Advertisement
০২ মে ২০২৪
বিপদ রুখতে জোর আত্মরক্ষার পাঠে

কিক-পাঞ্চে বুঁদ নাসরিন, অর্পিতা

জেসমিন আখতার যে দিন তার মাকে ক্যারাটের কথা বলেছিল, সে দিন তার মা মাইরুমা বিবি কান্নাকাটি শুরু করেছিলেন।

 হার না মানা পণ। ছবি: মফিদুল ইসলাম

হার না মানা পণ। ছবি: মফিদুল ইসলাম

মফিদুল ইসলাম
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০০
Share: Save:

পারুলা খাতুন এক দিন বাড়িতে এসে বলেছিল, ‘‘মা আমি ক্যারাটে শিখব।’’ মেয়ের কথায় চমকে উঠে মা রৌশনারা বিবি বলেছিলেন, ‘‘তোর চোদ্দো পুরুষের কেউ কোনও দিন মাঠে নেমে খেলা করেনি। আর তুই কিনা ক্যারাটে শিখবি! ও সব আমি বলতে পারব না। তোর আব্বা রাজি হবে না। ও সব ভুলে যা।’’ পারুলা কিন্তু মায়ের কথা শুনে হাল ছেড়ে দেয়নি। মাকে সে বলেছিল, ‘‘আজ যেটা তুমি নিষেধ করছ। সেটার জন্য এক দিন তুমি গর্ব করবে।’’

জেসমিন আখতার যে দিন তার মাকে ক্যারাটের কথা বলেছিল, সে দিন তার মা মাইরুমা বিবি কান্নাকাটি শুরু করেছিলেন। আজকে রৌশনারা, মাইরুমারা মেয়ের পিঠ চাপড়ে বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস, সে দিন তোরা আমার কথা অমান্য করেছিলি।’’

হায়দরাবাদের পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ, খুন ও পোড়ানোর ঘটনা সামনে আসতে রৌশনারা বিবি বলছেন, ‘‘চারপাশে যা চলছে তাতে আঁতকে উঠছি। কিন্তু আজ এই ভেবে অন্তত শান্তি পাচ্ছি আমার মেয়ে অন্তত মার খেয়ে বাড়ি ফিরবে না। পাল্টা মেরেও আসতে পারবে।’’

এক দিন যে রৌশনারা, মাইরুমারা মেয়েদের ক্যারাটে শিখতে নিষেধ করেছিলেন, আজ তাঁরাই প্রতিবেশীর মেয়েদের ক্যারাটে শিখতে উৎসাহ দিচ্ছেন। পারুলা খাতুন হরিহরপাড়ার মালোপাড়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। জেসমিন আখতার ওই স্কুলেই নবম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের মতো মালোপাড়া গ্রামের শতাধিক মেয়েকে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক সেখ ওয়াহেদুজ্জামান।

তিনি বলছেন, ‘‘মেয়েদের আত্মরক্ষার্থে ক্যারাটে শেখাটা খুব জরুরি। শুধু তাই নয় ক্যারাটে শিখলে শরীর ও মন দুই-ই ভাল থাকে। একাগ্রতা বাড়ে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, এক সময় বহু অভিভাবক ক্যারাটে শেখার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিলেন। এখন তাঁরাই উৎসাহ দিচ্ছেন। ছাত্রীদের ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দিতে পেরে খুশি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র বিশ্বাসও। তিনি বলছেন, ‘‘সবার আগে নিজেকে রক্ষা করা জরুরি। সেই পাঠ সব মেয়ের নেওয়া জরুরি।’’ হরিহরপাড়া ব্লকের কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে। বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে এবং তারা যাতে আত্মরক্ষা করতে পারে তার জন্য প্রতি শনিবার ব্লকের কন্যাশ্রী যোদ্ধা পার্কে ১৩২ জন যোদ্ধাকে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’’ ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী সামিমা মণ্ডল, দিলরুবা খাতুন, নাসরিন বানু, অর্পিতা মণ্ডলেরা। তাদের কথায়, ‘‘আকিরা সিনেমাটা দেখেছি। সেখানে দেখেছি, ঠিক মতো রুখে দাঁড়ালে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। সেটা শিখছি। কিক ও পাঞ্চে কী করে প্রতিপক্ষকে কাবু করা যায় তা স্যর আমাদের শিখিয়েছেন।’’

হরিহরপাড়ার এক অভিভাবক জালালউদ্দিন মণ্ডল বলছেন, ‘‘যা দিনকাল, তাতে মেয়েদের আত্মরক্ষায় ক্যারাটের বিকল্প নেই।’’ ভগবানগোলার বাসিন্দা দাউদ ইব্রাহিম বহরমপুর, লালগোলা ও ভগবানগোলায় তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণ দেন। বহু মহিলাও তাইকোন্ডোর প্রশিক্ষণ নিতে এগিয়ে আসছেন। দাউদ বলছেন, ‘‘তাইকোন্ডোর প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকলে সহজেই নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Rape Karate Self Protection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE