দু’দিন আগেই মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে লোকসভায় ঝড় তুলে দিয়েছেন সদ্য কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিন বছর আগে এই মহুয়াই করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে সিপিএমের প্রার্থী সমরেন্দ্রনাথ ঘোষকে পরাজিত করেছিলেন। কিন্তু সে বার আসলে দলেরই একটি অংশ তাঁকে হারানোর ষড়যন্ত্র করেছিল বলে অভিযোগ তুললেন সদ্য সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত সমরেন্দ্রনাথ।
১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসা ইস্তক করিমপুর কেন্দ্রে সিপিএম কখনও হারেনি। এমনকি ২০১১ সালে তৃণমূল ঝড়ে যখন রাজ্য জুড়ে বামেদের বহু দুর্গ ধূলিসাৎ, সে বারই জিতে বিধায়ক হন সমরেন্দ্রনাথ ওরফে সমর ঘোষ। কিন্তু সেই বারও দলের কিছু লোক তাঁকে হারানোর চক্রান্ত করেছিল বলে সমরের দাবি। মহুয়া সাংসদ হয়ে যাওয়ায় করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন আসন্ন। সেই ভোটে বিশেষ কাউকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই এ বার তাঁকে একেবারে দল থেকেই তাড়িয়ে দেওয়া হল বলে তিনি অভিযোগ তুলছেন।
সোমবার জরুরি বৈঠক ডেকে দলবিরোধী কাজ করার অপরাধে সমর ঘোষকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএমের করিমপুর এরিয়া কমিটি। সে দিনই জেলা কমিটি সেই সুপারিশ মঞ্জুর করে। বুধবার সমর অভিযোগ করেন, “২০১১ সালে দলেরই একটা অংশ সক্রিয় ভাবে আমাকে পরাজিত করতে সচেষ্ট ছিল। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় বার বিধানসভা ভোটে লড়ার সময়েও একই ষড়যন্ত্র হয়েছিল। প্রথম বার জিতলেও পরের বার দলের একটা অংশের কট্টর বিরোধিতার জেরেই আমায় হারতে হয়েছিল।’’
সিপিএমের দীর্ঘদিনের শক্ত ঘাঁটি করিমপুরে গোষ্ঠীবাজি এবং বাছাই করা নেতা বা বিধায়ককে কোণঠাসা করার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থাকাকালীন সমরেন্দ্রনাথ সান্যাল, চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস, প্রফুল্ল কুমার ভৌমিক বিধায়ক হয়েছিলেন। কিন্তু গোষ্ঠী কোন্দলের কারণে তাঁদের পরে কোণঠাসা হতে হয়েছিল। অন্তর্কলহে জেরবার হয়ে চার বারের বিধায়ক চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস ১৯৯৮ সালে ১৫৪ জন পার্টি সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হরকিষাণ সিং সুরজিতের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন এবং পার্টি সদস্য পদ নবীকরণ করাননি। সেই ঐতিহ্যই চলে আসছে।
সম্প্রতি সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাওয়া নেতাকর্মীদের একাংশের মতে, যাঁরা সমর ঘোষকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদেরও অনেকে নানা দোষে অভিযুক্ত। এমনকি নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে-ও দলের নির্দেশিকা না মেনে তিন বারের জোনাল সম্পাদকের মেয়াদ উত্তীর্ণ ব্যক্তিকেই এরিয়া সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। বর্তমানে করিমপুর এরিয়া কমিটিতে এমন সদস্যও আছেন যাঁরা সময় মতো সদস্যপদ নবীকরণ করাননি। সমরও অভিয়োগ করছেন, ‘‘নানা অভিযোগে অভিযুক্তেরাই এখন সিপিএমের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক। আমায় না সরালে উপনির্বাচনে টিকিট দিতে হত, নিজেদের লোকেদের প্রার্থী করা যেত না বলেই মিথ্যা অভিযোগ এনে আমায় বহিষ্কার করা হয়েছে।”
তবে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার যে অভিযোগে সমরেন্দ্রনাথকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা কিন্তু কেউই উড়িয়ে দিতে পারছে না। খোদ বিজেপির উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারও তা স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন। সমর ঘোষ দলে থাকলে তিনিই যে উপনির্বাচনে প্রার্থিপদের প্রধান দাবিদার হতেন তা স্বীকার করেও সিপিএমের এরিয়া কমিটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আসাদুল খান বলেন, ‘‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল।’’ বাকি কোনও বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে ফোন ধরেননি।