Advertisement
E-Paper

বন্ধ বৈদ্যুতিন চুল্লি, দুর্ভোগ

মরেও সুখ কই? গত দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ধুলিয়ানের একমাত্র বৈদ্যুতিন চুল্লিটি। শ্মশানটি ধুলিয়ান পুরসভার নিয়ন্ত্রণে। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের গঙ্গা অ্যাকশন প্রকল্পে বৈদ্যুতিক চুল্লিটি চালু হতে কাঠের জোগান বন্ধ করে দেয় পুরসভা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৫ ০২:১৬

মরেও সুখ কই?

গত দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ধুলিয়ানের একমাত্র বৈদ্যুতিন চুল্লিটি। শ্মশানটি ধুলিয়ান পুরসভার নিয়ন্ত্রণে। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের গঙ্গা অ্যাকশন প্রকল্পে বৈদ্যুতিক চুল্লিটি চালু হতে কাঠের জোগান বন্ধ করে দেয় পুরসভা। ফলে কাঠের চুল্লির জন্যে চড়া দামে কাঠ কিনে দাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন মৃতের আত্মীয়-পরিজনেরা। পরিস্থিতি দেখে অনেকেই মৃতদেহ নিয়ে চলে যাচ্ছেন পাশের রঘুনাথগঞ্জ শ্মশানে।

ধুলিয়ানের পুরপ্রধান সুবলকুমার সাহা জানান, চুল্লিটি চালু হওয়ার পর থেকে প্রায়ই বিকল হয়ে যাচ্ছে। এই শ্মশানে আগে গড়ে পাঁচ-ছ’টি করে মৃতদেহ আসত। ঝাড়খণ্ডের পাকুড়, হিরণপুর, বারহারোয়া থেকেও এই ধুলিয়ান শ্মশানে দাহ করতে নিয়ে আসতেন বহু মানুষ। বার বার চুল্লি বিকল হওয়ায় শ্মশানে শবদেহের সংখ্যা কমতে কমতে অর্ধেকে ঠেকেছে। এই অবস্থায় চুল্লিটি রক্ষণাবেক্ষণ করাই পুরসভার কাছে দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দায় এড়াতে পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয় চুল্লিটির রক্ষণাবেক্ষণের ভার একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার। চুক্তি হয় দাহ বাবদ হাজার টাকা করে আদায় করা হবে। অর্ধেক নেবে ওই সংস্থা। বাকিটা পাবে পুরসভা।

কিন্তু বার বার চুল্লিটি বিকল হওয়ায় আর্থিক আয় যেমন কমেছে, তেমনই বে ড়েছে চুল্লির মেরামতি ব্যয়ও। বর্তমানে চুল্লির ফার্নেস ভেঙে গেছে। অন্য কিছু যন্ত্রপাতিও খারাপ। সারাতে মোটা টাকার ধাক্কা। এই পরিস্থিতিতে চুল্লির দায় ছেড়ে দিতে চাইছে বেসরকারী সংস্থাটি। অকেজো চুল্লি সারাতে গরজ নেই ধুলিয়ান পুরসভারও। মাঝে পড়ে শবদাহ কার্যত বন্ধ রয়েছে ধুলিয়ান শ্মশানে। পুরসভা থেকে শবযাত্রীদের বলা হয়েছে মৃতদেহ কাঠের চুল্লিতে দাহ করতে। তবে কাঠ মৃতের আত্মীয়দেরই সংগ্রহ করতে হবে। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘মিস্ত্রি এনে চুল্লিটি মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। অনুমান ছিল দিন তিনেকের মধ্যে চুল্লিটি সারানো হয়ে যাবে। শ্মশানে গিয়ে যা দেখে এসেছি তাতে আরও পাঁচ-ছ’দিন লাগবে।’’

চুল্লি সারানোর কাজে যুক্ত মিস্ত্রিরা অবশ্য জানাচ্ছেন, আরও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। তাঁরা জানালেন, চুল্লির ফার্নেস আগুনের তাপে প্রতি বছর ভাঙবে। ফার্নেস ঠান্ডা হতে পাঁচ দিন, পরিস্কার করতে দু’দিন এবং সারিয়ে ফের লাগাতে পাঁচ দিন ছাড়াও বাড়তি কিছু সময় লাগে। শ্মশানে দ্বিতীয় চুল্লি তৈরি না করলে ফি-বছর মোটামুটি পঁচিশ দিন চুল্লি বন্ধ রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে কাঠের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকলে দুর্ভোগে পড়তে হবে মানুষকে।

গত বুধবার চারটি মৃতদেহ এসেছিল ধুলিয়ান শ্মশানে। চুল্লি বিকল দেখে দু’টি মৃতদেহ চলে যায় রঘুনাথগঞ্জ শ্মশানে। ঝাড়খণ্ডের হিরণপুর গ্রামের মহেন্দর সিংহ বলেন, ‘‘শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি বিকল তা জানতাম না। বাড়িতে বহু কাঠ রয়েছে। জানলে মৃতদেহের সঙ্গেই নিয়ে আসতে পারতাম। শেষ পর্যন্ত তিনশো টাকা মণ দরে ৫ মণ কাঠ কিনে চুল্লি সাজাতে হয়।’’ একই কথা জানালেন ধুলিয়ান শ্মশান পাড়ার সুশান্ত সরকার। পাকুড় থেকে আশি বছরের মৃতা মা কমলা দাসীকে শ্মশানে নিয়ে এসেছিলেন অজয় খাটুয়া। অজয়বাবু বলেন, ‘‘ঘণ্টা দু’য়েক ঘোরাঘুরির পরে মণ চারেক জলে ভেজা কাঁচা কাঠ পেয়েছি, তা-ও চড়া দামে। তা দিয়ে কাজ সারতে হয়েছে।’’

ভাগীরথীর তীরে প্রাচীন এই শ্মশানে মৃতদেহ সৎকারের জন্য ঝাড়খণ্ডের বহু মানুষ নিয়মিত আসেন। কাঠ পুড়িয়ে দিনে গড়ে সাত-আটটি শবদাহের ফলে শুধু বায়ু দূষণ নয়, বহু শব অসমাপ্ত অবস্থায় নদীতে ফেলে দেওয়ায় আশপাশের মানুষ ভাগীরথীর জল ব্যবহার করতে পারতে না! শহরের একটি ক্লাবের সভাপতি শিক্ষক প্রভাত কুণ্ডুর মতে, একটি মৃতদেহ দাহ করতে পাঁচ কুইন্ট্যাল কাঠ লাগে। অন্তত দু’টি গাছ নষ্ট হয়। প্রতি বছর শবদাহ করতে ৬ কোটি গাছ ধংস হয় বলে দাবি প্রভাতবাবুর। মৃতদেহের না পোড়া অংশ গঙ্গার জলে মিশে গঙ্গার দূষণকেও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

বছর পাঁচেক আগে গঙ্গা দূষণ রোধ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় বৈদ্যুতিক চুল্লিটি চালু করা হয়। চুল্লি চালুর ফলে শবদাহে যেমন কম সময় লাগত। তেমনি গঙ্গা দূষণেও রাশ টানা যেত। তবে রাজ্যের পুর কারিগরি দফতর সূত্রে আশার কথা শোনা গিয়েছে। দফতর সূত্রে খবর, ‘নমামি গঙ্গা প্রকল্পে’ ধুলিয়ান, জঙ্গিপুর, জিয়াগঞ্জ, বহরমপুর-সহ রাজ্যের ১০টি বৈদ্যুতিক চুল্লি মেরামতি ও সংস্কারের জন্য ডিপিআর তৈরি করা হচ্ছে। একটি সংস্থাকে সে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থা কার্যকরি হলে ছোটো ছোটো পুরসভার অধীন শ্মশানগুলিতে বৈদ্যুতিক চুল্লি চালু রাখা সহজ হবে বলে মত পুরপ্রধানের।

Electronic furnace Dhulian jharkhand pakur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy