Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উড়ছে বাস, কাঁপছেন যাত্রীরা

কথাটা কি শোনা শোনা ঠেকছে? আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। বাসকর্মীদের মুখে কথাটা প্রায়ই শোনা যায়। যাত্রী টানার এমন চমক নতুন কিছু নয়। বাসের গতি বোঝাতে জেলা সদর কিংবা মফস্সলে এই চলন্ত-বিজ্ঞাপন বেশ প্রচলিত।

চলছে রেষারেষি। বহরমপুর ও কৃষ্ণনগরের কাছে ভাণ্ডারখোলায়। নিজস্ব চিত্র

চলছে রেষারেষি। বহরমপুর ও কৃষ্ণনগরের কাছে ভাণ্ডারখোলায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:২১
Share: Save:

ছাড়লেই উড়বে!

কথাটা কি শোনা শোনা ঠেকছে? আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। বাসকর্মীদের মুখে কথাটা প্রায়ই শোনা যায়। যাত্রী টানার এমন চমক নতুন কিছু নয়। বাসের গতি বোঝাতে জেলা সদর কিংবা মফস্সলে এই চলন্ত-বিজ্ঞাপন বেশ প্রচলিত।

আর বিপদটা ঠিক সেখানেই। কারণ, বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরনোর পরে বেশির ভাগ বাস নানা জায়গায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রী তোলে। তারপর নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে আক্ষরিক অর্থেই বাস যেন উড়তে শুরু করে। তারপরে আছে দুই বাসের রেষারেষি।

রবিবার দুপুরে মুর্শিদাবাদের কান্দিতে দু’জন বাসযাত্রী ও এক পথচারী মারা গিয়েছেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবোঝাই একটি ট্রাককে সটান ধাক্কা মারে সাঁইথিয়াগামী একটি বাস। তখন বড় কোনও অঘটন ঘটেনি। ঝাঁকুনি দিয়ে বাসটি কিছুটা পিছিয়ে যায়। তারপর প্রচণ্ড গতিতে ট্রাকটিকে পাশ কাটিয়ে রাস্তার বাঁ দিকে যাওয়ার সময় টাল সামলাতে পারেননি বাসের অনেকেই।

বছর তেরোর এক কিশোর-সহ দু’জনের ডান হাত জানলার বাইরে বেরিয়ে গিয়ে আটকে যায় ট্রাকের সঙ্গে। সেই অবস্থাতেই বাস ছুটতে থাকে। তখন এক পথচারীকেও ধাক্কা দেয় বাসটি। ঘটনাস্থলেই তিনজনে মারা যান। অভিযোগ উঠেছে, বাসটি নির্ধারিত সময়ের থেকে দেরিতে যাচ্ছিল। ফলে গতিও ছিল অনেক বেশি। তারই মাসুল দিতে হয়েছে ওই তিন জনকে। কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুর, কান্দি থেকে কল্যাণী, বহরমপুর থেকে বাহাদুরপুর, জলঙ্গি থেকে জঙ্গিপুর বাসের এই বেপরোয়া গতি কিংবা রেষারেষি নতুন কোনও বিষয় নয়। গত কয়েক মাসে দুই জেলার একাধিক দুর্ঘটনায় হাত কেটে বাদ যাওয়া কিংবা মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তার পরে পরে কিছু দিন সামাল সামাল রব ওঠে। তারপর ফের যে কে সেই!

যাত্রী টানতে শুধু হাঁকডাকেই ক্ষান্ত থাকলে চলে না? তাই কোনও বাসের সামনে লেখা থাকে ‘এক্সপ্রেস’, কোনওটার সামনে আবার ‘সুপার’। বাসকর্মীদের দাবি, সেই কারণে বাস ধীরে চালানোরও কোনও উপায় থাকে না। কারণ, যাত্রীরাই তখন বলতে শুরু করেন, ‘সুপার বাস এমন গরুর গাড়ির মতো চলছে কেন?’

যাত্রীদেরও পাল্টা দাবি, প্রথম দিকে বাস চালকদের কোনও সময়জ্ঞান থাকে‌ না। যেখানে সেখানে তাঁরা বাস থামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর পিছনে আর একটি বাস উঁকি দিলে তখন কোনও কিছু না ভেবে বাস বেপরোয়া ভাবে চলতে শুরু করে।

এ দিকে উড়ছে বাস। আসনে বসে কাঁপছেন যাত্রীরা! বিপজ্জনক এই গতিতে রাশ টানবে কে? (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Passengers Competition Bus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE