Advertisement
১৬ মে ২০২৪

কৃষ্ণনগরে শিশু খুন, ধৃত বাবা ও ঠাকুমা

বছর ছয়েকের এক শিশুকে খুনের অভিযোগে পুলিশ তার বাবা ও ঠাকুমাকে গ্রেফতার করেছে। ধৃত অভিজিৎ দাস ও কল্পনা দাস কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগরের বাসিন্দা। শিশুটির সৎ মা মৌটুসি দাস পলাতক। মৃত অনুষ্কা দাসের (৬) মা প্রিয়াঙ্কা দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই দু’জনকে পাকড়াও করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০৩:১৩
Share: Save:

বছর ছয়েকের এক শিশুকে খুনের অভিযোগে পুলিশ তার বাবা ও ঠাকুমাকে গ্রেফতার করেছে। ধৃত অভিজিৎ দাস ও কল্পনা দাস কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগরের বাসিন্দা। শিশুটির সৎ মা মৌটুসি দাস পলাতক। মৃত অনুষ্কা দাসের (৬) মা প্রিয়াঙ্কা দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই দু’জনকে পাকড়াও করেছে।

সোমবার বিকেল ৫টা নাগাদ প্রতিবেশীরা শিশুটিকে অসাড় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাকে শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃতদেহের ময়নাতদন্তের কথা বলেন। সেই মতো পুলিশ দেহটির ময়নাতদন্ত করায়। এরপরই শিশুটির মা পুলিশের কাছে ওই তিন জন‌ের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। শিশুটির মা প্রিয়াঙ্কাদেবীর বাবার বাড়ি নবদ্বীপের তেঘড়িপাড়ায়। বছর আটেক আগে তাঁর বিয়ে হয়। অভিযোগ বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাঁর উপর নির্যাতন চালাত। এরই মধ্যে অভিজিৎ দ্বিতীয় বিয়ে করে। প্রিয়াঙ্কাদেবী বলেন,‘‘আমার স্বামী আমাকে ডিভোর্সের নোটিস পাঠায়। বাসা ভাড়া করে আলাদা থাকতে শুরু করে। মেয়ের কোনও দায়িত্বই পালন করত না।’’ ২০১৫ সালের জুন মাসে অভিজিৎ এর সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ডিসেম্বরে অভিজিত বিয়ে করে মৌটুসিকে। শিশুটি অবশ্য অভিজিতের কাছেই থাকত। প্রিয়াঙ্কাদেবী বলেন, ‘‘বিচারক বলেছিলেন যে ইচ্ছা করলে আমি মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারি। নিজের কাছে এনে রাখতে পারি। সেই মতো আমি মেয়ের সঙ্গে দেখা করতাম। অনুষ্কা আমাকে প্রায়ই বলত, ওকে নাকি মারধর করা হয়। ওদের কাছে থাকতে চায় না। আমি যেন তাকে নিজের কাছে নিয়ে যাই ’’ তিনি বলেন,‘ পরিনতি যে এত ভয়ঙ্কর হবে তা কোন দিন কল্পনাও করতে পারিনি।’’

পুলিশ ও হাসপাতাল সুত্রে জানা গিয়েছে যে, শিশুটির বাঁ গালে সামান্য ছড়ে যাওয়ার দাগ আছে। মাথার পিছনে সামান্য আঘাতের চিহ্ন আছে। মৃত্যুর কিছু সময় পর থেকে শিশুটির মুখ ও নখ নীল হতে শুরু করে। কি ভাবে হল এমন আবস্থা? শিশুটির বাবার দাবি,‘‘আমি সাড়ে পাঁচটা নাগাদ অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখি যে মেয়ে আমার মায়ের পাশে শুয়ে আছে। আমি ওকে না জাগিয়ে নিজের ঘরে চলে যাই। আমার দ্বিতীয় স্ত্রী সেই ঘরেই ছিল। কিছু সময় পর মার চিৎকারে ছুটে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের নাখ মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। হাতপা শক্ত হয়ে গিয়েছে।’’ শিশুটির ঠাকুমা কল্পনাদেবী বলেন,‘‘দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে এক সঙ্গে আমার খাটের উপরে শুয়ে ছিলাম। দু’জনেই ঘুমিয়ে পড়ি। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে অনুষ্কাকে জাগাতে গিয়ে দেখি যে গা হাত পা ঠান্ডা আর শক্ত হয়ে গিয়েছে। তখ‌নই আমি চিৎকার করে সবাইকে ডাকি।’’

যদিও এই গল্প বিশ্বাস করতে রাজি নয় পুলিশ। কারণ প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে প্রথমে শিশুটির বাবা ও ঠাকুমা দাবি করেছিল যে খাট থেকে পরে গিয়েই নাকি তার মৃত্যু হয়েছে। একই কথা ফোন করে ‌জানানো হয়েছিল প্রিয়াঙ্কাদেবীকেও। পরে আবার তারা বয়ান বদল করার পুলিশ ও চিকিৎসকদের আরও বেশি করে সন্দেহ হতে থাকে। সোমবার সন্ধ্যায় শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পরে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন মৌটুসিদেবী। তাকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে তিনি বেপাত্তা বলে পুলিশ জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnanagar killed Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE