লকডাউনের শুরুতে বাজারে জিনিসপত্র কিনতে যে ভাবে হামলে পড়তে দেখা গিয়েছিল রবিবারে তেমন কিছু চোখে পড়েনি। আঠারো দিন পার করে দেওয়া লকডাউনে ইতিমধ্যেই একটা বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে-ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে। করিমপুর, কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ, শান্তিপুর বা রানাঘাটের বিভিন্ন বাজারে এখনও পর্যন্ত প্রায় সব জিনিসের যোগানের তেমন কোনও সমস্যা নেই।
নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের যুগ্ম সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহার বক্তব্য, “গোটা জেলায় পর্যাপ্ত জিনিস মজুত আছে। পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখতে পেরেছি আমরা। লোকে তা বুঝেছেন। ফলে নতুন করে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে বাড়িতে প্রয়োজনের বেশি জিনিস মজুত করা বন্ধ হয়েছে। চাল, ডাল, তেল, নুন, আটা, ময়দা থেকে আনাজ, মাছ, মাংস সবই পর্যাপ্ত আছে।”
করিমপুরের বাজারে বাইরে থেকে আসা পোলট্রি মুরগির আমদানি অন্যান্য সময়ের থেকে কম হওয়ায় রবিবার সকালে ১৪০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি হয়েছে। ডিমের খুচরো দাম ছিল ৬ টাকা। আনাজ ব্যবসায়ীরা জানান দামে তেমন কোনও হেরফের হয়নি। কারণ, এলাকায় পটল, ঢেঁড়স, লঙ্কা, উচ্ছে অন্য সময় গাড়ি ভর্তি হয়ে বাইরে চলে গেলেও এখন তা হচ্ছে না বললেই চলে। তাই স্বাভাবিকের থেকে ঢের কম দামে আনাজ কিনতে পারছেন এলাকার মানুষেরা। ব্যতিক্রম পাতিলেবু। দক্ষিণ ভারতের লেবুর যোগান কিছু দিন ব্যহত হওয়ায় দাম একটু বেড়েছে। সাইজ অনুযায়ী ৪-৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিখানার ক্ষেত্রে কলকাতা থেকে যেমন গাড়ি আসছে, তেমনই রয়েছে স্থানীয় সরবরাহ। তবে দাম একটু চড়েছে। মুদি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আগে বর্ধমানের মিল থেকে চাল আসত। এখন নিজেরাই গাড়ি ভাড়া করে আনছেন। সেই কারণে কিলোগ্রাম প্রতি চালের দাম দু-এক টাকা বেড়েছে। কোনও ব্যক্তি বেশি সামগ্রী এক সঙ্গে চাইলেও তাঁকে তা দেওয়া হচ্ছে না। মিষ্টির দোকান সে ভাবে না খোলায় দুধের চাহিদা কম। ফলে দুধের দাম বাড়েনি। তবে দাম বেড়েছে মুসুর থেকে মটর-সহ সব রকম ডালের।
রানাঘাট মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মুদিখানা ব্যবসায়ী গৌর প্রামাণিক বলেন “জিনিসপত্রের এখন কোনও সমস্যা নেই। জিনিসও আছে। ক্রেতাও আছে।” অন্য দিকে, জেলার সর্বত্র বিড়ির দাম একই থাকলেও সিগারেটের দাম বেড়েছে। প্যাকেটে লেখা দামের থেকেও বেশি দামে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। কেন না সিগারেটের যোগান সরাসরি আসছে না। ঘুরপথে আনতে গিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন বিক্রেতারা। প্যাকেট প্রতি সিগারেট দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত। ৪৮ টাকার সিগারেটের প্যাকেট এখন ৬৫ টাকায় বিকোচ্ছে।
মাছের বাজারে চালানি মাছের চাহিদা তেমন নেই। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে মাছ আসছে না। বদলে দেশি মাছের বিক্রি বেশি। বড় রুই সাড়ে ৩০০ ও কাতলা মাছ ৪০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি হয়েছে। একটু ছোট মাছ দু’শো টাকার মধ্যে।