Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পদ্মাপাড়ের আকাশে আশঙ্কার কালো মেঘ

বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশের রাজশাহির চারঘাট উপজেলা সদরের বালুঘাটের ঘটনার পর থেকে পদ্মার মরসুমি ছবিটা বিলকুল বদলে গিয়েছে। তেরো কাঠা চাষের জমি লিজ দিয়ে মিলেছিল ৪৫ হাজার টাকা।

প্রণবের কেনা জাল দেখাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী রেখা মণ্ডল। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

প্রণবের কেনা জাল দেখাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী রেখা মণ্ডল। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
 জলঙ্গি শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২৮
Share: Save:

পদ্মায় ইলিশ আছে। ধীবরদের জাল আছে। নৌকাও তৈরি। কিন্তু ভেসে পড়তেই ভয় পাচ্ছেন জলঙ্গি সীমান্তের মৎস্যজীবীরা।

বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশের রাজশাহির চারঘাট উপজেলা সদরের বালুঘাটের ঘটনার পর থেকে পদ্মার মরসুমি ছবিটা বিলকুল বদলে গিয়েছে। তেরো কাঠা চাষের জমি লিজ দিয়ে মিলেছিল ৪৫ হাজার টাকা। আর সেই টাকা দিয়েই জলঙ্গির শিরচরের ধীবর প্রণব মণ্ডল একটা জাল ও ডিঙি কিনেছিলেন। ভেবেছিলেন, ভরা মরসুমে পদ্মায় ইলিশ ধরেই ফিরিয়ে নেবেন জমি। তার পরেও হাতে কিছু টাকা থেকে যাবে।

কিন্তু সে সব কিছুই হল না। পদ্মায় মাছ ধরতে গিয়ে নিজেই ধরা পড়েছেন বিজিবি-র জালে। পরে বিজিবি তাঁকে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁকে ফেরাতে গিয়েই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন বিএসএফের এক জওয়ান।

প্রণব একা নন, জলঙ্গির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাসখানেক ধরেই ছিল সাজ সাজ রব। জাল বিক্রেতেরা পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন রাস্তার পাশে। ধীবরেরাও অপেক্ষায় ছিলেন ইলিশের। কেউ জমি লিজ দিয়ে, কেউ আবার মহাজনের ঘরে চড়া সুদে টাকা ধার করে কিনেছেন জাল, নৌকা। কারণ তাঁরা ভাল করেই জানতেন এই সময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের দল ডিম ছাড়তে ছুটে আসে পদ্মার মিঠা জলে।

সেই মতো সব প্রস্তুতি সাঙ্গ করে মৎস্যজীবীরাও নেমে পড়েছিলেন পদ্মায়। কারেন্ট জালে ইলিশও উঠছিল বেশ। কিন্তু গুলি-কাণ্ডের পরে পদ্মায় নামার সাহস দেখাচ্ছেন না ধীবরেরা।

বৃহস্পতিবার সকালে একের পর এক গুলির শব্দে কেঁপে উঠেছে পদ্মাপাড়। ভয়ে নদী থেকে পালিয়ে এসেছেন শতাধিক মৎস্যজীবী। তার পরে কেউ কেউ পদ্মার দিকে পা বাড়াতে চাইলেও পরিবারের সদস্যেরা ভয়ে তাঁদের যেতে দিচ্ছেন না।

মৎস্যজীবী পরিমল মণ্ডল বলছেন, ‘‘পেটের টান বড় টান। মাছ না ধরলে খাব কী? বিপদ জেনেও সকালে জাল নিয়ে বের হতেই ছেলেটা হাত চেপে ধরছে। এই অবস্থায় কী ভাবে যে সংসারটা চলবে বুঝতে পারছি না।’’

শিরচরের আর এক মৎস্যজীবী অনন্ত মণ্ডল বলছেন, ‘‘সেই বাপ-দাদার হাত ধরে পদ্মায় নামা। একটা সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠত জালে। কিন্তু পরে পদ্মা বড় কৃপণ হয়ে গেল। শুধু এই সময়েই কিছু ইলিশ মেলে।’’

দুয়ারে কালীপুজো। ইলিশের বাজার ধরে পুজোটা অন্য ভাবে কাটাতে চেয়েছিলেন ধীবরেরা। কিন্তু এখন হতাশা আর আতঙ্কের মেঘে ঢেকে গিয়েছে সীমান্তের আকাশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kakmari Firing BSF BGB
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE