E-Paper

জিআই পেল ছানাবড়া, খুশির হাওয়া জেলায়

বছর তিনেক আগে ছানাবড়ার জিআই তকমা পেতে তৎপরতা শুরু করেছিল জেলা প্রশাসন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ১০:১৬
ছানারবড়া।

ছানারবড়া। —ছবি : সংগৃহীত

বছর কয়েক আগে রসগোল্লার জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন) তকমা পেতে ওড়িশার সঙ্গে লড়াই বেঁধেছিল এই বঙ্গের। তবে সেই লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছিল পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যের ভাগ্যে জুটেছিল রসগোল্লার জিআই তকমা। তখন থেকেই মুর্শিদাবাদের ছানাবড়ার জিআই তকমার দাবি উঠেছিল। অবশেষে সেই তকমা জুটেছে। এতে খুশি জেলার বাসিন্দারা।

বছর তিনেক আগে ছানাবড়ার জিআই তকমা পেতে তৎপরতা শুরু করেছিল জেলা প্রশাসন। জেলা শিল্প কেন্দ্র ও মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি জিআইয়ের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। রাজ্য সরকার আবেদন করে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অব ইন্ডিয়ার’ কাছে। তারাই সব কিছু খতিয়ে দেখে ছানাবড়াকে ‘জিআই’ শংসাপত্র দিয়েছে। দিন কয়েক আগে এ রাজ্যের আরও ৬টি জিনিসের সঙ্গে ছানাবড়াও জিআই শংসাপত্র পায়।

ঠিক কবে এবং কোথায় ছানাবড়ার উৎপত্তি— তার নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অনুমান করা হয়, নবাবি আমল থেকে এই মিষ্টির প্রচলন। মুর্শিদাবাদের নিমতলায় নিমাই মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির মিষ্টির দোকান ছিল। কথিত আছে, সেখান থেকেই নবাব দরবারে ছানাবড়া সরবরাহ করা হত। এও কথিত রয়েছে, কাশিমবাজারের মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর পৃষ্ঠপোষকতায় ছানাবড়া বহরমপুর ছাড়িয়ে বাংলার বাইরে পরিচিতি লাভ করে। ‘বাংলার খাবার’—নামে বইয়ের লেখক প্রণব রায় তাঁর বইয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার খাবারের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের ছানাবড়ার কথা তুলে ধরেছেন। ছানাবড়ার বিখ্যাত কারিগর ছিলেন সৈদাবাদের পটল ওস্তাদ ও গোপেশ্বর সাহা। পটল ওস্তাদ ও গোপেশ্বর সাহা একবার এক মণ (চল্লিশ কেজি) ওজনের ছানাবড়া তৈরি করেছিলেন। মুর্শিদাবাদ শহরে (লালবাগে) ছানাবড়ার উৎপত্তির কথা বলা হলেও এখন অবশ্য বহরমপুর শহরের ছানাবড়ার নাম ছড়িয়ে পড়েছে। ২০০৯ ও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এসে বহরমপুর শহরের টেক্সটাইল কলেজ মোড় লাগোয়া একটি মিষ্টির দোকানে ছানাবড়া খেয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী।

কারিগরেরা জানান, উৎকৃষ্ট মানের ছানা ও আটা ভাল করে বেটে গোল বলের মতো করা হয়। তার ভিতরে বড় এলাচ দানা দেওয়া হয়। এর পরে খাঁটি ঘিয়ে ভাজা শুরু হয়। এমন ভাবে ভাজতে হবে যেন তার রঙ লালচে-কালো হয় এবং জালির মতো অংশ তৈরি হয়। এর পরে রসে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ছানাবড়ার ভিতরের জাল একেবারে মৌচাকের মতোদেখতে হয়।

বহরমপুরের প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সুমনকল্যাণ ঘোষ বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের লড়াই শেষে এই স্বীকৃতি মেলায় আমরা খুব খুশি।’’ আমরা চাই ছানাবড়া বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক। মানুষ আরও বেশি করে ছানাবড়ার খান।’’ মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘দীর্ঘ লড়াই শেষে মুর্শিদাবাদের ছানাবড়ার তকমা পাওয়ায় আমরা খুশি। এই মিষ্টির আরও শ্রীবৃদ্ধি হোক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Berhampore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy