—প্রতীকী চিত্র।
রানিনগরে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছিল বিরোধীরা। আর সেই লড়াইয়ের ফলও পেয়েছিল। রানিনগর ২ ব্লকের মোট ৯টা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টির দখল নিয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু বছর ঘুরতেই সবটাই কেমন যেন ওলোটপালট হয়ে গেল রানিনগর জুড়ে। লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীর পরাজয়ের পর একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দল বদল করে ভিড়ছেন শাসক শিবিরে। দিন কয়েকের মধ্যেই পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সহ একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য যোগ দিয়েছে শাসক দলে। আর যোগ দেওয়ার পরেই শুনিয়েছে উন্নয়নের বাণী। সব প্রধানের একটাই বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন দেখেই যোগ দিলেন শাসক দলে। কিন্তু বছরখানেক আগেই সেই উন্নয়ন চোখে পড়েনি কেন? এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইনি প্রধানরা। তবে কোনও কোনও প্রধান আড়ালে আবডালে বা ইশারায় বোঝাতে চেয়েছেন শাসক নেতা আর প্রশাসনের চাপে পড়েই বাধ্য হয়েই তারা ভিড়ে গিয়েছেন শাসক দলে।
গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই শাসকবিরোধী লড়াইয়ে তেতে উঠেছিল সীমান্তের রানিনগর ২ ব্লক। শাসকের হুঙ্কার থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছিল বিরোধীরা। সে কারণেই বাম নেতা মহম্মদ সেলিম এই মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনে লড়াই করতে আসেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে রানিনগরের মাটিতে বারবার ছুটে এসেছে মহম্মদ সেলিম থেকে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। মজবুত সংগঠনও তৈরি করেছে তারা। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে বাম কংগ্রেস জোটের প্রার্থী সেলিম হেরে যাওয়ার পর একেবারে বানের জলে ভেসে যাওয়ার মতই একের পর এক পঞ্চায়েত প্রধান ভেসে ভিড়ে গিয়েছে শাসক দলে। ইতিমধ্যেই রানিনগর দুই পঞ্চায়েত সমিতির কালিনগর ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ছাড়াও কাতলামারি ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান যোগ দিয়েছে তৃণমূলে। রানিনগর দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান গোলাম মোর্তোজাও ভিড়ে গিয়েছেন সেখানে। অন্যদিকে জলঙ্গিতেও খয়রামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান মিঠুন বিশ্বাস শাসক দলে যোগ দিয়েছেন দিন কয়েক আগে।
তবে এই দলবদল নিয়ে প্রধানরা খুব বেশি মুখ খুলতে চান নি। রানিনগর দুই পঞ্চায়েতের প্রধান গোলাম মোর্তজা বলেন, ‘‘ফোনে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করব না। যা বলার সামনাসামনি বলব।’’ জলঙ্গির খয়রামারীর প্রধান মিঠুন বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটা ধাক্কা আসছিল। আর জলঙ্গির বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলের সাংগঠনিক দক্ষতা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।’’ বাদবাকি প্রধানদের একটাই বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জন্যই তারা যোগ দিয়েছেন শাসক দলে। যদিও বছরখানেক আগে এই উন্নয়ন কেন নজরে পড়েনি সেই প্রশ্নের উত্তরে সকলেই চুপ থেকেছেন। আর ব্যস্ততা দেখিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন কাতলামারী দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ধনঞ্জয় মন্ডল।
এবারের গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোচবিহার জেলারও ১২৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০৪ টি দখল করে তৃণমূল। বাকি ২৪ টি দখল করে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার আসনে বিজেপিকে পরাজিত করে তৃণমূল। এর পরে এখন পর্যন্ত বিজেপির দখলে থাকা আরও ১৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে নেয় রাজ্যের শাসক দল। বিজেপির হাতে রয়েছে এখন ৯ টি গ্রাম পঞ্চায়েত।
বিজেপির প্রাক্তন প্ৰতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক বলেন, "জোর করে ভয় দেখিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের দলে টানছে তৃণমূল। তাতে কোনও লাভ হবে না। কারণ মানুষ সময় মতো সমস্তকিছুর জবাব দেবে।"
মুর্শিদাবাদে গোটা বিষয় নিয়ে রানিনগর দুই ব্লকের কংগ্রেস সভাপতি মমতাজ বেগম ওরফে হীরার বক্তব্য, ‘‘আদতে বিরোধী দলের প্রধান হয়ে লুটেপুটে খাওয়া যাচ্ছে না। এই ঘটনায় সংগঠনের কোনও ক্ষতিও হবে না।" অন্যদিকে রানিনগরের বিধায়ক তৃণমূলের সৌমিক হোসেনের দাবি, "একাধিক প্রধান থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য চলে এসেছেন আমাদের দলে। আরও অনেকেই যোগাযোগ করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy