ধৃতদের আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।—নিজস্ব চিত্র।
মুক্তিপণের টোপ দিয়ে সব্জি ব্যবসায়ী অপহরণের ঘটনায় দুই মহিলা-সহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাদের কলকাতার নিমতা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতেরা হল অরবিন্দ গুপ্ত, শুভাশিস পাইন ও তার স্ত্রী চৈতালী পাইন এবং কৌশিক হালদার ও তার স্ত্রী শিউলি হালদার। ধৃতেরা সকলেই কলকাতার শিয়ালদহ এলাকার বাসিন্দা। তাদের এ দিন কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হয়।
রাস্তার পাশে বসে সব্জি বিক্রির সময় অপহৃত হয়েছিলেন কালীগঞ্জের জুরানপুরের বাসিন্দা জগন্নাথ দাস। অপহরণের সময় অপহরণকারীরা নিজেদের পুলিশের লোক বলে পরিচয় দিয়েছিল। পরে কালীগঞ্জ থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় পুলিশ জগন্নাথবাবুকে ধরে নিয়ে যায়নি। সেই খবর জানাজানি হতেই ওই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। ঘটনার তিন দিন পরে গ্রামের এক ব্যক্তির মোবাইলে ফোন আসে। তখনই জানা যায় জগন্নাথবাবুকে অপহরণ করা হয়েছে। ফোনে অপহরণকারীরা জগন্নাথবাবুর স্ত্রীকে জানায় তাদের ঘরের নীচে একটি মূল্যবান চুম্বক বা ইরিডিয়াম পোঁতা আছে। সেটি তুলে তারা যেন দ্রুত তাদের হাতে তুলে দিয়ে জগন্নাথবাবুকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বছর সাতেক আগে কোনও ভাবে প্রচার হয়ে যায় জগন্নাথবাবু মাটি খুঁড়ে মূল্যবান ওই চুম্বক বা ইরিডিয়াম পেয়েছেন। তার পর থেকে ওই চুম্বকের লোভে অনেকে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। এই দলটাও ঘোরাঘুরি করছিল। তারা গ্রামেই এত যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেই যুবক দলটিকে বোঝায় জগন্নাথবাবুর কাছ থেকে চুম্বকটি উদ্ধার করে তাদের হাতে তুলে দেবে। সেই মতো সে সাড়ে তিন লক্ষ টাকাও হাতিয়ে নেয়। এর পরই তারা সেই যুবকের কথা মতো জগন্নাথবাবুকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। নিমতার একটি ভাড়া বাড়িতে তাঁকে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়।
তারা জগন্নাথবাবুর উপর অত্যাচার চালায়। কিন্তু তারপরেও কোনও আশার আলো দেখতে পেয়ে তারা গ্রামেই ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারই মাধ্যমে জগন্নাথবাবুর পরিবারকে ফোন করে চুম্বকের জন্য চাপ দিতে তাকে। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে এমন টানাপড়েন চলার পরে তখন তারা বুঝতে পারে যে সত্যিই জগন্নাথবাবুর কাছে এমন কোন চুম্বক নেই তখন তারা ৬ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চায়। এরই মধ্যে পুলিশ মোবাইল ফোনের সূ্ত্র ধরে জানতে পারে যে জগন্নাথবাবুকে নিমতা এলাকায় রাখা হয়েছে।
সেই মতো কালীগঞ্জ থানার পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে যায়। যোগাযোগ করা হয় নিমতা থানার সঙ্গেও। ইতিমধ্যে পুলিশের কথা মতো জগন্নাথবাবুর স্ত্রী ও তাঁর শালা মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করে নিমতায় যান। দূর থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ তাঁদের লক্ষ্য রাখছিল। অপহরণকারীদের কথা মতো নিমতার একটি গলির মুখে তাদের হাতে টাকা তুলে দিয়ে জগন্নাথবাবুকে উদ্ধার করেন। পুলিশ অপহরণকারীদের ধরে ফেলে। সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় বাকিদেরকেও।
পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা বলেন, ‘‘জগন্নাথবাবুকে দেখিয়ে এলাকারই এক ব্যক্তি অপহরণকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল। কিন্তু চুম্বক দিচ্ছিল না। তখনই চুম্বক আদায়ের জন্য ওই ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত জগন্নাথবাবুকে উদ্ধারের পাশাপাশি পাঁচজন অপহরণকারীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
মাস কয়েক আগেও একই ভাবে নাকাশিপাড়ার বিকেলে মুড়াগাছা এলাকার বাসিন্দা শঙ্কর দাস নামে এক রিকশা চালককে যুগপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর থেকে অপহরণ করে একদল দুষ্কৃতী। ওই ঘটনার পিছনেও ছিল সেই চুম্বক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy