সন্তানকে ভর্তি করতে হলে বাবা-মা-এর নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। এমনই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করল কৃষ্ণনগর হাইস্কুল (প্রাথমিক বিভাগ)। স্কুল কর্তৃপক্ষের এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রাথমিকে ভর্তি হতে গেলে শুধুমাত্র শিশুর জন্মের শংসাপত্রের প্রয়োজন পড়ে। তা হলে কেন এখানে শিশুর বাবা-মায়ের নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া হল? তবে কি মা-বাবার নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে না পারলে স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না শিশুরা, উঠেছে প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন, যেখানে এই রাজ্যে এনআরসি চালুই হয়নি, সেখানে নাগরিকত্বের প্রমাণ কী করে চাইছে স্কুল?
যদিও চাপের মুখে মঙ্গলবার ওই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানাচ্ছেন জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশিস বিশ্বাসও।
কৃষ্ণনগর শহরের অন্যতম নামী সরকার-পোষিত স্কুল কৃষ্ণনগর হাইস্কুল (প্রাথমিক বিভাগ)। পড়ুয়াদের এই স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য শহরের অভিভাবকেরা উৎসাহী থাকেন। স্কুলে বর্তমানে শুধুমাত্র শিশু বিভাগেই ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন কর্তপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে— আবেদনপত্র সংগ্রহ করার সময়ে শিশুর জন্মের শংসাপত্র এবং অভিভাবকদের যে কোনও একটি নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। কোন কোন প্রমাণপত্র গ্রহণ করা হবে, তারও একটা তালিকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তালিকায় আছে ভোটার কার্ড, প্যানকার্ড, আধার কার্ড, ও ড্রাইভিং লাইসেন্স। শুধু তা-ই নয়, আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময়েওশিশুর জন্মের শংসাপত্রের ফোটোকপির পাশাপাশি বাবা অথবা মায়ের ওই চারটি নথির মধ্যের মধ্যে যে কোনও একটির ফোটোকপি প্রমাণপত্র হিসাবে জমা দিতে হবে। কোনও শিশুর অভিভাবক যদি এই চারটির মধ্যে একটি নথিও দেখাতে না পারেন, তা হলে সেই শিশু ওই স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না।
স্কুলের অভিভাবকদের একাংশ বলছে, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে এনআরসি চালু হয়নি।তার আগেই কী ভাবে একটি স্কুল পডুয়ার বাবা-মার নাগরিকত্বের প্রমাণ চাইতে পারে?
বিষয়টি সামনে আসায় অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কর্তারা। সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “এমনটা কোনও ভাবেই করা যায় না। একজন পড়ুয়াকে ভর্তি করতে শুধু তার জন্মের শংসাপত্রের প্রয়োজন। সেই শংসাপত্রে তার বাবা-মার নাম ও ঠিকানা লেখাই থাকে। তার পরেও কী ভাবে নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া হল, বুঝতে পারছি না।” তিনি আরও বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ভাল করে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দিনই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক রঞ্জন সাহার সাফাই— “এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আমরা ভুলই করেছি। আসলে ওটা ছাপার ভুল। আমরা ওই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করব।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)