Advertisement
E-Paper

চেনা বাইক দেখেই বোম এল বেরিয়ে

রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সে ভাবে বোম না ফাটলেও রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা বদলেছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত দূরে-কাছে চকলেট বোমের শব্দ পাওয়া গিয়েছে। তবে গত বারের চেয়ে হয়তো একটু কমই। 

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১৪
দেদার বিক্রি হচ্ছে শব্দবাজি। ফাইল চিত্র

দেদার বিক্রি হচ্ছে শব্দবাজি। ফাইল চিত্র

গাংনাপুরের বাজার। বেশ কয়েকটা বাজির দোকান বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। শুধু তিনটি দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যাদের বাজি তৈরি ও বিক্রির লাইসেন্স আছে।

কিন্তু তাতে কী? চাইলে কি এ ভাবে বাজি বিক্রি বন্ধ করা যায়? তা যে যায় না, সেটা ফের প্রমাণ হয়ে গিয়েছে কালীপুজোর আগের দিন থেকেই। বিশেষ করে শব্দবাজি।

নদিয়া জেলার অন্যতম বড় বাজির বাজার হল গাংনাপুর। সেখানে কয়েক বছর আগেও দেদার শব্দবাজি তৈরি হত। গত বছর বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ এবং তার পর প্রশাসনের কড়াকড়িতে সে সব এখন প্রায় বন্ধ। কিন্তু তা বলে একেবারেই বন্ধ? বাস্তব বলছে অন্য কথা। বন্ধ দোকানগুলির সামনে সকাল থেকেই চেয়ার পেতে বসে আছেন মালিকরা। ভাবখানা এমন যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেন না।

রবিবার এমনই একটি দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায় মোটরবাইক। বহু পরিচিত এক খরিদ্দার। নিচু গলায় কথা হয়। দোকানি চলে যান ভিতরে। কিছু ক্ষণ পরে ফিরেও আসেন। দ্রুত হাতবদল হয় প্যাকেট। মোটরবাইক চলে যায় রানাঘাটের দিকে। দোকানি আবার চেয়ারে গিয়ে বসেন সেই একই নির্বিকার ভঙ্গিতে।

এটা যে শুধু গাংনাপুরের ছবি, তা কিন্তু নয়। এমন চিত্র কমবেশি দেখা গিয়েছে প্রায় সর্বত্র। সেটা কৃষ্ণনগর হোক বা রানাঘাট, চাকদহ হোক বা নবদ্বীপ, বগুলা হোক বা করিমপুর। শব্দবাজি বিক্রি হয়েছে সর্বত্র। তবে তা অত্যন্ত গোপনে। চেনামুখ, বিশেষ করে প্রতি বছরের চেনা খরিদ্দার ছাড়া পাওয়া কোনও মতেই সম্ভব না। দোকানিরাও স্বীকার করছেন না যে তাঁর কাছে শব্দবাজি আছে।

দুপুরে কৃষ্ণনগরের সদর মোড় এলাকায় এক বাজির দোকানের সামনে দুই মোটরবাইক আরোহী গিয়ে দাঁড়াতেই দোকানি ঢুকে যান গলির ভিতরে। কোনও কথা বলতে হয় না কাউকেই। গলি থেকে বেরিয়ে আসে প্যাকেট, দ্রুত হাতবদল হয়। বেশির ভাগ দোকানেই সামনে আতসবাজির পসরা সাজানো— তুবড়ি, রংমশাল, হাওয়াই, চরকির মত নিরীহ সব বাজি। দেদার বিক্রি। তারই মঝ্যে কিছু দোকানে আড়ালে শব্দের কারবার।

পোস্ট অফিস মোড়ে তেমনই এক দোকানে বাজি কিনতে গিয়ে ফিসফিস করে শব্দবাজির কথাটা পেড়েছিলেন বছর উনিশের এক তরুণী। দোকানি সটান ‘না’ বলে দিলেন। পরে সেখান থেকেই চকলেট বোম কিনে নিয়ে যেতে দেখা যায় স্থানীয় এক যুবককে।

তবে এমন দোকানের সংখ্যা খুব বেশি নয়, এই যা বাঁচোয়া। বেশির ভাগ দোকানই পুলিশের ধড়পাকড়ের ভয়ে শব্দবাজি বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছেন। পাত্রবাজারের দীর্ঘদিনের বাজি বিক্রেতা গোপাল ঘোষ বলছেন, “পাগল নাকি? ক’টা টাকা আয় করতে গিয়ে জেল খাটতে রাজি নই!” সদর মোড়ের সেই বাজি বিক্রেতা আবার বলেন, “বছরে দুটো দিন তো বাজি বিক্রি হয়। দু’টাকা বেশি আয় করতে গেলে একটু ঝুঁকি তো নিতেই হবে।”

কালীপুজোর দিন বিশেষ করে কৃষ্ণনগরে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার ঠেকানোও ছিল পুরসভা-প্রশাসনের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ দিন অবশ্য বাজির দোকানগুলিতেও কাপড়ের ব্যাগ ও কাগজের ঠোঙাই শুধু ব্যবহার হতে দেখা গিয়েছে। ক্রেতাদেরও ক্যারিব্যাগের জন্য তেমন জোরাজুরি করতে দেখা যায়নি।

রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সে ভাবে বোম না ফাটলেও রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা বদলেছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত দূরে-কাছে চকলেট বোমের শব্দ পাওয়া গিয়েছে। তবে গত বারের চেয়ে হয়তো একটু কমই।

Fire Crackers Nadia Kalipuja 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy