Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

প্রশ্ন নিরাপত্তা নিয়ে, কঠিন হচ্ছে সৎকার

ডোম থেকে শুরু করে সাফাইকর্মী, করোনা-যুদ্ধে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠেছে।

শুক্রবার গ্লোকাল হাসপাতালের সামনে। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

শুক্রবার গ্লোকাল হাসপাতালের সামনে। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৩২
Share: Save:

বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছিল শুক্রবার ভোরে। গ্লোকাল হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ রওনা করাতে রাত ৮টা গড়িয়ে গেল। কারণ ওয়ার্ড থেকে মৃতদেহ সরিয়ে গাইডলাইন মেনে ‘প্যাকিং’ করে সৎকার করতে নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না ডোমেরা। শেষ পর্যন্ত জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের (সিএমওএইচ) হস্তক্ষেপে তাঁরা রাজি হন। রাতেই নবদ্বীপ শ্মশানে নিয়ে গিয়ে মৃতদেহ সৎকার হয়েছে। কিন্তু ডোম থেকে শুরু করে সাফাইকর্মী, করোনা-যুদ্ধে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠেছে।

দিন কয়েক আগেই প্রবল শ্বাসকষ্টের জন্য নির্ধারিত (সারি) এই গ্লোকাল হাসপাতালেই মারা গিয়েছিলেন বছর আশির এক বৃদ্ধ। গভীর রাতে তিনি মারা গেলেও পরদিন রাত পর্যন্ত একই ভাবে টানাপড়েন চলেছিল। এ বারও কার্যত তারই পুনরাবৃত্তি হল। যদিও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২২ এপ্রিল রাতে প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে ধুবুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে এসেছিলেন বছর ষাটের এক স্থানীয় বাসিন্দা। রাতেই তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গ্লোকাল ‘সারি’ হাসপাতালে। ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু কোনও ডোম বা শববাহী গাড়ির চালক দেহ নিতে রাজি হননি। দুপুরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে গিয়ে বৈঠক করেন অপরেশবাবু। পাঁচ জন ডোমকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, মাসে অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা এবং গ্লোকালের প্রতিটি মৃতদেহ সৎকারের জন্য এক হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সাফাইকর্মীরাও এ দিন নিরাপত্তার দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখান। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, অপরেশবাবু হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার সাফাইকর্মী, ধোপা, রোগী সহায়তা কেন্দ্রের কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা আগেই জানিয়েছিলেন, পর্যাপ্ত সংখ্যক পিপিই, গ্লাভস এবং এম৯৫ মাস্ক না পেলে কাজ করবেন না। এ দিন সিএমওএইচ-এর কাছ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে তাঁরা কাজে রাজি হন। কিন্তু পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে।

বেসরকারি সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের অধীনে থাকা সাফাইকর্মী, ধোপা, রোগী সহায়তা কেন্দ্রের কর্মী মিলিয়ে ৩০ জনের জন্য মাত্র ৬০টি এন৯৫ মাস্ক, দু'জোড়া করে গ্লাভস ও এক জোড়া করে গামবুট দেওয়া হয়েছে। সাফাইকর্মীদে়র অভিযোগ, তাঁদের পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সংস্থার দায়িত্বে থাকা জয়দীপ দত্ত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

নিরাপত্তারক্ষীরাও এ দিন পর্যাপ্ত পিপিই এবং এন৯৫ মাস্কের দাবি জানান। তাঁদের আক্ষেপ, প্রতি দিন চার শিফটে কাজ ও ফিভার ক্লিনিকে ডিউটি করার জন্য অন্তত ১০টি করে পিপিই এবং এন৯৫ মাস্ক দাবি করেছেন তাঁরা। কিন্তু কর্তারা সপ্তাহে ১০টির বেশি দিতে রাজি হননি। ফলে একই পিপিই এক জন টানা সাত দিন ব্যবহার করতে বাধ্য হবেন। গেটে কর্তব্যরত সকলে পিপিই বা এন৯৫ মাস্ক পরে থাকতেও পারবেন না। এক নিরাপত্তারক্ষীর দাবি, “আট দিন আগে মাত্র তিনটি পিপিই এবং এন৯৫ মাস্ক দিয়েছিল। একটা ব্যবহার হচ্ছে ফিভার ক্নিনিকে আর দুটো গেটে। দুপুর ও সন্ধ্যার শিফটে সকলকেই পিপিই বা এন৯৫ মাস্ক ছাড়া ডিউটি করতে হচ্ছে।”

নিরাপত্তারক্ষীদের সংস্থার পক্ষে সন্দীপ নিয়োগী বলছেন, “আমাদের দাবি, প্রতি দিন প্রতিটি শিফটে অন্তত একটা করে পিপিই এবং এন৯৫ মাস্ক দেওয়া হোক। অন্তত এক জন যেন সেগুলো পরে সামনে থেকে কাজ করতে পারে।” তবে হাসপাতাল সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার এ সব নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। সিএমওএইচ বলেন, “আমরা সবাইকেই মাস্ক এবং পিপিই দেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Cremation Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE