E-Paper

জন্মের নকল শংসাপত্র রুখতে বদল পোর্টালে

এতদিন জন্ম বা মৃত্যু শংসাপত্রের আবেদনের ক্ষেত্রে নথির পরিবর্তে গাছপালা বা পোষ্যর ছবি পোর্টালে আপলোড করেও মিলেছে শংসাপত্র।

সুদেব দাস

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৫ ০৯:৩০
অবৈধ ভাবে দিনের পর দিন তৈরি হয়েছে ‘নকল’ শংসাপত্র।

অবৈধ ভাবে দিনের পর দিন তৈরি হয়েছে ‘নকল’ শংসাপত্র। —প্রতীকী চিত্র।

জন্ম শংসাপত্রের আবেদনের পোর্টালেই ছিল গলদ! সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ ভাবে দিনের পর দিন তৈরি হয়েছে ‘নকল’ শংসাপত্র। রানাঘাট পুলিশ জেলার তরফে ওই পোর্টালের খামতি চিহ্নিত করে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরে। তার পরেই ওই পোর্টালে আনা হয়েছে বেশ কিছু পরিবর্তন। শুধু তাই নয়, এতদিন জন্ম বা মৃত্যু শংসাপত্রের আবেদনের ক্ষেত্রে নথির পরিবর্তে গাছপালা বা পোষ্যর ছবি পোর্টালে আপলোড করেও মিলেছে শংসাপত্র। এবার থেকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফেও ওই নথি যাচাইয়ের সুযোগ থাকছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জন্ম শংসাপত্রের দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও পুরসভা ও পঞ্চায়েতের এক্তিয়ার রয়েছে। সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে পুরসভার ক্ষেত্রে এক জন আধিকারিক ও পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে প্রধানদের সেই ক্ষমতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অনলাইন আবেদনের জন্য রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের নিজস্ব ওয়েবসাইট বা পোর্টাল। পোর্টালে সদ্যজাতদের জন্ম শংসাপত্রের আবেদনের জন্য ২১ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া রয়েছে। ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন না করলে ‘বিলম্বিত আবেদন’ করার সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রেও কত দেরিতে জন্ম শ‌ংসাপত্রের জন্য আবেদন করা হচ্ছে, তার নিরিখে বিষয়টিকে পর্যায়ক্রমে ভাগ করা হয়েছে। সহজ করে বললে, জন্মের দিন থেকে ২১ দিনের পর যত দেরিতে শংসাপত্রের জন্য আবেদন করা হবে, ততই আবেদনের সমর্থনে বাড়বে নথির সংখ্যা।

সূত্রের খবর, গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাঁসখালি ব্লকের অধীনে থাকা বগুলা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে জন্ম শংসাপত্র প্রদানের বড় রকম অনিয়ম সামনে আসে। পঞ্চায়েতের জন্মের হারের তুলনায় শংসাপত্রের প্রদানের হার ছিল কয়েক গুণ বেশি। সে সময় তদন্তে নেমে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। তদন্তে রানাঘাট জেলা পুলিশের কর্তারা পোর্টালের বেশ কয়েকটি খামতি প্রত্যক্ষ করেন। জানা গিয়েছে, এতদিন জন্ম মৃত্যুর ওই পোর্টালে জন্মের ২১ দিনের মধ্যে আবেদন করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেও, পাঁচ বছর, দশ বছর বা তারও বেশি বছর আগের কোনও তারিখে আবেদন করা যেত। সেই আবেদন মঞ্জুরও হয়ে এসেছে এতদিন।

ওয়াকিবহল মহলের অনেকেই বলছেন, নামেই জন্মের ২১ দিনের মধ্যে আবেদন বলা হলেও, বাস্তবে তা হত না। যেহেতু এ ক্ষেত্রে নথিপত্র কম প্রয়োজন, তাই একটা চক্র কয়েক বছর আগের তারিখে প্রচুর জন্ম শংসাপত্র বের করার কাজে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। তদন্ত পুলিশ আধিকারিকেরা আরও জানতে পেরেছেন, পোর্টালে নথি আপলোড করার জায়গায় নির্দিষ্ট মাপের যে কোনও ‘জেপিজি’ ছবি আপলোড করলেই চলত। পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে তা অনুমোদন করতেন সাব রেজিস্ট্রার তথা প্রধান। অনেকেই নথির পরিবর্তে গাছপালা, পশুপাখি ছবিও আপলোড করে পেয়েছেন কয়েক বছর আগের জন্ম শংসাপত্র।

পোর্টালের খামতির বিষয়গুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে রানাঘাট জেলা পুলিশের তরফ পাঠানো হয় রাজ্যস্তরে। পরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের তরফে ধাপে ধাপে ওই পোর্টালে বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট জেলা পুলিশের তরফে কোনও আধিকারিক বক্তব্য দিতে রাজি না হলেও, তাঁরা সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন। আর নদিয়া জেলা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকের নোডাল অফিসার তথা ডেপুটি সিএমওএইচ ২ পরাশর পোদ্দার বলেন, ‘‘পোর্টালে সম্প্রতি কয়েকটি পরিবর্তন এসেছে। আগে কত সংখ্যক শংসাপত্র প্রদান করা হচ্ছে, জেলা থেকে আমরা শুধু সংখ্যাটা দেখতে পেতাম। এখন আবেদনের প্রেক্ষিতে যে সকল নথিপত্র আপলোড করা হচ্ছে, তা দেখার সুযোগ রয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ranaghat WB Health Department

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy