Advertisement
E-Paper

এই পঁচিশে বনকুঞ্জে নেই তিনি

এ বার অবশ্য সে সব কিছুই হচ্ছে না। একটু সংশোধন করে মূল উদ্যোক্তা শান্তিপুরের সত্যনারায়ণ গোস্বামী বলেন, “রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন আপন মনের মাধুরী মিশায়ে পালন করতে তো বাঁধা নেই।”

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২০ ০৩:৩৪
বৃষ্টিস্নাত: কৃষ্ণনগর পোস্টঅফিস মোড়ে। ছবি: প্রণব দেবনাথ

বৃষ্টিস্নাত: কৃষ্ণনগর পোস্টঅফিস মোড়ে। ছবি: প্রণব দেবনাথ

বত্রিশ বছর পর এই প্রথম জন্মদিনের সকালে বনকুঞ্জে আসছেন না রবীন্দ্রনাথ!

তাই সুদীপ্ত, অদ্রিপ, দ্বৈপায়ন, রাহুল, প্রদেষ্ণা, শ্রীদত্তা, প্রবর্তকের ভীষণ মনখারাপ। শান্তিপুরের বড়গোস্বামী বাড়ির বনকুঞ্জে পঁচিশের সকালের কবিপ্রণাম ঘিরে আগ্রহ থাকে প্রায় গোটা নদিয়া জেলা জুড়েই। গায়ক, কবি, শিল্পী, রবীন্দ্রানুরাগী থেকে নিছক শ্রোতা মিলিয়ে ছ’শো থেকে সাতশো মানুষের উপচে পড়া উপস্থিতি। প্রভাতী কবিপ্রণামে যোগ দিতে জেলার নানা প্রান্ত থেকে আসতেন শিল্পীরা। সকালে শুরু হয়ে শেষ হতে দুপুর গড়িয়ে যেত। তার মধ্যেই খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা। দেড় মাস ধরে জনাতিরিশ নানা বয়সের মানুষের পরিশ্রমে সেজে উঠত বনকুঞ্জে পঁচিশে বৈশাখের সকাল।

এ বার অবশ্য সে সব কিছুই হচ্ছে না। একটু সংশোধন করে মূল উদ্যোক্তা শান্তিপুরের সত্যনারায়ণ গোস্বামী বলেন, “রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন আপন মনের মাধুরী মিশায়ে পালন করতে তো বাঁধা নেই।” তাই বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্জন বনকুঞ্জে রবীন্দ্র-প্রতিকৃতির চারপাশে রঙিন কাপড় ঝোলানোর ফাঁকে তিনি বলছিলেন, “প্রতি বার আমরা সকলকে কিছু উপহার দিই। এবারে সব থমকে গেল।”

তবুও অনেকে নিজের মতো করে পঁচিশের সকালে আসবেন কবিকে শ্রদ্ধা জানাতে। যেমন, নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক চট্টোপাধ্যায় সত্যনারায়ণকে জানিয়েছেন— “রবীন্দ্রনাথ চিরকাল মুক্তির কথা বলেছেন। সুতরাং, তাঁর জন্মদিনের সকালে আমি আসবো।”

এ ভাবেই অন্য বার পঁচিশে বৈশাখের সকাল থেকেই উদ্যাপন শুরু হয়ে যেত তাঁকে ঘিরে। বাড়ির বৈঠকখানা থেকে স্কুলের মাঠ, নামী হল থেকে পাড়ার রোয়াক— রবীন্দ্রজয়ন্তীতে মেতে উঠত সবাই। কিন্ত লকডাউনে এ বার সে সব বন্ধ। তাই ঘরে বসেই কবিপ্রণামের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সকলে। নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, রানাঘাট, তেহট্ট— সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে অনলাইন কবিপ্রণামের তোড়জোড় চলছে। লকডাউনে ঘরে বসে থাকার সুবাদে নবদ্বীপের সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপ গড়ে উঠেছে। সেখানেই হয়েছিল নববর্ষ উদযাপন। সে গ্রুপের প্রধান নাট্যকর্মী মোহন রায় জানালেন “পয়লার পর এ বার পঁচিশে বৈশাখের প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ হয়েছে।” শান্তিপুরের উদয়ন মুখোপাধ্যায় লকডাউনের একঘেয়েমি কাটাতে প্রথম থেকেই সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তিনিও আয়োজন করেছেন রবীন্দ্র-প্রণামের।

একটা সময় ছিল যখন বৈশাখ মাস পড়লেই পাড়ার ক্লাব, গান শেখার স্কুল বা ছবিটা বদলে যেত। ফাঁকা ঘর হয়ে উঠত মহলা কক্ষ। ফাঁকা ঘর না মিললে টিচার্স রুমেই শুরু হয়ে যেত পঁচিশের প্রস্তুতি। বাংলার মাস্টারমশাই যত্ন করে শেখাতেন ‘বীরপুরুষ’ কিংবা ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’। কোনও স্কুলে পঁচিশ বৈশাখে মঞ্চস্থ হত নাটক। ওই অনুষ্ঠানে যাঁরা অংশ নিত, ওই ক’দিন তাদের টিফিনের পর ক্লাস করতে হত না। পঁচিশের সকালে স্কুলের ছবিটাই যেত বদলে। স্কুলের রবীন্দ্রজয়ন্তীর এমন স্মৃতি এখনও টাটকা অনেকের। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সেই উদ্যাপন ছবিটা আমূল বদলে গিয়েছে। তবে পঁচিশে বৈশাখে পিছিয়ে নেই রাজনৈতিক মহলও। কৃষ্ণনগর শহর তৃণমূল যুব কংগ্রেসের উদ্যোগে তাদের নিজস্ব পেজে সকাল সাতটা থেকে পালিত হবে কবিপ্রণাম, জানালেন যুব নেতা কুনাল চৌধুরী।

প্রতি বছর কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে রাজ্য সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দফতরের আয়োজনে পালিত হত রবীন্দ্রজয়ন্তী। এ বারে কবির জন্মদিনে তারই নামাঙ্কিত শূন্য প্রেক্ষাগৃহ কাউকে খুঁজবে কি?

Coronavirus Coronavirus Lockdown Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy