গত দু’দিন ধরে কলকাতায় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে রাজ্যে চার লক্ষ ৪০ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সে সব শিল্প কারখানা গড়ার জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন শিল্প সংস্থা চুক্তিও করেছে। তবে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে এক প্রকার কিছুই পেল না এক সময়ের বাংলা বিহার ওড়িশার রাজধানী মুর্শিদাবাদ। অভিযোগ, এই জেলার জন্য কোনও বড় শিল্প সংস্থা থেকে শিল্প কারখানা গড়বে বলে কোনও প্রস্তাব আসেনি। যার জেরে হতাশ হয়েছেন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দারা।
ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধি ছাড়াও প্রায় ২০ জন উদ্যোগী বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণ পেয়ে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে গিয়েছিলেন। তাঁরাও সেই সম্মেলন থেকে হতাশ হয়ে ফিরেছেন। তাঁদের দাবি, মুর্শিদাবাদে পরিবেশ থাকলেও কোনও ভারী শিল্পের প্রস্তাব আসেনি। যদি ভারী শিল্প না হয় তাহলে জেলার উন্নয়ন হবে কী করে? তাঁরা জানিয়েছেন, এই জেলায় গঙ্গা, পদ্মা ভাগীরথীর মতো বড় বড় নদী রয়েছে। ফলে এই জেলায় নদী বন্দর গড়া যেতে পারে। এই জেলাতে শিল্প গড়ার জন্য পর্যাপ্ত জমি রয়েছে। এই জেলায় একাধিক ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। ফলে পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। কিন্তু আমরা তার কিছুই দেখতে পেলাম না বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন।
তবে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘সুতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ার জন্য শিল্প বাণিজ্য সম্মেলনে চুক্তি হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। সেখানে ১২-১৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। বাকি তথ্য এখনও জেলায় আসেনি।’’
মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার আমরা রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণ পেয়ে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলাম। বুধবার বা বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের জন্য কোনও ভারী শিল্পের প্রস্তাব আসেনি, কোনও মৌ চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়নি। অথচ এই জেলায় শিল্প গড়ে ওঠার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। শিল্পের জন্য জেলায় জলের অফুরন্ত ভান্ডার রয়েছে, চার লেনের জাতীয় সড়ক রয়েছে, জলপথকে কাজে লাগানো যেতে পারে, রেলপথকে কাজে লাগানো যেতে পারে। পর্যাপ্ত জমি রয়েছে। এসবগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। কিন্তু সে সবের কোনও উদ্যোগ দেখলাম না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মুর্শিদাবাদ হচ্ছে রাজ্যের পর্যটনের জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক মুর্শিদাবাদে ছুটে আসেন। সেই পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্যও প্রস্তাব দেখলাম না। এই বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে মুর্শিদাবাদের পাওনা প্রায় শূন্য।’’
২০০৮ সালে বাম আমলে পড়শি জেলা নদিয়া সীমান্ত লাগোয়া রেজিনগরে শিল্পতালুক গড়ে তুলেছিল পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগম। ২০১১ সালে পালাবাদল হয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে। কী বাম কী তৃণমূল কোনও আমলেই সাফল্যের মুখে দেখেনি এই শিল্পতালুক। গত ১৭ বছরে সেখানে দু’একটি ইউনিট ছাড়া শিল্পতালুকে কিছুই গড়ে ওঠেনি। আরও একটি বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হয়ে গেল। তাতেও রেজিনগর শিল্প তালুকের কোনও শিল্পের প্রস্তাব নেই।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)