E-Paper

চড়ছে গরম, ছেঁকা এখন আলুর দামে

পনেরো দিন আগে যে চন্দ্রমুখী খুচরো বাজারে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল, সোমবার সেই চন্দ্রমুখী বিকিয়েছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। ১৬ টাকার জ্যোতি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ টাকায়।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২৯

—প্রতীকী চিত্র।

সামুদ্রিক ঘূর্ণাবর্তের জেরে বৈশাখের তাপমাত্রা এখনও ততটা অসহ্য হয়ে না উঠলেও, বাংলা নতুন বছরের শুরুতেই আনাজের বাজারে আলুর দামে ছেঁকা লাগছে। চৈত্রের মাঝামাঝি থেকেই চড়তে শুরু করেছে সব ধরনের আলুর দাম। ইতিমধ্যে পার হয়েছে ইদ। সবে শেষ হয়েছে গাজন, নীল, চড়ক এবং নববর্ষের মতো উৎসব। সব মিলিয়ে আলুর চাহিদা তুঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে আলুর দাম যেন তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছে।

পনেরো দিন আগে যে চন্দ্রমুখী খুচরো বাজারে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল, সোমবার সেই চন্দ্রমুখী বিকিয়েছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। ১৬ টাকার জ্যোতি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ টাকায়। আলুর দাম আচমকা এতটা বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আলুচাষি থেকে কৃষি বিশেষজ্ঞ সকলেই প্রধানত দায়ী করছেন গত শীতে লাগাতর নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টিকে। কৃষিকর্তা পার্থ ঘোষের মতে, “নভেম্বর মাস যখন আলু লাগানোর সময়, তখন পর পর নিম্নচাপের জেরে অনেক দেরিতে আলু বসাতে বাধ্য হয়েছেন চাষিরা। এমনকি জানুয়ারি মাসেও অনেকে আলু বসিয়েছেন। এই বিলম্বের কারণে ফলন প্রভাবিত হয়েছে। প্রলম্বিত ঠাণ্ডাও ফলনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।” একই কথা বলছেন চাষিরাও। তাঁদের মতে এবার শীতকালীন বৃষ্টির জন্য আলুর চাষ ভাল হয়নি।

এমনিতে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে আলু তোলা শুরু হয়। মার্চ জুড়ে তোলা আলুর বেশিরভাগই চলে যায় হিমঘরে। এই সময় চাষিদের কাছ থেকে নতুন আলু কিনে প্রতিদিনের বাজারে জোগান দেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবার ফলন এতটাই খারাপ যে এখন ভিন্ রাজ্য থেকে আলু এনে চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। যতদিন না হিমঘর খুলবে ততদিন দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আলু ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, একাধিক কারণে আলুর দামের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। একে প্রাকৃতিক কারণে ফলন ভাল হয়নি। আলুর গুণগত মানও বেশ খারাপ। এরপর বাংলাদেশে এবার প্রচুর আলু রফতানি হচ্ছে। ফলে স্থানীয় বাজারে টান ধরেছে। চাষির মজুত ফুরিয়েছে। অথচ হিনঘর বন্ধ। স্বাভাবিক নিয়মেই দাম হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে।

খুচরো বিক্রেতা বাপন দাস বলেন, “ দিন দশ-পনেরোর মধ্যে দাম এতটা বেড়ে যাবে আমরা আঁচ করতে পারিনি। মার্চের শেষে চন্দ্রমুখীর বস্তা ছিল ৯০০-৯৫০ টাকা। এখন কিনছি ১২৫০ টাকায়। ৬৫০-৭০০ টাকায় কেনা জ্যোতি আলুর বস্তার আজকের দর ১১০০ টাকা। একই ভাবে হেমাঙ্গিনী বা সুপার সিক্সের বস্তা ৮০০-৮৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১০০ টাকা।”

তবে দাম যে আপাতত কমছে না তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সঞ্জীব কুণ্ড। তিনি বলেন, “এবার চাষির ঘর থেকে ব্যবসায়ীরা আলু মজুত করার সময় ৭০০-৮৫০ টাকা পর্যন্ত দামে কিনেছেন। পচা, দাগী বাছাই করে স্টোরে রাখতে সব মিলিয়ে খরচ আরও ৩৫০ টাকা প্রায়। ফলে সেই আলু স্বাভাবিক কারণেই ১২০০ টাকার নীচে বিক্রি করবেন না ব্যবসায়ীয়া। ফলে হিমঘর খুললে দাম কমবে এমন ভাবার কারণ নেই। তবে যেহেতু ফলন ভাল হয়নি। তাই বাজারের চাহিদা মেটাতে এবার হিমঘধর হয়তো দু-একদিনের মধ্যে খুলবে। কিন্তু তাতে মানুষের বিরাট কিছু সুবিধা হবে না।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Potato Price Price Hike Potatoes

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy