Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Sports

Sports: দৌড় থেকে সাঁতার, ওঁদের রোখা মুশকিল

সরকারি ভাবে এঁদের খেলাধুলোর জন্য কোনও  ব্যবস্থা বা পরিকাঠামো নেই। সবটাই বেসরকারি উদ্যোগে।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৩৪
Share: Save:

প্রতিবন্ধকতা উড়িয়ে প্যারালিম্পিক্সে একের পর এক পদক জিতেছেন ভারতের ক্রীড়াবিদেরা। নদিয়ার ছেলেমেয়েরা খেলাধুলোয় কতটা এগোতে পারলেন, তার সুযোগই বা কেমন? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

সবুজের ওপর সাদা চুন দিয়ে আঁকা লেন ধরে দৌড়চ্ছেন প্রতিযোগীরা। আর ফিনিশিং পয়েন্টের মুখে দাঁড়িয়ে হাতে ক্যানেস্তারা টিন সমানে বাজিয়ে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

কিংবা দৌড়ে নামা প্রতিযোগীদের সঙ্গে এক জন করে স্বেচ্ছাসেবকও ছুটছেন। মাঝেপথে অনেকেই পড়ে যাচ্ছেন। তাঁদের ধরে তুলে ফের দৌড় শুরু করতে সাহায্য করছেন তাঁরা।

শীতের দুপুরে কৃষ্ণনগর সাধারণ গ্রন্থাগারের মাঠে এমন দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন। গোটা নদিয়া জেলা থেকে জড়ো হতেন বিশেষ ভাবে সক্ষম অ্যাথলিটদের দল। উদ্যোগ, নদিয়া জেলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির।

সেই মাঠেই প্রথম নেমেছিলেন বন্দনা বিশ্বাস। রানাঘাটের প্রত্যন্ত গ্রাম পাঁচবেড়িয়ার এই মেয়ের কোমরের নীচটা অসাড়। তাতে ক্রাচ নিয়ে দৌড়তে কিংবা ডিসকাস, জ্যাভলিন ছুড়তে কোন অসুবিধা হয়নি তাঁর। পরবর্তী প্রায় দেড় দশক ধরে দেশ-বিদেশের নানা প্রতিযোগিতায় জল কিংবা মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বন্দনা। সাঁতার থেকে যোগাসন, দৌড় থেকে ফেনসিং এমনকি ম্যারাথন পর্যন্ত দৌড়েছেন। পদক রাখার জায়গা নেই তাঁর ঘরে। ২০০৯ সালে চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মিটে তৃতীয় হয়ে তাঁরা সাফল্যের শুরু। পরের বছর প্রথম স্থান।

২০১৩-য় বেঙ্গল প্যারালিম্পিক সুইমিংয়ে নেমে তিনটি বিভাগে পদক পান বন্দনা। ওই বছরই প্যারালিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া-র মিটে জ্যাভলিনে ব্রোঞ্জ। পরের বছর চমক লাগিয়ে দেন যোগাসনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চিনের সাংহাইয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। “ময়দানে এমন কোনও ইভেন্ট নেই যাতে আমি নামিনি বা সফল হইনি। ছোটবেলায় শারীরিক সমস্যার জন্য চিকিৎসা করাতে গেলে ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, শরীরচর্চাই আমার সুস্থ থাকার প্রধান ওষুধ। সেই থেকে এখনও থামিনি।”

টোকিয়োর মাঠে প্যারালিম্পিক্সে ভারতের সাফল্যে উজ্জীবিত চল্লিশ ছুঁই-ছুঁই বন্দনা বলেন, “২০১৯ সালে করোনার আগে পর্যন্ত নিয়মিত মাঠে ছিলাম। রাজ্যস্তরে ফেনসিংয়ে দ্বিতীয় হয়েছি।” আপাতত পাঁচবেড়িয়ায় ছোটদের প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যস্ততার ফাঁকে বলছেন, “নদিয়া জুড়ে এমন অনেকেই আছেন যাঁরা প্রতিবন্ধী ক্রীড়ার দুনিয়ায় পরিচিত নাম।”

এই তালিকায় শীর্ষে সাঁতার। এই জেলাকে বাদ দিয়ে রাজ্যদল তৈরি করাই মুশকিল। বাহাদুরপুরের প্রতিমা ঘোষ ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত সাঁতারে বাটারফ্লাই, ব্রেস্ট স্ট্রোক, ব্যাক স্ট্রোক এবং ফ্রি স্টাইল— চারটি বিভাগেই বিভিন্ন বছরে সোনা জিতেছেন। মায়াপুরের সাবিনা খাতুন সোনা-রুপো মিলিয়ে খান কুড়ি পদক জয় করেছেন। ভালুকার রাজকুমার ভগৎ ক্রিকেটে জাতীয় স্তরে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ফুটবলে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে গিয়েছেন। শুভ সিংহ সাঁতার এবং ক্রিকেট দুটোতেই জাতীয় স্তরে খেলেছেন।

কিন্তু সরকারি ভাবে এঁদের খেলাধুলোর জন্য কোনও ব্যবস্থা বা পরিকাঠামো নেই। সবটাই বেসরকারি উদ্যোগে। সেই অর্থে ১৯৮৭ সালে কৃষ্ণনগরে তৈরি হওয়া নদিয়া জেলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির আয়োজনে শুরু হয়েছিল ওঁদের জন্য চিন্তাভাবনা। সংগঠনের সভাপতি বাসুদেব মণ্ডল বলেন, “আমরা সীমিত সাধ্যের মধ্যে প্রতি বছর পাঁচদিনের প্রতিবন্ধী কল্যাণ মেলার আয়োজন করতাম। ১৯৯৩ সাল থেকে তাতে অ্যাথলেটিক্স যোগ হয়। এক দিনের প্রতিযোগিতায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওঁরা আসতেন। পুরস্কার হিসাবে বিরাট কিছু দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের ছিল না। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা ওঁদের কাছে খুব প্রেরণাদায়ক ছিল।”

২০১৯ সালের পর করোনার জন্য সব স্থগিত হয়ে গিয়েছে। তবে থমকে মানে তো থেমে যাওয়া নয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sports
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE