনাগোনা থাকলেও বৃষ্টি নেই।

বিদেশি টেলিস্কোপের সাহায্যে তখন গ্রহ-নক্ষত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্কুলপড়ুয়া এবং উপস্থিত লোকজনের। পাশেই জায়ান্ট স্ক্রিন। ইসরো-র ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ মারফত সেখানেই চন্দ্রযানের অবতরণ দেখানোর প্রস্তুতি সারা।

পর্দার সামনে বসে শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাবের সদস্যেরা। আর বড় গোস্বামী পাড়ার বাসিন্দা রাজীব বসু, যিনি চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হলেও মহাকাশ নিয়ে চর্চা করেন। তিনিই সকলকে জানাচ্ছিলেন, মহাকাশ এবং চন্দ্রাভিযানের নানা তথ্য। সকলেরই মাঝে-মাঝে চোখ চলে যাচ্ছে ঘড়ির দিকে। রাত গড়াচ্ছে। জায়ান্ট স্ক্রিনে নড়াচড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ইসরো-র প্রদর্শন কেন্দ্রে হাজির খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

রাত পৌনে ২টো। মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত। দমবন্ধ করেই সবাই চোখ রেখেছেন স্ক্রিনে। সেখানেই ফুটে উঠছে চন্দ্রযানের গতিবিধি। স্ক্রিনের বাঁ দিকের কোণ থেকে বাঁক নিয়ে লম্বা সবুজ রেখে টেনে একটা আলোর বিন্দু নেমে যাচ্ছে নীচের দিকে— চাঁদের মাটির দিকে। সকলে টানটান। আর সামান্য সময়, বিক্রম ল্যান্ডার গিয়ে ছোঁবে চাঁদের দক্ষিণমেরু, এর আগে যেখানে কেউ নামেনি।

হঠাৎ কী হল! বাঁধা পথ ছেড়ে বেশি বাঁক নিয়ে আলোর বিন্দু বেখাপ্পা ভাবে নামতে লাগল নীচের দিকে। সবুজ রেখা হয়ে উঠল লাল! বিপদরেখা! তার মানে কি চন্দ্রযান ভুল পথে যাচ্ছে? পালকের মতো ভেসে নামার বদলে সে কি সোজা গিয়ে আছড়ে পড়বে চাঁদের রুক্ষ পাথুরে মাটিতে? পড়ে চুরমার হয়ে যাবে? বুক কেঁপে উঠল সকলের। কয়েকটা দমবন্ধ করা মুহূর্ত। থমকে গেল আগুয়ান আলোর বিন্দুর চলা।

কী হল? কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। কয়েক জন মুখ তুলে আকাশের দিকে দেখলেন। যেন স্ক্রিনে যা দেখা যাচ্ছে না, মরিয়া হয়ে তা দেখে নিতে চান খালি চোখেই। ইসরো-তেও তখন প্রবল উৎকণ্ঠা। জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখা যাওয়া বিজ্ঞানীদের চোখমুখই বলে দিচ্ছে, খারাপ কিছু ঘটেছে বা ঘটতে চলেছে। দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে কেউ কিছু একটা বললেন। একটু পরেই বেরিয়ে গেলেন মোদী।

জানা গেল, চন্দ্রযানের সঙ্গে সব যো‌গাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলো ‘ব্রেকিং নিউজ়’ দিচ্ছে। রাত প্রায় আড়াইটে অবধি অপেক্ষার পরে ছাদের সবাই বুঝে গেলেন, আর কিছু হওয়ার নেই। এক জন-এক জন করে বাড়ির পথ ধরলেন সকলেই।

খুব আশা করে এসেছিল শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আবীর মৈত্র। কষ্ট হলেও সে পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। আবীর বলে, “ভূগোল বইয়ে চাঁদ আর মহাকাশের নানা গ্রহ-নক্ষত্রের কথা পড়েছি। আমাদের দেশ থেকে একটি যান চাঁদের দিকে রওনা দিয়েছে, তা কী ভাবে যাচ্ছে, কাজ করছে তা জানার ইচ্ছা ছিল। একটু মনখারাপ করছে ঠিকই। তবে অনেক কিছুই জানলাম।” এ দিন যিনি সবচেয়ে বেশি আগ্রহ নিয়ে সবাইকে বোঝাচ্ছিলেন, সেই রাজীব বসু বলেন, “মূলত পড়ুয়াদের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ। অভিযান তো পুরোপুরি বিফল হয়নি। ছোটরা অনুপ্রেরণা নিয়েই ফিরেছে।” উদ্যোক্তাদের অন্যতম, শান্তিপুরের বিজ্ঞানকর্মী সুব্রত বিশ্বাসও বলেন, “স্কুল-কলেজের ছাত্ররা অনেক কিছু জানতে পারল। একটু মনখারাপ তো হচ্ছেই। তবু বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE