Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নাবালিকার বিয়ে রুখল স্কুলের বন্ধুরা 

কিন্তু বাদ সাধল ওরা। ওরা সলুয়া অ্যাকাডেমির কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়ে। যারা বুধবার ধানতলা থানার জাফরনগর ধর্মতলায় ওই নাবালিকার বাড়িতে পৌঁছে যায়  প্রধান শিক্ষক অচিন্ত্য চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে। 

 নাবালিকা ও বন্ধুরা। নিজস্ব চিত্র

নাবালিকা ও বন্ধুরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধানতলা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:১০
Share: Save:

বাইরে থেকে বোঝার উপায় ছিল না। চব্বিশ ঘণ্টা পরেই ওই বাড়ির মেয়ের বিয়ে। খুব সামান্য লোককে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ঘর ও উঠোন লেপার কারণে বোঝা যাচ্ছিল, ওই বাড়িতে কিছু একটা উৎসব বা পুজো হতে চলেছে। আদতে প্রস্তুতি চলছিল বিয়ের আসর সাজানোর। গোপনে নাবালিকার বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল ওই বাড়িতে।

কিন্তু বাদ সাধল ওরা। ওরা সলুয়া অ্যাকাডেমির কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়ে। যারা বুধবার ধানতলা থানার জাফরনগর ধর্মতলায় ওই নাবালিকার বাড়িতে পৌঁছে যায় প্রধান শিক্ষক অচিন্ত্য চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে।

পরে সেখানে রানাঘাট ২ নম্বরের যুগ্ম বিডিও তপন বিশ্বাস, রঘুনাথপুর হিজুলি-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জয়প্রকাশ লস্কর গিয়েছিলেন। এই ভাবে তাঁদেরকে ওই বাড়িতে আসতে দেখে গ্রামের লোকজন অনেকেই হকচকিয়ে যান। পরে সকলে বিষয়টি জানতে পারেন।

জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকা আড়ংঘাটা সলুয়া অ্যাকাডেমির সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে বছর পঁচিশের এক যুবকের সঙ্গে ওই চোদ্দো বছরের মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যখন নাবালিকার বাড়িতে কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা এবং প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত হয়, সে সময়ে মেয়েটির মা বাড়িতে ছিলেন না। নাবালিকার বাবা বাসুদের বিশ্বাস বাড়িতে ছিলেন। উপস্থিত সকলেই মেয়েটির বিয়ে বন্ধ করার বিষয়ে তাঁকে বোঝাতে থাকেন। প্রথমে রাজি না হলেও পরে বাসুদেব বিয়ে বন্ধে রাজি হয়ে যান। এ ব্যাপারে তিনি একটি মুচলেকাও দিয়েছেন।

এ দিন বাসুদেব বলেন, “নির্দিষ্ট বয়সের আগে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করা ঠিক হয়নি। আঠারো বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেব না।”

এর পরেই শেষে সকলে মিলে ছেলেটিদের বাড়িতে যান। সেই সময়ে পাত্রের মা বাড়িতেই ছিলেন। তাঁকে বোঝানো হয়, এই বয়সের মেয়ের সঙ্গে তাঁর ছেলের বিয়ে দিলে ছেলেটিই বিপদে পড়বে। শেষে যুবকের মা-ও নাবালিকা বিয়ে বন্ধে রাজি হয়ে যান।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক মাস আগে বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির ২০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে কন্যাশ্রী ক্লাব গঠন করা হয়েছে। তারা কয়েক দিন ধরে লক্ষ করে, ওই নাবালিকা স্কুলে আসছে না। কেউ দীর্ঘদিন স্কুলে না এলে তার বিয়ে ঠিক হওয়ার আশঙ্কাই থাকে। মেয়েরা খোঁজখবর করে জানতে পারে, মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়েছে।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অচিন্ত্য চক্রবর্তী বলেন, “ক্লাবের মেয়েরাই আমায় প্রথম খবর দেয়। প্রথমে ছেলে বা মেয়ের বাড়ির কেউ-ই বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হয়নি। কার্যত ভয় দেখানোয় বিয়ে বন্ধে রাজি হয়। আমার মনে হয়েছে, ওই গ্রামে ‘কন্যাশ্রী’ নিয়ে আরও প্রচার করা দরকার। বিষয়টি প্রশাসনকেও জানিয়েছি।” তিনি জানান, এর আগে স্কুলের অন্য এক নাবালিকার বিয়েও বন্ধ করা হয়েছিল।

রানাঘাট ২ নম্বরের বিডিও কিশোর বিশ্বাস বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় মেয়েদের সচেতন করার কাজ চলছে। ওই গ্রামেও নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা সহ মেয়েদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করতে শিবিরের কথা ভাবা হচ্ছে।”

পঞ্চায়েত প্রধান জয়প্রকাশ লস্কর জানান, মেয়েটি নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে কিনা, তা খোঁজখবর নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘লেখাপড়া করার বিষয়ে সব রকমের সাহায্য করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Teenage Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE