Advertisement
E-Paper

না জেতা পর্যন্ত লড়ে যাবেন, পণ করছেন ধনঞ্জয়

অশীতিপর বৃদ্ধ রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়ের বিয়েপ্রীতি নিয়ে দীনবন্ধু মিত্র লিখেছিলেন ‘বিয়েপাগলা বুড়ো’। একটি প্রহসন। ১৮৬৬ সালে লেখা সেই প্রহসনটি কলকাতার ন্যাশনাল থিয়েটারে অভিনীত হয় ১৮৭৩ সালে।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫৯
ধনঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়

ধনঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়

অশীতিপর বৃদ্ধ রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়ের বিয়েপ্রীতি নিয়ে দীনবন্ধু মিত্র লিখেছিলেন ‘বিয়েপাগলা বুড়ো’। একটি প্রহসন। ১৮৬৬ সালে লেখা সেই প্রহসনটি কলকাতার ন্যাশনাল থিয়েটারে অভিনীত হয় ১৮৭৩ সালে। বিয়েপাগলা বুড়ো রাজীবলোচনের নাম ভূমিকায় অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফির অভিনয় দেখে দর্শকেরা ধন্য ধন্য করেছিলেন।

সেই ঘটনার আড়াইশো বছর পরে মুর্শিদাবাদ জেলার ‘ভোটপাগলা যুবক’ ধনঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকায় অভিনয় করতে কোনও অভিনেতাকে মঞ্চে নামতে হয়নি। ৪১ বছরের যুবক নিজেই নেমেছেন ভোটের ময়দানে। সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর এই ৪১ বছরে ১১ বার প্রার্থী হয়েছেন তিনি। কলেজ জীবনে বার দু’য়েক জয়ের মুখ দেখলেও পঞ্চায়েত, বিধানসভা ও সাংসদ নির্বাচনে জয় মেলেনি। জামানতটাই জব্দ হয়ে গিয়েছে বার বার।

এ বারের বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণা হবে আগামী ১৯ মে। ফলাফল যা-ই হোক তিনি দমবার পাত্র নন বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ধনঞ্জয়। তিনি বলেন, ‘‘ফের ভোটে দাঁড়াব। আগের থেকে বেশি শক্তি নিয়ে ভোটে দাঁড়াব।’’

জিয়াগঞ্জের রানি ধন্যা কুমারী কলেজের শারীরশিক্ষার আংশিক সময়ের শিক্ষক ধনঞ্জয়ের বাড়ি সাগরদিঘির পোপাড়া। ১৯৯২ সালে জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ সিংহ কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞানের ছাত্র ধনঞ্জয় এসএফআইয়ের হয়ে দাঁড়িয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শ্রেণি প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। সেই শুরু। কলেজ ছেড়ে ১৯৯৩ সালে ভর্তি হন বীরভূমের রামপুরহাট কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে। তিনি বলেন, ‘‘সে বার কলেজে ছাত্র পরিষদের হয়ে দ্বাদশ শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১২০০ ভোটের মধ্যে ৯০০ ভোট পেয়ে জিতি।’’ দু’টি পৃথক সংগঠন থেকে টানা দু’বার জেতায় রাজনীতিতে আরও জড়িয়ে পড়েন। তৃতীয়বার বিএ পড়ার সময় এবিভিপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান ২০০০ সালে। তাতে তিনি দমেননি। উল্টে আরও বেশি করে সংসদীয় রাজনীতিতে ডুবে যান। এর পর তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি হওয়ার সুবাদে পরপর দু’বার সাগরদিঘির বারালা ও মণিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।

এর পর তাঁকে তৃণমূল টিকিট না দেওয়ায় শরদ পাওয়ারের এনসিপি থেকে টিকিট পেয়ে সাগরদিঘির মোড়গ্রাম থেকে জেলা পরিষদের আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ধনঞ্জয় বলেন, ‘‘দল টিকিট দিলেও ভোট প্রচারের খরচ দেয় না। ফলে গোলাভর্তি ধান বেচে ভোটের খরচ মেটাই।’’ সে বারও কপাল মন্দ। তাঁর জামানত জব্দ হয়।

ইতিমধ্যে তিনি বিয়ে করেছেন। সন্তানও হয়েছে। ভোটবাতিক নিয়ে মাঝেমধ্যেই পরিবারের চাপের মুখে পড়তে হয়। ভোট-পাগল স্বামীকে বাগে আনতে না পেরে স্ত্রী সরে যান। এমন সময় জঙ্গিপুরের সাংসদ পদত্যাগ করে প্রণব মুখোপাধ্যায় দেশের রাষ্ট্রপতি হলেন। জঙ্গিপুরের শূন্য আসনে উপ-নির্বাচন। কোনও দল টিকিট দিল না। তাতে কি! রাষ্ট্রপতি-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অগত্যা নির্দল হয়েই দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি। ধনঞ্জয় বলেন, ‘‘চাকরির সামান্য টাকা। তাতেই ভোটে ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। তাতে কি জেতা যায়?’’ এ বারও জামানত জব্দ। ভোটযুদ্ধে তিনি এ বার এক্কেবারে ‘প্রহারেণ ধনঞ্জয়’। তবুও ভোটাসক্ত ধনঞ্জয়ের ভোটপ্রীতিতে একচুল চিড় ধরেনি।

জঙ্গিপুরে জিতে যাওয়ায় অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের নলহাটির বিধানসভা আসনটি শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে ওই আসনে উপ-নির্বাচন। জঙ্গিপুর লোকসভার উপ-নির্বাচনের হারের বদলা নিতে ধনঞ্জয় এ বার লড়তে নামলেন নলহাটি উপ-নির্বাচনে। এ বারও নির্দল এবং ফের জামানত বাজেয়াপ্ত।

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি বিএসপি-র প্রার্থী হয়ে সাগরদিঘি বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ১২৪৩ ভোট পেয়ে জামানত খোয়ান। তবুও সাংসদ-বিধায়ক হওয়ার স্বপ্ন তাঁর আজও পিছু ছাড়েনি। তিনি বলেন, ‘‘২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গিপুর থেকে ‘আমরা বাঙালি’র হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।’’ ১২ লক্ষ ভোটের মধ্যে মাত্র ৩০১৯টি ভোট পেয়ে ফের জামানত যায়। চলতি বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে বহুজন সমাজবাদী পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। জামানত জব্দ হলেও কুছ পরোয়া নেহি। তাঁর লক্ষ্যের কোনও পরিবর্তন হবে না, আগাম জানিয়েছেন ধনঞ্জয়।

election Dhananjay Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy