৪৫ ঊর্ধ্বদের লোকজনের জন্যই করোনার পর্যাপ্ত প্রতিষেধক নেই। যার জেরে টিকাকরণে ধাক্কা খাচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলা। প্রতিদিন জেলার বহু মানুষ প্রতিষেধক কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ১৮-৪৪বছর বয়সীদের ১মে থেকে টিকাকরণ অভিযানের কথা ঘোষণা করেছিল। যা শুনে মুর্শিদাবাদের বহু যুবক যুবতী অনলাইনে করোনার প্রতিষেধক পেতে নাম নথিভুক্ত করেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত টিকার অভাবে জেলায় ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণ এখনও চালু করতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। এরই মধ্যে দিন কয়েক আগে ১৮-৪৪বছর বয়সিদের টিকা পেতে নাম নথিভুক্তকরণে সরলীকরণ করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার থেকে অনলাইনের পাশাপাশি প্রতিষেধক কেন্দ্রে গিয়ে ‘স্পট রেজিস্ট্রেশন’ করেও টিকা নিতে পারবেন। পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থা না করে শুধুমাত্র টিকাকরণ নিয়ে নানা রকম নির্দেশিকায় ক্ষুদ্ধ জেলার বাসিন্দারা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ৭ লক্ষ হাজার করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। তাঁর মধ্যে ৫ লক্ষ ৪০ হাজার প্রথম ডোজ় এবং ২ লক্ষ ২ হাজার দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন। শুক্রবার জেলায় আরও প্রায় ৪৫ হাজার ৫০০ করোনার প্রতিষেধক এসেছে। তার মধ্যে ২২ হাজার কেন্দ্রীয় সরকার পাঠিয়েছে। যার ৪৫ ঊর্ধ্বদের দেওয়া যাবে। এছাড়া রাজ্য সরকারের রয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ টি। যা ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের বিশেষ ক্যাটেগরিতে থাকা লোকজনকে দেওয়া হবে। পর্যাপ্ত প্রতিষেধক এলে সর্ব সাধারণকে দেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘জেলায় দৈনিক ৩০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকাঠামো আছে। পর্যাপ্ত টিকা এলে তা সকলকে দেওয়া হবে।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ১মে থেকে ১৮-৪৪বছর বয়স্কদের টিকাদানের কথা অনেক আগেই ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ জেলায় পর্যাপ্ত টিকা পাঠায়নি। ফলে এখনও ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণই শুরু হয়নি। এরই মধ্যে কেন্দ্রে নিয়ম শিথিলের কথা বলছে। জলঙ্গির আসিফ ইকবাল বলেন, ‘‘ঘন ঘন নির্দেশিকা না দিয়ে, ঘন ঘন পর্যাপ্ত টিকা পাঠাক কেন্দ্রীয় সরকার। এতে জনগণের উপকার হবে।’’ বহরমপুরের হাসান শেখ আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত টিকা নেই। অথচ নাম দিয়েছে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণ অভিযান। আগে পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থা করুন তার পরে এসব অভিযানের কথা বলুন।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতরও জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদে টিকাকরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো রয়েছে। টিকার সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার সময়ে দৈনিক ২১৫ টি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার করোনার টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু করোনার টিকা পর্যাপ্ত না আসায় সব টিকা কেন্দ্র চালু করতে পারছে না। যেখানে দৈনিক ৩০হাজার করোনা টিকাকরণের পরিকাঠামো আছে, সেখানে দৈনিক ৩০হাজার টিকা স্বাস্থ্য দফতরের হাতে থাকছে না। যার জেরে বিশেষ ক্যাটেগরি ছাড়া টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে পরিবহণ কর্মী, হকার, বিদ্যুৎবণ্টন কোম্পানির কর্মী, সংশোধনাগারের আবাসিক, আইনজীবী, রুপান্তরকারী, হোমের আবাসিক, সব্জি বিক্রেতা, অটো-টোটো চালকের মতো বিশেষ ক্যাটেগরির লোকজনকে করোনার টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। শুক্রবার বহরমপুরে রুপান্তরকামীদের পাশাপাশি হোমের আবাসিক, আইনজীবীদের করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে।